সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

বয়স্ক কাস্টমারদের কথা ভাবছি তো?

ক্রেতাকে কিভাবে ভাল মানের অভিজ্ঞতা দেয়া যায় তা নিয়ে কাজ চলছে প্রতিনিয়ত। সার্ভিস থেকে রিটেলিং সবখানেই ক্রেতার অভিজ্ঞতা থাকে অগ্রাধিকারে। দেশি বিদেশি সব ব্র্যান্ডই এই একটি বিষয়ে নিজেদের সর্বোচ্চ দেয়ার প্রত্যয়ে থাকে। করোনাভাইরাস মহামারির পর ক্রেতার অভিজ্ঞতার সাথে সেফটি বিষয়টি গুরুত্ব পায় আরও বেশি।

মহামারির এই সময়ে অনলাইনে কেনাকাটার ধুম পড়ে গেলেও, দোকানে গিয়ে কেনা পছন্দ করেন এমন ক্রেতার সংখ্যাও কমেনি। অনলাইন না অফলাইন সেটা যদিও অনেকটা নির্ভর করে পণ্যের দাম, পণ্যের ধরন আর ক্রেতার নিজস্ব ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর, তবে অনলাইনে কেনাকাটা তরুণ ক্রেতাদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও বয়স্ক ক্রেতারা এখনো অফলাইন বা দোকানে গিয়ে কেনাকাটা পছন্দ করেন। তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধও করেন। তবে দেশের রিটেলশপ গুলো বয়স্ক ক্রেতাদের কথা ভাবছে কিনা কিংবা তাদের এই সাচ্ছন্দ্য দিতে প্রস্তুত আছে কিনা তা কিন্তু ভেবে দেখার বিষয়।

 বয়স্ক ক্রেতারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে শপিং করতে পারেন সেজন্য ‘স্পেশাল শপিং এসিস্ট্যান্স’ এর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যাতে দোকানে ঢুকেই তারা জানেন কোথা থেকে এই সহযোগিতা নেয়া যায়। এই এসিস্ট্যান্সের বা ‘সহযোগিতার’ আওতায় থাকতে পারে শপিং আইল থেকে পণ্য নামানো, পণ্য বাছাইয়ে সাহায্য, চেকআউট এবং গাড়িতে পণ্য তুলে দিয়ে আসা পর্যন্ত পূর্ণ সহযোগিতা।

রিস্পন্সিবেল ব্র্যান্ড তারাই যারা মুনাফা অর্জনের বাইরেও ব্র্যান্ডের সব ধরনের ক্রেতার কথা মাথায় রেখে পণ্যের ডিজাইন থেকে শুরু করে পণ্যের বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। ব্র্যান্ড হয়ে গেলেই কাজ থেমে যায় না, বরং ব্র্যান্ড হওয়ার পরই আসল কার্যক্রম শুরু হয়। ঠিক যেন ‘স্বাধীনতা অর্জনের যেয়ে যেমন স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন’ এর মত। একটি ব্র্যান্ড তার সকল ক্রেতার কথা মাথায় রেখে যখন কাজ করে সেই ব্র্যান্ডের ‘সাস্টেনেবল ব্র্যান্ড’ হয়ে ওঠা হয় সহজ।

সব ধরনের ক্রেতার কথা মাথায় থাকা উচিত হলেও বাংলাদেশের ঠিক কতটি ব্র্যান্ড ‘বয়স্ক ক্রেতাদের’ কথা চিন্তা করে তাদের রিটেল স্টোর সাজিয়েছেন? কী ধরনের অভিজ্ঞতা তারা দিচ্ছেন বিশেষ এই কাস্টমার গ্রুপকে? ব্র্যান্ড হয়ে গেলেই তো দায়িত্ব শেষ নয় বরং শুরু, আর তাই দায়িত্ববান একটি ব্র্যান্ডের দরকার এই সব বিষয়গুলো মাথায় রেখে ‘কাস্টমার অভিজ্ঞতা’ বা “Customer Experience (CX)” ডিজাইন করা।

সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা যায়, (www.emerald.com) একজন কাস্টমার কেনার তিনটি ধাপে (কেনার আগে, কেনার সময়ে আর কেনার পর) সেইফটি আর সিকিউরিটি বিষয়টি বিশেষভাবে বিচার করেন, এবং কোভিড পরবর্তী সময়ে ক্রেতারা এখন দোকানের সেইফটি ফিচারস দেখে সেই দোকানের ওপর তাদের পারসেপশন (ইমেজ) নিয়ে থাকেন। বড় ব্র্যান্ড হোক কিংবা উঠতি ব্র্যান্ড, এই ফিচার এখন বর্তমান থাকা লাগবেই। সোজা কথায়, দোকানে এই সব সেফটি এলিমেন্টস রাখবেন তো ঐ ব্র্যান্ড সম্পর্কে কাস্টমার ভালো ধারণা পোষণ করবেন।

এই গবেষণায় আরো দেখা যায়, যে কোন বয়সের ক্রেতারা এটা নিয়েও চিন্তিত যে তাদের বাবা-মা কিংবা পরিবারের বয়স্ক সদস্য কি নিরাপদে দোকানে শপিং করতে পারছেন কিনা? বা সেই দোকানে নিরাপত্তার বিষয়গুলো বয়স্ক ক্রেতাদের কথা ভেবে ডিজাইন করা হয়েছে কিনা। ভুলে গেলে চলবে না আজকের তরুণ ক্রেতাই কিন্তু আগামির বয়স্ক ক্রেতা। আর ব্র্যান্ড কিন্তু একদিনের জন্য নয়। টাইমলেস ব্র্যান্ডের জন্য চাই টাইমলেস উদ্যোগ।

আমরা জানি কোভিডের কারণে বয়স্ক ক্রেতারা আছেন সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আবার কেনাকাটার ক্ষেত্রেও তারা অফলাইন বা দোকানে গিয়ে কেনাকাটা পছন্দ করেন, তাহলে তাদের সেইফটির বিষয়টি দেখাটাও ব্র্যান্ডগুলোর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

জেনে নেই সেই গবেষণায় তারা কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে বলেছেন আর তা কিভাবে অর্জন করা সম্ভব।

১. বয়স্ক আর ভালনারেবল ক্রেতাদের জন্য ‘স্পেশাল শপিং টাইম’ নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে। যেটা হতে পারে খুব সকালে কিংবা দুপুরে। নির্ধারিত এই সময়ে বয়স্ক ক্রেতার বাইরে বাকি ক্রেতারা আসলেও অগ্রাধিকার পাবেন বয়স্ক ক্রেতারা। মিডিয়া কমিউনিকেশনের মাধ্যমে বয়স্ক ক্রেতাদের সেই নির্ধারিত সময় জানিয়ে দেওয়া যেতে পারে আগেই। এতে কমবে স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং বাড়বে দায়িত্ববোধ।

২. অনেক বয়স্ক ক্রেতা আছেন যারা পড়তে পারেন না, সেটা হোক তাদের চোখের সমস্যা কারণে কিংবা পড়তে না জানার কারণে। কিন্তু তাই বলে তাদেরকে উপেক্ষা করা যাবে না মোটেই। এই ক্ষেত্রে দোকানের ব্যবহার করা সেইফটি নির্দেশনাগুলো বাংলায় লেখা যেতে পারে, এর পাশাপাশি শুধু লেখায় না লিখে ‘প্রতীক’ ব্যবহার করা যেতে পারে। পাশাপাশি লেখার ফন্টগুলোও বড় করে লেখা যেতে পারে তাদের পড়ার সুবিধার্থে।

৩. নির্ধারিত সময়ের বাইরেও বয়স্ক ক্রেতারা দোকানে আসতে পারেন, সেক্ষেত্রে ‘প্রায়োরিটি চেকআউট’ বা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের আগে চেকআউটের সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে। আশা করা যায় অন্যান্য বয়সের ক্রেতারা বিষয়টি সম্মানের দৃষ্টিতেই দেখবেন।

৪. বয়স্ক ক্রেতারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে শপিং করতে পারেন সেজন্য ‘স্পেশাল শপিং এসিস্ট্যান্স’ এর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যাতে দোকানে ঢুকেই তারা জানেন কোথা থেকে এই সহযোগিতা নেয়া যায়। এই এসিস্ট্যান্সের বা ‘সহযোগিতার’ আওতায় থাকতে পারে শপিং আইল থেকে পণ্য নামানো, পণ্য বাছাইয়ে সাহায্য, চেকআউট এবং গাড়িতে পণ্য তুলে দিয়ে আসা পর্যন্ত পূর্ণ সহযোগিতা।

এছাড়াও প্রবেশদ্বারে হুইল চেয়ার নিয়ে ঢোকার ব্যবস্থা এবং টয়লেটের সুব্যবস্থা থাকাটাও বেশ জরুরি। সর্বোপরি বয়স্ক ক্রেতাদের প্রতি থাকতে হবে সম্মান আর ভালোবাসা। সময়ের সাথে আমরাও একদিন এই কাতারে পড়বো। সকল ক্রেতাদের সম্মানের সাথেই গড়ে উঠবে একটি ভালো আর দায়িত্ববান ব্র্যান্ড। ভুলে গেলে চলবে না বয়স্ক ক্রেতারা সংখ্যায় নেহায়েত কম নয় আর তাদের উপেক্ষা করে ব্র্যান্ডের সাস্টেনাবিলিটর কথা ভাবা হবে বোকামি।

লেখক : পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়া।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০