শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

বাবাকে নিয়ে আইরিনার অনিশ্চিত যাত্রা

করোনায় আক্রান্ত বাবাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২১ জুন চিকিৎসার জন্য এনেছিলেন আইরিনা (১৯)। পরের দিনই তাঁর মায়ের করোনা পজিটিভ হয়। এরপর হাসপাতালের চিকিৎসায় মা সুস্থ হলেও বাবা সুস্থ হননি। এরই মধ্যে তাঁর বাবাকে করোনা ওয়ার্ড থেকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পাঠানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানিয়ে দেন, তাঁর বাবা করোনা নেগেটিভ হয়েছেন। কিন্তু করোনা তাঁর বড় ক্ষতি করে গেছে। করোনার কারণে তাঁর বাবার ব্রেন স্ট্রোক করেছেন। এ কথা শুনেই কাঁদতে শুরু করেন আইরিনা।

চিকিৎসক বলেন, এখন হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাও যা, বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোও তা। বরং হাসপাতালে করোনা রোগীর পাশে থাকলে আবার করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।

আইরিনা খাতুন দুর্গাপুর উপজেলার দাওকান্দি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁরা দুই ভাই-বোন। ছোট ভাই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। সেও তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছে। এই কয়টা দিন চিকিৎসা, সংসার—সবটাই আইরিনাকে একা সামলাতে হয়েছে। এ সময়ে সবকিছুর খরচ জোগাড় করতেই তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে দুর্বিষহ এক যাত্রাপথ। তাঁর বাবা ছোট্ট একটা মুদিদোকান চালাতেন। সেটিই তাঁদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে দোকানটি বন্ধ রয়েছে।

বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে না পেরে আইরিনা রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়েছিলেন। গত ২৯ জুন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল তাঁকে ৬৫ হাজার টাকা দেন। সে সব টাকা করোনা চিকিৎসার দামি ওষুধ আর আইসিইউর পেছনে খরচ হয়ে গেছে। এখন বাড়িতে একটা তরকারি পর্যন্ত নেই। কী দিয়ে চিকিৎসা করাবেন আর কী খাবেন। আজ দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর সামনে ছলছল চোখের আইরিনাকে দেখে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে না পেরে আইরিনা রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়েছিলেন। গত ২৯ জুন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল তাঁকে ৬৫ হাজার টাকা দেন। সে সব টাকা করোনা চিকিৎসার দামি ওষুধ আর আইসিইউর পেছনে খরচ হয়ে গেছে।

আইরিনাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কিশোরপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম বাবা আবদুল মালেক (৬০)। মায়ের নাম মহসিনা বেগম (৪৫)। চিকিৎসকের কথা শোনার পর আইরিনা বাবাকে নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বেলা আড়াইটার দিকে তিনি বাবাকে ট্রলিতে নিয়ে আইসিইউ থেকে নেমে আসছিলেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক টাকা না দিলে গত ২৯ জুনই বাবার চিকিৎসা বন্ধ করে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যেতে হতো। গতকাল বুধবার পর্যন্ত সেই টাকা চিকিৎসা করাতে শেষ হয়ে গেছে। এখন বাবা অচল হয়ে পড়ে থাকবেন। সময়-সময় তাঁর অক্সিজেন লাগছে। এখন ওষুধ-অক্সিজেন কীভাবে জোগাড় করবেন, খাবারই–বা কোথায় পাবেন। সেই চিন্তায় পড়েছেন।

আইরিনা বলেন, চিকিৎসক বলেছেন, দেড় মাস বাসায় রেখে দেখতে হবে। সুস্থ হলে দেড় মাসের মধ্যেই হবেন। আর না হলে তাঁদের কিছু করার থাকবে না। এখন তাঁকে নাকে নল পরিয়ে কৃত্রিম খাবার দিতে হবে। আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল নল ও কৃত্রিম খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তবে পরের দিনগুলোর কথা ভেবেই তিনি কাঁদছেন।

বিষয়টি বিকেলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলকে জানালে তিনি মেয়েটির পরিবারের খাবারের জন্য আরও পাঁচ হাজার টাকা দেন। তিনি বলেন, সরকারের একার পক্ষ থেকে সব রোগীকে টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিবেশীদের মেয়েটির পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০