‘হিমোফিলিয়া বা রক্তক্ষরণজনিত রোগ। এটি একটি অনিরাময়যোগ্য রোগ। এই রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগী ঢাকার বাহিরে জেলা শহরে হলেও নেই স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসা সুবিধা। শুধু ঢাকায় চিকিৎসা কেন্দ্র ও অতিরিক্ত খরচের কারণে চিকিৎসার বাইরে রয়েছ বেশিরভাগ রোগী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এতে চরম বিপাকে পড়তে হয় রোগীদের।’
রোববার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস উপলক্ষে হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন চিকিৎসকরা। এসময় স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
চিকিৎসকরা বলছেন, বিশ্বে প্রতি দশ হাজার জনে একজন হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে সেই সংখ্যা ১৪ হাজারে বেশি বলে ধারণা করা হয়। আর বাংলাদেশ হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আড়াই হাজার রোগীকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে পেরেছে।
চিকিৎসা ব্যবস্থার ঘাটতি থাকার কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, এ রোগের চিকিৎসায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, হিমোফিলিয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা জানি। এ রোগের রোগীদের অনেক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। এ জন্য সরকার আটটি বিভাগে হতে যাওয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হিমোফিলিয়ার রোগীদের জন্য দেড়শ শয্যা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি অনেক পুরোনো হলেও এতদিন অবহেলায় ছিল। করোনার আগে কিছুটা কাজ হলেও এরপর থেকে কমেছে। এখন আবারও পদক্ষেপ বাড়বে। রক্ত সম্পর্কিত রোগগুলো নিয়ে যে সহযোগিতা দরকার সরকার তা করবে।
অনুষ্ঠানে ঢামেকের হেমোটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অখিল রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, দেশে কি পরিমাণ রক্তরোগের রোগী আছে, সেটি আমরা এখনো চিহ্নিত করতে পারিনি। আবার যতটুকু পারছি, তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারছি না। ফলে তাদের ডিজ্যাবিলিটি (পঙ্গুত্ব) কমানো যাচ্ছে না। চিকিৎসা খরচ বেশি হওয়ায় এ সমস্যা। সরকারিভাবে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে ৯০ ভাগ ডিজ্যাবিলিটি কমানো সম্ভব। কিন্তু ফ্যাক্টরের যথেষ্ট সংকটের কারণে আমরা চিকিৎসা দিতে পারছি না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতে রোগী সহজে শনাক্ত ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাড়িতে নিজেরাই চিকিৎসা নিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, অসংক্রামক রোগের যে কটি দিক রয়েছে হিমোফিলিয়া তার অন্যতম। আমাদের দেশে ১৪ হাজার রোগী আছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু স স্ক্রিনিং ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। এটির উন্নতি করতে হবে। শুধু ডায়াগনসিস করলেই হবে না, শনাক্তদের চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। সরকার সে উদ্যোগ নিয়েছে। ৮টি বিভাগে হতে যাওয়া নতুন মেডিকেল কলেজগুলোতে আলাদা বিভাগ থাকছে। সবচেয়ে দরকার একটি হিমোফিলিয়া কেয়ার সেন্টার। একই সঙ্গে নীতিমালা থাকা খুবই দরকার।
আগামী বছরের মধ্যে জাতীয় নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত হবে আশা করে তিনি বলেন, একই সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। সোসাইটি ও সরকারের সমন্বিত উদ্যোগে হিমোফিলিয়ায় বাংলাদেশ এক সময় ভাল করবে বলে প্রত্যাশা রাখেন রোবেদ আমিন।
হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, রক্তরোগকে কীভাবে নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য৷ এ রোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও তারা সেই ধরনের সেবা পাচ্ছেনা। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে গ্রামের মানুষদের অসহনীয় যন্ত্রণার মধ্যে থাকতে হয়। স্থানীয় পর্যায়ে শুধু ব্লাড ট্রান্সফার পরিস্থিতি সামালের চেষ্টা করা হলেও ডায়াগনোসিস, শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই।