সোমবার, ১২ মে ২০২৫

শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে রামেক ও রাবি পাল্টা পাল্টি অভিযোগ, ৭২ ঘন্টার কর্মবিরতী

শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে রামেক ও রাবি পাল্টা পাল্টি অভিযোগ, ৭২ ঘন্টার কর্মবিরতী

হুমায়ুন কবীর রাজশাহী প্রতিনিধি ঃ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপর হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ তিন দফা দাবিতে আবারও কর্মবিরতি শুরু করেছে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।

শনিবার দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ৭২ ঘন্টার (৩দিন) কর্মবিরতির ডাক দেয়া হয়। এর পর আর কোন ইন্টার্ন চিকিৎসক কাজে যোগ দেননি।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবিগুলো হলো, রাবি ছাত্র শাহরিয়ারের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন এবং হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেন ইন্টার্ন পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরান হোসেন। কর্মবিরতি চলাকালে প্রতিদিন হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়াও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মামলা রেকর্ড করে তিনদিনের মধ্যে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচী দেয়ার হুশিয়ারি দেন ডা. ইমরান।

ইন্টার্ন পরিষদের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও বিএমএর সাধারণ সম্পাদক নওশের আলী, হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম ইয়াজদানী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. খলিলুর রহমান।

আগামী ২৬ অক্টোবর হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের জরুরী সভার আহবানের ঘোষণা দিয়ে সমাবেশে সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ওই সময় সেদিনের ঘটনা পর্যালচনা করা হবে। এর পর পরবর্তি করনীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদ। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিক্ষোভ ও ভাংচুরের ঘটনার নিন্দা জানান, এবং
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংসদ বাদশা। তিনি রাবি ছাত্রের মৃত্যুর কারণ উৎঘাটন এবং হাসপাতালে হামলাকারি ছাত্রদের শনাক্ত করার জন্য পুলিশের প্রতি আহবান জানান। ইন্টার্নি পরিষদের আয়োজনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও বিএমএর সাধারণ সম্পাদক নওশের আলী, হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম ইয়াজদানী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. খলিলুর রহমান।

গত বুধবার রাত আটটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ার হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান। এরপর দ্রুত তাকে অ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে ৮ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এর পর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাংচুর চালান রাবির শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে রাত ১২টার দিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়ে ইন্টার্নী চিকিৎসকেরা সবাই একযোগে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও রাবির তিন শতাধীক ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করে তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের রাজপাড়া থানায় হাসপাতালের পক্ষে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে অভিযোগ দেন।

এর পর বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শেষে শুক্রবার সকাল থেকে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরান হোসেন। এ সময় হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন তিনি। শুক্রবার সকাল থেকে কাজে যোগ দেন ইন্টার্নরা। তবে মামলা রেকর্ড না হওয়া এবং কাউকে গ্রেপ্তার না করায় নতুন করে তিনদিনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসুচি থেকে।

রাবির হাবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলা থেকে পড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল কর্তৃপক্ষ। শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম।

অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, হবিবুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এমজিএম শাহরিয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করতে হলের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর জমা দেওয়া হবে।

হল প্রাধ্যক্ষ আরও বলেন, কমিটির তিনজনই হবিবুর হলের আবাসিক শিক্ষক। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সহযোগী অধ্যাপক ড. গৌতম দত্তকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী অধ্যাপক মো. আনাম শাহরিয়ার রাব্বি ও সহযোগী অধ্যাপক ড. আশিক শাহরিয়ার।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলা থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন মো. গোলাম মোস্তাকিম শাহরিয়ার নামে এক শিক্ষার্থী। তাকে উদ্ধার করে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত নয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ঐদিন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্টদের সাথে বিতর্কে জড়ান ও হাসপাতালে ভাঙচুর করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় রামেক হাসপাতালের স্টাফ ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আঘাতে গুরুতর আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু শিক্ষার্থী। তাদের অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আবার হাসপাতালে ভাঙচুর করায় অজ্ঞাতনামা রাবির তিনশ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন রামেক কর্তৃপক্ষ।

এদিকে নিহত শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের চিকিৎসায় অবহেলা ও শিক্ষার্থীদের মারধর করার অভিযোগ করে আজ শনিবার বিকেলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়ার কথা রয়েছে রাবি কর্তৃপক্ষের। এছাড়া একই অভিযোগে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন রাবি শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১