বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
ভূরাজনৈতিকভবে এক সময়ে আমাদের এই এই দেশটি ছিলো হিন্দু শাসিত অঞ্চল। বারশো সালের প্রথম দিকে এই ভারত বর্ষে মুসলমানদের আর্বিভাব ঘটে।
আর তখন থেকেই এ দেশে মুসলমাদের স্থায়ীভাবে গোড়াপত্তন শুরু হয়। পাক উপমহাদেশে সর্বপ্রথম যে দলটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে সেই দলটি হল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। যা ১৯৪১ সালে এর বেসিক কার্যক্রম শুরু করে এবং মূল কার্যক্রম শুরু করে ১৯৪৮ সালে। কিন্তু জামায়াত ইসলামী দল ছাড়াও পূর্বে কিছু,কিছু ছোট ইসলামী দল পাক উপমহাদেশে ছিল তথাপি তারা সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিল না।
তাদের মূল কার্যক্রম ছিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করা। যদিও এটি ইসলামী আন্দোলনের সাথে সামিল ছিল। তৎকালীন সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন জায়গায় খন্ড,খন্ড ভাবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। উক্ত আন্দোলনে সব সময় প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এদেশের আলেম সমাজ।
১৭৫৭ সালে ২৩ শে জুন যখন বাংলার আকাশে স্বাধীনতার সূর্য ডুবে যায় তার পর থেকে বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আজ অবধি পযর্ন্ত যতগুলো আন্দোলন হয়েছে প্রত্যেকটি জায়গায় আমরা আলেম সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখেছি। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তিতুমীর এর বাশের কেল্লা, শরীয়তপুরের হাজী শরীয়তুল্লাহ, ইসমাঈল হোসেন সিরাজি। কিন্তু দুংখের সাথে আমরা দেখতে পাই আমাদের দেশে কোন অনুষ্ঠানে বা কোন রাজনৈতিক মঞ্চে তাদের কোন নাম বা তাদের কোন আত্নত্যাগের কথা সচরাচর শুনতে পাই না।
আমরা দেখেছি পাকিস্তান আমলে যে অর্থনৈতিক শোষন ও রাজনৈতিক নিপীড়ন হয়েছে তার জন্য ও অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে এই আলেম সমাজ। তৎকালীন সময়ে সরকার বিরোধী যতগুলো আন্দোলন হয়েছে তার নেতৃত্বে আমরা দেখতে পেয়েছি মজলুম জননেতা জনাব হাফেজ হযরত মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের সৈরাচার বিরোধী আন্দোল, ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়ার শাসন আমলে একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন তথা আজ পযর্ন্ত যতগুলো আন্দোলন হয়েছে সব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ইসলামী আন্দোলন এর সমাজ কর্মীরা৷ কিন্তু শুরু থেকে আজ অবধি পযর্ন্ত তারা এর বিনিময়ে নির্যাতিত ও নিপিড়ন এর শিকার হয়ে আসছে।
এবার আসল কথায় আসা যাক। আমাদের বাংলাদেশ রাজনৈতিক দলের সংখ্যা আছে ১১০ টি, যার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪২ টি, এবং ইসলামি দলের সংখ্যা ১৮ টি। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে যদিও একটি মাত্র ইসলামি দল থাকার কথা তথাপি আমাদের দেশে রয়েছে অনেক গুলো। এর ফলে এখন অনেকটা সাধারণ মানুষ গুলো দিশেহারা। সাধারণ মানুুষের মধ্যে ইসলামি জ্ঞান অনেক কম। যার ফলে তাদের মাঝে আশংকা বিরাজ করে৷ কোন দল আছে প্রকৃতপক্ষে ইসলামি আন্দোলন এর সাথে।
আমাদের দেশে সাধারনত যে মুসলমান বাস করে তারা বাস্তব থেকে আবেগ প্রবন বেশি। তাই আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে বিশ্বাস করি এই মূহুর্তে প্রত্যেকটি ইসলামি সংগঠনের উচিত সকল ভেদাভেদ ভুলে একটি জায়গায় এসে কাজ করা। এবং এ কাজটি হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, ইসলামের জন্য, দেশের জন্য নিজেদের সার্থে জলার্জলি দিয়ে হলেও এক জায়গায় আসা উচিত।
এটা শুধু আমার চাওয়া না এদেশের প্রত্যেকটি মানুষের চাওয়া। তারা অন্য কোন দলের বা মতের হলেও তারা চাই তাদের সনর্থন দিতে ইসলামের পক্ষে। আর এজন্য এখনও এদেশের প্রত্যেকটি মানুষ সে অপেক্ষায় আছে। আপনারা দেখে থাকবেন এখন যে শীত মৌসুমে ইসলামি যে তাফসির মাহফিল বা ওয়াজ মাহফিল হয়ে থাকে এখানে প্রাইয় দেখা যায় একজন আর একজনের বিপক্ষে কথা বলছে। কোন ভুল কথার প্রতিবাদ করা যাবে না এমন নয় তবে না বলাই বেশি ভালো বলে মনে হয়।
সে যদি সঠিক কথা বলে তাহলে সে তার মতো করে কথা বলে যাক। এ বিষয়েে প্রত্যয়েকটি বক্তার সতর্ক হওয়া উচিত। এ রকম হলে বা হতে থাকলে মনে হয় তৃতীয় পক্ষ সুবিধায় থাকবে, বা তাদের সুবিধা হয় বলে মনে হয়। বা তারা এটা মনে প্রানে চাই এরকম টা হোক। আর আমারা সেটাই প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি। যেমনটা হচ্ছে ইসলামি আন্দোলন এ। প্রত্যেকটি দল আলাদা ভাবে তাদের তাদের কার্যক্রম করে যাচ্ছে। যার ফলে শক্তি হ্রাস পাচ্ছে, এবং এর ভালো কোন ফলাফল আসছে না। যেমনটা আপনারা দেখে থাকবেন বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন সিটি কর্পোরেশন যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সকল জায়গায় প্রার্থী দিয়েছে।
এবং তার ফলাফল ভালো কিছু হয়েছে। এবং সব জায়গায় তারা তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। এরকম যদি হতো জাতীয় নির্বাচন বা স্থানীয় নির্বাচন সকল জায়গায় ইসলামি দলগুলো একত্রে প্রার্থী দিয়েছে তাহলে মনে হয় এদেশের শান্তি প্রিয় জনগন নির্বিচারে তাদের সমথর্ন দিতো। আর এটাই এখন এদেশের মুসলমানদের এখন একমাত্র চাওয়া ও পাওয়া। এর জন্য অবশ্য ইসলামি দলগুলো একত্রে আসতে একটি তত্ব অবলম্বন করতে পারে। পাঠক আপনারা দেখে থাকবেন সকল ইসলামি দল গুলোর মধ্যে মৌলিক কোন বিষয় নিয়ে কোন মতপার্থক্য নেই।
আছে শুধু আকিদার কিছু পার্থক্য। আমার মনে হয় এগুলো এক জায়গায় বসে আলোচনা করে মিটিয়ে ফেলা উচিত ইসলাম এবং এ দেশের জনগনের স্বার্থে। তার জন্য যত সময় নেওয়া যায় বা উচিত তা নিতে পারে। এবং এর মধ্যে দিয়ে তারা বৃহৎ পাচটি দল একটি আলোচনা করে ছোট দলগুলোকে বিলুপ্ত ঘোষণা কারার জন্য বলতে পারে, এবং বলতে পারে তাদের সাথে শামিল হতে। এবং তারা একটি মৌলিক চুক্তি করতে পারে যতদিন না তারা এক সাথে আবদ্ধ হতে পারছে।
কার কোথায় কতটুকু জনপ্রিয়তা প্রার্থী অনুযায়ী তাকে সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সকল ইসলামি আন্দোলন তার পক্ষে একযোগে কাজ করবে। আবার এমন ও হতে পারে পাচটি দলের মধ্যে একটি চুক্তি থাকবে জাতীয় নির্বাচন বা স্থানীয় নির্বাচনে কে কাকে, কতটুকু ছাড় দিবে। বাংলাদেশ তিনশো আসনে কার কতটি আসন থাকবে। ওই রকম স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও।
আমার মনে হয় এরকম একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এদেশের মুসলমানদের সমাজ নতুন করে আশার আলো বুকে বাধতে পারে। এবং এটা খুব দ্রুত করা উচিত বলে মনে হয়। আর এর জন্য কোন এক মহানুভব ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে। যার থাকবে ক্লিন ইমেজ। যাকে সবাই প্রতিনিধিত্ব হিসাবে মানবে। আর তা যদি না হয় তাহলে বর্তমান যে অবস্থার উপর দিয়ে দেশ চলছে এবং যা ঘটছে এটা যদি প্রতিনিয়ত চলতে থাকে তাহলে এদেশে মুসলমানদের ভাগ্যের চাকা ভবিষ্যতে কবে ঘুরবে সেটা নিয়ে সংসয় থেকে যাবে। তবে আমরা আশা করবো অদূর ভবিষ্যতে ভালো কিছু একটা যেন হয় এবং এদেশের মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পায়।
মো: শিপন মিয়া
নতুন ক্ষুদে লেখক