বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
শরীরের সবচেয়ে রহস্যময় যন্ত্র মনে হয় হার্ট। এতদিন আমরা জানতাম হার্ট মস্তিষ্ক থেকে পাওয়া নির্দেশ অনুসারে কাজ করে। কিন্তু আপনি কি জানেন হার্টেও বসানো আছে ক্ষুদে ব্রেইন। শুনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন?
এতদিন ধারণা করা হতো, মস্তিষ্কের সংকেত অনুসারে হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বজায় থাকে। তবে, নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত এক গবেষণা এ ধারণা পাল্টে দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, হৃদযন্ত্রের নিউরন নেটওয়ার্ক বা স্নায়ুতন্ত্রের বিস্তারিত জাল দিয়েই শরীরে জটিল ভূমিকা রেখে চলেছে এ প্রত্যঙ্গ।
হার্টের নিউরন সিসটেম
সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবং নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা হার্টের নার্ভাস সিসটেমের নাম দিয়েছেন ইনট্রাকার্ডিয়াক নার্ভাস সিসটেম।
হৃদস্পন্দনের ছন্দ ধরে রাখা ছাড়াও এ ইন্ট্রাকার্ডিয়াক নার্ভাস সিসটেমের বহু সক্রিয় ভূমিকা খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। আর এটিই মস্তিষ্ক থেকে আসা সংকেতে হৃদস্পন্দন চালিত হওয়ার সেই পুরোনো ধারণাকে বদলে দিয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, হার্টের নার্ভাস সিসটেম সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। যে কারণে মস্তিষ্কের নির্দেশনা ছাড়াও হার্ট চলতে পারে।
আর এ কারণেই গবেষকরা বলছেন, মূলত হার্টের নিজেরই রয়েছে একটি ছোটখাটো মস্তিষ্ক। এদিকে মজার তথ্য হলো মূল মস্তিষ্ক শরীরের সব প্রতঙ্গের যাবতীয় কাজে সরাসরি ভূমিকা রাখে না।
নিউরন না কি পেসমেকার
এ তথ্য প্রমাণে, গবেষকরা জেব্রাফিশ নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন। এই মাছ এবং মানুষের হৃদযন্ত্রের গঠন এবং কাজের প্রক্রিয়া খুব অদ্ভুত একই রকম। হৃদযন্ত্রের মূল হলো সাইনোট্রিয়াল প্লেক্সাস (এসএপি)। এই অংশ হৃদযন্ত্রে বসানো পেসমেকারের মতো কাজ করে। এখানেই চোখ রেখে হৃদযন্ত্রে বহু নিউরনের খোঁজ মিলেছে গবেষণায়।
অ্যাসিটাইলকোলিন, গ্লুটামেট এবং সেরোটোনিন এমন অনেক নিউরোট্রান্সমিটার দিয়ে একটি নিউরন আরেকটির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। যে কারণে মস্তিষ্কের বদলে হৃদযন্ত্র নিজেই হৃদস্পন্দন সচল রাখতে পারে।
এই নিউরনে ছন্দময় তড়িৎ তরঙ্গ চলাচল করে। মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ড যেভাবে হাঁটাচলা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ করে, নিউরনের কিছুটা একই ছন্দে কাজ করে।
গবেষণায় উঠে আসা এ তথ্য চিকিৎসা ক্ষেত্রের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে অ্যারিথমিয়া বা হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত ছন্দ এবং যে কোনো কার্ডিয়াক জটিলতায়।