বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
কয়েক সপ্তাহজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ডিম। এবার ডিমের দাম কমলেও নতুন করে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ভোজ্যতেল, চিনি ও পেঁয়াজের। পণ্যগুলোর দাম কমাতে সরকার শুল্ক ছাড় দিলেও এর প্রভাব পড়েনি পাইকারি বাজারে। অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সরবরাহ সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন। সম্প্রতি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে প্রতি কেজিতে অন্তত ১০ থেকে ১১ টাকা কমার কথা। কিন্তু বাজারে দেখা যায় উল্টো চিত্র।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, আজিমপুর ছাপরা মসজিদ বাজার, লালবাগ বউবাজার ও মোহাম্মদপুর ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় ৩ থেকে ৪ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি চিনি। দোকানভেদে এক কেজি খোলা ও প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।
প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। গত সপ্তাহে এক কেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হলেও চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে এই পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। কোনো কোনো ব্যবসায়ীকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার শুল্ক ছাড় দিলেও সেভাবে পণ্যের সরবরাহ বাড়েনি। ফলে প্রভাব পড়ছে পাইকারি বাজারে। বেশি দামে কিনলে বেশিতেই বিক্রি করেন তারা।
কারওয়ান বাজারের ক্ষুদ্র কাঁচামাল ব্যবসায়ী বলেন, পেঁয়াজের আমদানি কম হওয়ায় গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়েছে। আগে যেখানে ১০ হাজার মণ পেঁয়াজ বাজারে আসত, এখন এর অর্ধেকও আসে না।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম প্রতি লিটারে ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছে এক সপ্তাহে। এ অনুযায়ী বাজারে খোলা সয়াবিন বিক্রি হওয়ার কথা ১৫৬ থেকে ১৬০ টাকা। কিন্তু বাজারে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৭০-১৭২ টাকা ও পাম অয়েল ১৬৫-১৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত তেল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটারের সয়াবিন ৮০০ থেকে ৮১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, কয়েকদিন আগে প্রতি ডজন ডিম ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমান বাজারে সরকার নজরদারি দেওয়ায় দাম ১৫০ টাকায় নেমে এসেছে। তবে ডজনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েছে হাঁসের ডিমের দাম। গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ২২০ থেকে ২২৫ টাকা করে হাঁসের ডিম বিক্রি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া বেশিরভাগ শাকসবজি ১০০ টাকার ওপরে থাকলেও চলতি সপ্তাহে কমেছে দাম। কয়েকটি সবজি বাদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ধুন্দলের কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০, টমেটো ১৬০, গাজর ১৬০, শিম ১২০ থেকে ১৪০, ঢ্যাঁড়শ ৬০, বরবটি ৮০, পটোল ৬০, লেবুর হালি ৩০, ছোট করলা ৮০, বড় করলা ১২০, কচুরমুখী ৬০, কলার হালি ৪০, মুলা ৬০, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি পেঁপের দাম ৩০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০, লাল বেগুন ১৪০, ঝিঙা ৮০, শসা ৬০, ফুলকপি বড় ৭০, ছোট ৫০, লালশাক ২৫, পুঁইশাক ৪০, পালংশাকের আঁটি ৩০, রসুন ২২০, আদা মানভেদে ২০০ থেকে ৩০০ ও আলু ৬০ টাকা প্রতি কেজি। এদিকে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। আর সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, কার্প জাতীয় মাছ প্রতি কেজি ২০ টাকা করে ওঠানামা করছে। রুই ২৪০ থেকে ২৬০, পাবদা ৪০০, টেংরা ৮০০, কৈ ২২০, সিলভার ২২০, পাঙাশ ২০০, তেলাপিয়া ২২০, শিং ৮০০, বোয়াল প্রতি কেজি ৫০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা তরিকুল বলেন, গত সপ্তাহে ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি ছিল না। চলতি সপ্তাহে সেই সবজির বেশিরভাগ ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দাম আরও কমত, কিন্তু বড় ব্যবসায়ীদের কারণে বাড়ছে। তারা রাতে ট্রাক থেকে মাল নামানোর সময় কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে দেয়।
নিউমার্কেটের মুদি ব্যবসায়ী আলী আজগর বলেন, চিনি প্রতি কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। আর তেল ৫ লিটার যেটা ৭৯০ টাকা ছিল, সেটা ৮০০ টাকা এবং ৮০০ টাকার তেল ১০ টাকা বেশি বিক্রি করছি। এসব পণ্যে সরকার হালকা-পাতলা শুল্ক কমিয়েছে।
রাজধানীর ডেমরায় বসবাস করেন সুলতান মাহমুদ, পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক। পরিবারে চার সদস্যের জন্য বাজার করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। সুলতান মাহমুদ বলেন, আমার মাসিক আয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। বর্তমান আয় দিয়ে কোনো রকম তরকারি কেনা হয়। আর মাছ-মাংসের যে দাম, ঈদ না এলে মাংস খাওয়া জোটে না।