মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

১১ সন্তানের বাবা ভাত না পেয়ে আদালতে মামলা…….

১১ সন্তানের বাবা ভাত না পেয়ে আদালতে মামলা

প্রথম স্ত্রীর ঘরে চার সন্তান এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে সাত সন্তানের বাবা শতবর্ষী তফের আলী। মাথা গোঁজার নিরাপদ আশ্রয়স্থল নেই তার। যৌবনে যিনি সন্তানদের চাহিদা পূরণ করেছেন, করেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের ব‍্যবস্থা। তারাও আজ তার পাশে নেই। নেই খাবারের কিংবা অসুখের চিকিৎসার নিশ্চয়তা। বর্তমানে ছোট ছেলে আইনাল হোসেনের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করলেও পরিবারের কেউই খবর রাখেন না শতবর্ষী এই বাবার।

নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভালাইন ইউনিয়নের লক্ষ্মীরামপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা তফের আলী। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ৯৫ বছর। কিন্তু তিনি দাবি করেন তার বয়স ১০৮ থেকে ১১০ বছরের মধ্যে হবে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ আগস্ট সন্তানের কাছে ভরণপোষণ চাইলে তাকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার ও মারধর এবং হত্যার চেষ্টা করে। এছাড়াও বাবার সম্পত্তি ভোগ দখল ও ঘর থেকে টাকা চুরি করে। পরে ভুক্তভোগী বাবা এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আদালতের দ্বারস্ত হয়। এরপর আদালত তফের আলীর কষ্টের কথা শুনে ছেলে আইনালের বিরুদ্ধে গত ২০ আগস্ট আদলতে মামলা হয় এবং একই তারিখে সমন জারি করে গত ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রোগ শোকে কাতর ৯৫ বছরের মো. তফের আলী। বর্তমানে জরাজীর্ন একা ভাঙ্গা বাড়িতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। বলতে গেলে অনেকটায় তফের আলী মানবেতের জীবন যাপন করছেন। বসত ঘরের বর্তমান অবস্থা দেখে এটিকে ঘর না বলে বলা চলে মৃত্যু ফাঁদ। মরিচা ধরে ঝরঝরে হয়ে গেছে গোটা ঘরের চালের টিন। তৈরি হয়েছে হাজারো ফুটো। আর তাতেই সামান্য বৃষ্টিতে ভিজে যায় ঘরের বিছানাপত্রসহ সবকিছু। দীর্ঘদিন মেরামতের অভাবে ঘরের কাঠামোর অবস্থা এতটাই জরাজীর্ণ যে যেকোনো সময় ঘরটি ভেঙ্গে পড়তে পারে।ফের আলী জানান, সন্তানরা তাকে দেখেন না। নিজেরা ভালো বাড়িতে থাকে আর তাকে রেখেছে ভাঙা জরাজীর্ণ বাড়িতে। ভাত খেতে দেয় না। অনেক কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে চেয়ে ভাত খান। এ ছাড়া ওষুধের জন্য অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় তাকে। ছেলে আয়নাল ও তার স্ত্রী তাকে খাবার পর্যন্ত দেয় না। এসব সহ্য করতে না পেরে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আবার সেই সন্তানের চাপেই আপস করতে আদালতে গিয়েছেন তিনি। তারপরও সেই সন্তানরা তাকে খেতে পর্যন্ত ডাকেননি।

ছেলে আইনালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক সময় বাজার করে বাসায় নিয়ে গেলে রান্না করতে দেরি হয়। তখন রাগ করে খবার খেতে চায় না। এছাড়াও সকালের খবার খেতে বললে বলে যে, বাজার থেকে খেয়ে আসছি। এসব প্রায়ই ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে মামলা মোকদ্দমা করে থাকে এবং এর আগে জেলও খেটেছি। তবে আমাদের ভুল হয়েছে সঠিক সময়ে খবার দেওয়া ও যত্ন নেওয়া উচিত ছিলো। আমারও তো দুটো ছেলে মেয়ে আছে। তবে যে টুকু সামর্থ রয়েছে চেষ্টা করি বাবাকে ভরণপোষণ দেওয়ার জন্য।

আইনালের স্ত্রীর জানান, দেখাশোনার কাজ তিনি ও তার স্বামী করেন। মাঝে মাঝে ঠুনকো বিষয় নিয়ে ঝামেলা ছাড়া বড় কোনো ঘটনাই ঘটে না। শ্বশুরের প্রতি যত্নের কোনো কমতি নেই।

এলাকার স্থানীয় প্রতিবেশী মো. খোকা বলেন, তরফ আলীর ৯ জন ছেলে ৮ জন বাহিরে থাকেন বাকি একজন ছেলে মো. আইনাল তিনি তার বাবার সঙ্গে আলাদা থাকেন। অনেক সময় ছেলে তার বাবাকে খাবার দেয় কখনও দেয় না। তবে মামলা হয়েছে কিনা তা জানিনা। যেহেতু তার বাবার অনেক বয়স হয়েছে সেক্ষেত্রে ভরণপোষণ দেওয়া উচিত বলে মনে করছি।

তরফ আলীর আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এর আগে ছেলের নামে আরেকটি মামলা ছিল। এরপরও গত ১৮ আগস্ট তফের আলী তার ছেলে আইনাল হোসেনের বিরুদ্ধে সন্তানরা ভাত না দেওয়া ও মারপিটসহ অন্যান্য অভিযোগে এ বছরের ২০ আগস্ট নওগাঁর আমলী আদালতে মামলা করেন। আদালত তফের আলী কষ্টের কথা শুনে ছেলের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। এটা অমানবিক একটা মামলা। এতো গুলো সন্তান থাকার পরও বৃদ্ধ বাবাকে ভাত দেয় না। এটা অমানবিকতার পরিচয়। তবে মামলাটি এখন পেন্ডিং রয়েছে।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১