বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
কাঁদা ছোড়াছুড়ি, একে অপরকে দোষারোপ করা, মামলা করা, কর্ম বিরতি পালন, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন সবই হয়েছে কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এখনো অজানা। আমি আপনাদের কে রাজশাহীতে ঘটে যাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের(রামেক ) ঘটনার কাহিনি বলছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলের তিন তালার ছাদ থেকে কিভাবে পরে গেলো? এটা দূর্ঘটনা নাকি হত্যা সেটা আড়ালেই থেকে গেলো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দোষারোপ করেছে হাসপাতালে চিকিৎসকের অবেলায় মৃত্যু হয়েছে। মাথায় গুরুতর জখম হলে অনেক রুগীকে চিকিৎসক চেষ্টা করলেও বাঁচাতে পারে না। তবে অবহেলার বিষয় আসলে বলা যায় বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়নি বা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যদিও বা চিকিৎসকরা বলছেন রোগীকে মৃত আনা হয়েছিলো। রাবি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গুলোর মাঝে একটা অভিযোগ ছিলো ফর্মালিটি। অনেক অভিযোগের মাঝে ফর্মালিটির অভিযোগ টা শিথিল হয়ে গেছে। এই ফর্মালিটি নিয়ে কিছু জটিলতার উদাহরণ বর্ননা করলেই বোঝা যায় চিকিৎসায় আমরা কতটা সফল।
একজন রোগী মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে প্রথম সাক্ষাৎ করে জরুরী বিভাগে দ্বায়িত্বরত নার্স বা ব্রাদারের নিকট, তখন তিনি কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে আনতে বলেন, টিকিট নিয়ে তিনি (নার্স) ওয়ার্ডে নং দিয়ে ভর্তি হতে বলে। ভর্তি হবার জন্য আবারও টিকিট কাউন্টারে গিয়ে ওয়ার্ডের নম্বর উল্লেখ করে ভর্তির টিকিট কিনতে হয়। এতটুকু ফর্মালিটি পূরন করতে মোটামুটি ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে। এর পর রোগী ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রলি সিন্ডিকেটের সম্মুখীন হতে হয়। বখশিশ নামের চাঁদাবাজি করে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় ওয়ার্ডে। দুই টিকিট নিয়ে তালিকাভুক্ত করার পর প্রথমে চিকিৎসার জন্য রোগীকে দেখবে ইন্টার্নী চিকিৎসক। রোগীর সমস্যা গুলো শোনার পরে ভিতরে রুমে থাকা সিনিয়র ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ লিখা হয়।
যদি সেসব ঔষধ সাপ্লাই থাকে তাহলে নার্স রোগীকে সেবা দেওয়া শুরু করবে, আর সাপ্লাই না থাকলে ঔষধ গুলো লিখে দিবে রোগীর সাথে থাকা আত্মীয় স্বজনরা প্রায় এক কিলোমিটার ( আসা যাওয়া) পথ পাড়ি দিয়ে কিনে এনে নার্সদের দিবে তখন নার্সরা চিকিৎসা শুরু করবে। এটা হলো নরমাল ফর্মালিটি। যদি রোগীর সমস্যা সিটিস্ক্যান বা এক্সরে বা কোন প্যাথেলজিক্যাল টেষ্টে যায় আর সময়টা যদি বিকাল ৩ টার পরে হয় তাহলে সব মিলিয়ে রোগীর রোগ নির্নয় ও রোগ মোতাবেক ঔষধ পেতে সময় লাগবে প্রায় একটা ঘন্টা। এখন সেই রোগী যদি হার্টের, বা নিউরো সার্জারী মানে মাথায় আঘাত পাওয়া হয় তাহলে তাকে বাঁচানো আল্লাহর ওপর ভরসা ছাড়া অন্য কোন পথ নাই। শুধু কাগজ পত্র ঠিক করতেই সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট। আর রোগীর সাথে কেউ না থাকলে তাহলে রোগী সেবা পাবে এটা চিন্তা করা কল্পনার বাইরে। কারন রোগীতো নিজে এতো ফর্মালিটি পূরন করতে পারবে না।
রাজশাহী মেডিকেলের অনেক উন্নয়ন হলেও কাজের ধরন এখনো এনালগ পদ্ধতিতেই আছে। জরুরী বিভাগে যদি এক্সিডেন্ট রুগীর সেবা পেতে ১৫-২০ মিনিট সময় শুধু ফর্মালিটি পূরন করতে পার হয়। তাহলে জরুরী বিভাগ হলো কিভাবে? যেখানে জরুরী ভাবে কোন কাজই হয়না। সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত মোটামুটি সকল সেক্টরে একাধিক কর্মচারি থাকলেও ৩ টার পরে সব জায়গায় থাকে একজন মাত্র। কোন কারণ বশত একটু রোগীর চাপ বেশি হলে সকলেই হিমশিম খায়। এসব হলো ফর্মালিটি। ফরম পূরন করতে করতে রোগী আশংকাজনক হয়ে যায় মারাও যায় অনেক সময়। দেশ ডিজিটাল হচ্ছে, মোটামুটি সকল প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরা সহ নানা রকম প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেলে অর্থোপেডিক্স সার্জারী, নিউরো সার্জারী, কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে ফর্মালিটি পূরন করা টা আধুনিকায়ন করা হলে হয়তো অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কম হবে।
চিকিৎসা সেবা, চিকিৎসক সে সকল বিষয় নিয়ে বহু দোষ আদান প্রদান করা হয়েছে কিন্তু যে মা সন্তান হারিয়েছে সে মা ই বুঝতে পারছে সন্তান হারানোর বেদনা। তাই অন্তত চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন করতে হলে ফর্মালিটির বিষয়ে সময় ব্যায় না করে রুগী যেন চিকিৎসা সেবা দ্রুত পায় সে বিষয়ে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ দৃষ্টিপাত করবেন।