মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

দোহারে নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

দোহারে নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

দোহার-নবাবগন্জ প্রতিনিধিঃ

ঢাকা দোহার উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের বিলাশপুর গ্রামের পদ্মা নদীর তীর ভাঙ্গনের দেখা গিয়েছে। গত চার দিন ধরে এই নদীর পাড় ভেঙে পরতেছে। এই নদী ভাঙ্গা রোধে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি টিম। তেমনি নদী ভাঙ্গের কথা বলেন বিলাশপুর ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ। তারা বলেন, আমাদের নদী ভাঙ্গার কথা শুনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী,পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ চোকদার আসে পরিদর্শনের জন্য। তারা দেখে আমাদের আশ্বাস দেন নদী ভাঙ্গা রোধ করতে। তারা যখন চলে যায় তখন আমি ঘরে ঘুমাতে যাই। কিন্তু কিছু সময় পরই আবার নদী ভাঙ্গা শুরু হয়।

আমি তখন দুপুরে আমাদের পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম তখন আমার দেবর এসে বলতেছে ভাবি আপনার ঘর তো নদীতে ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে । তখন আমি তার কথা শুনে দ্রুত আমাদের ঘরে দিকে যাই তখন দেখি একটা পানির গোলা এসে ঘরের কিছু অংশ ভেঙে নিয়ে গেল। তখনি আমরা বাড়ির সবাই মিলে হাতাহাতি করে ঘর ভেঙে নিয়ে কিছুটা রক্ষা করি। এমনি কান্না বিজরিত কন্ঠে নদীতে বিলিন হয়ে যাওয়া ঘটনা গুলো বলেন ঢাকার দোহার উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের রহিমা বেগম (৫৬)। তিনি আরো বলেন, আমাদের টাকা পয়সা নেই যে অন্য স্থানে গিয়ে জায়গা কিনে ঘরবাড়ি করবো। তাই এখন সরকারের কাছে আমাদের দাবি এই নদীতে বাঁধ দিয়ে আমাদের শেষ ভিটামাটি টুকু রক্ষা করে।

অন্য দিকে নদীতে ঘর ভেঙে বিলিয়ন হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে থাকা হাজেরা বেগম (৬৩) বলেন, আমার তেমন কেউ নাই আমি আমার মেয়েদের নিয়ে কোন মতে ঘরে বসবাস করিতেছি। আর দুই চার চাপ মাটি ভেঙে পড়লেই আমার ঘরবাড়ি নদীতে ভেঙে পড়বে। এমনই আমার সংসার এখন চলতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। ঈদ ও অন্য অন্য সময় মানুষেরা ত্রাণ দেয় কিন্তু এখন তো কিছু দেয় না। তাই আমার ঘরবাড়ি নদীতে ভেঙে নিয়ে গেলে আমার আর কিছু থাকবে না।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোহার উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের বিলাশপুর ঘাট থেকে বেশ কিছু দূর পর্যন্ত নদীর পাড় ভেঙে পড়তেছে। প্রতিনিয়ত ঐ নদীর পাড়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে এই বুঝি ঘর ভেঙে নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। নিজেদের ঘর রক্ষায় আবার অনেকেই বাঁশ দিয়ে বাঁধ দিয়েছেন। তবে নদীর ঘাটে একটি ড্রেজার ও নদীর মাঝে একটি কাটার দেখা যায়। এছাড়াও মুসলেম,বাবলু,ইসলাম,দুদু মিয়া, ওয়াসিম মাদবর,আয়ুব খা,জুলহাস, জাহিদসহ বেশ কয়েক জনের ঘরে ভেঙে নদীতে বিলিন হয়ে গিয়েছে।

ঐ স্থানের বাসিন্দা আলমগীর জানান, আমরা বেশ কয়েক বছর আগে যখন গোছল করতে যেতাম তখন নদীর ঘাটে যেতে সাইকেল লাগতো আবার অনেকেই হেঁটে যেতো। কিন্তু এখন নদী ভাঙ্গতে ভাঙতে এত কাছে চলে এসেছে যে বাড়ি রক্ষা করাই মুসকিল হয়ে পড়ছে।

নদী ভাঙ্গার বিষয়ে ঐ স্থানের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বলেন, এই নদী ভাঙ্গার একমাত্র কারণ হল ড্রেজার। কারণ দিনে ড্রেজার ব্যবসাইরা দেখায় তারা অন্য বোট দিয়ে এনে মাটি অন্য স্থানে ফেলে। কিন্তু রাত হলেই তারা সেই ড্রেজারের পাইপ নদীতে নামিয়ে দিয়ে মাটি তুলে। আর এ কারনেই নদী ভাঙ্গে এখন বাড়ি ঘর ভেঙতেছে। কারা করছে এ ধরনের কাজ তা জানতে চাইলে তিনি বলেন দলীয় লোকজনই করতেছে নাম জানতে চাইলে তিনি তা বলেনি। আমরা এখন এর সমাধান চাই এমপি মহোদয় সালমান এফ রহমানের কাছে।

দোহার উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে,গত মঙ্গলবার রাতে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান ঐ স্থান থেকে বরিশালের বানারিপাড়া কুমারের পাড় এলাকার মৃত ওলিউল্লাহর ছেলে আরিফুল ইসলাম (২২), একই এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে মোঃ ঈমাম হোসেন(৩২), মৃত আরেক আব্দুর রশিদের ছেলে ইউসুফ(২৮), লক্ষীপুর কমলনগর এলাকার সেলিমের ছেলে মোঃ ইব্রাহিম( ৩৬) ও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া এলাকার হাজী মোহাম্মদ মনির হোসেনের ছেলে মোঃ আবুল হোসেন(৫২) আটক করেন। পরে আটককৃতদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে মোট এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে দুটি ড্রেজারকে জব্দ করে দোহার কুতুবপুর নৌ- পুলিশের জিম্মায় রাখা হয়।

দোহার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলম বলেন, নদী ভাঙ্গা কথা শুনে আমি সেনাবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পরিদর্শনের জন্য পাঠিয়েছি। তাড়া অতি দ্রুত কাজ শুরু করবে। ইতিমধ্যে বিলাশপুর গ্রামে পদ্মা নদী ভাঙ্গান রোধে সেনাবাহিনীর জিও ব্যাগ ফেলানো শুরু করেছে।

 

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১