ইতেকাফের পরিচয়
ইতেকাফ অর্থ—কোনো স্থানে নিজেকে আবদ্ধ রাখা। শরিয়তের পরিভাষায়—বিশেষ নিয়তে বিশেষ অবস্থায় আল্লাহতায়ালার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলা হয়।
ইতেকাফ তিন প্রকার
১. ওয়াজিব : ইতেকাফ করার জন্য মানত করা হলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। এই ইতেকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। রোজাবিহীন ওয়াজিব ইতেকাফ আদায় হবে না।
২. সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া : রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। অর্থাৎ মসজিদের অধিবাসীদের মধ্যে কোনো একজন ইতেকাফ করলে, অন্য লোকেরা গোনাহ থেকে বেঁচে যাবে। আর যদি কেউ না করে, তখন সবাই গোনাহগার হবে। এই ইতেকাফের জন্যও রোজা শর্ত। এটি বিশ রমজানের সূর্যাস্ত থেকে উনত্রিশ বা ত্রিশ রমজানে ঈদুল ফিতরের চাঁদ উদয় হওয়া পর্যন্ত বাকি থাকে।
৩. মুস্তাহাব : ওয়াজিব ও সুন্নত ইতেকাফ ছাড়া অপর ইতেকাফ মুস্তাহাব। এর জন্য রোজা শর্ত নয়। আর এ ইতেকাফের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়ও নেই। (হেদায়া : ১/২২৯, ফতোয়ায়ে শামি : ২/১৭৮)।
কোরআনে ইতেকাফের গুরুত্ব
পবিত্র কোরআন মানবজাতির সব বিষয়ের পথপ্রদর্শক। কোরআন ছাড়া মোমিনের জীবন অচল। সে হিসেবে ইতেকাফের আলোচনাও মহাগ্রন্থ আল কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে। যা একজন মোমিনের অন্তরে ইতেকাফ করার প্রতি অধিক আগ্রহ সৃষ্টি করবে। ঈমানকে বলবান করবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী ও ইতেকাফকারী এবং রুকু ও সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ (সুরা বাকারা : ১২৫)।
হাদিসে ইতেকাফের ফজিলত
রাসুল (সা.) মদিনায় অবস্থানকালে প্রতি বছর ইতেকাফ পালন করেছেন। দ্বীনি দাওয়াত, তালিম-তরবিয়ত ও জিহাদে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি রমজানে ইতেকাফ ছাড়েননি। তবে ইসলামের ইতিহাসে শুধু একবার ইতেকাফ ছাড়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতি বছর ইতেকাফ পালন করেছেন মহানবী (সা.)। ইতেকাফের ফজিলতের জন্য রাসুল (সা.)-এর এ ধারাবাহিকতাই যথেষ্ট।
একজন মুসলমান ইতেকাফ পালন করার কারণে দুনিয়ার যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত থাকে। সাধারণত লোকেরা চোখের কুদৃষ্টির কারণেই ছোট-বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ইতেকাফের দরুণ চোখের দৃষ্টি হেফাজত হয়। সেই সঙ্গে অন্তরও পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। আর ইতেকাফকারীর সওয়াব বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে গোনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকে এবং তার জন্য সওয়াব লেখা হয় ওই ব্যক্তির মতো, যে বাইরে অবস্থান করে যাবতীয় ভালো কাজ করে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৮৫৩)।
নারীদের ইতেকাফ
ইসলাম মোমিন নারীদের পুরুষের মতো ইতেকাফ পালন করার অনুমতি দিয়েছে। তবে পুরুষরা মসজিদে ইতেকাফ পালন করবে। আর নারীরা আপন ঘরের নির্জন স্থানে ইতেকাফ করবে। যাতে একজন মোমিন নারী রমজান মাসে ইতেকাফ করার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। মেয়েদের ইতেকাফের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন—আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ইন্তেকাল পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। অতঃপর তার স্ত্রীরাও ইতেকাফ করেছেন।’ (বোখারি : ২০৬৫, মুসলিম : ২৮৪১)।
ইতেকাফের আমল
সাধারণত একজন মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে ইতেকাফ করে। ইতেকাফকারী সবসময় ইবাদতে লিপ্ত থাকে। দুনিয়ার সমুদয় ব্যস্ততাকে বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহর নৈকট্য লাভের সাধনায় থাকে। তাই ইতেকাফকারীকে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দুরুদ পাঠে মশগুল থাকা চাই। এ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ, আওয়াবিন, এশরাক, চাশত ইত্যাদি সুন্নত নামাজও বেশি পরিমাণে নিয়মিত আদায় করতে পারে। ইতেকাফ অবস্থায় রাসুল (সা.) বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। যেমন—আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উদার মনের। আর তার এ উদারতা রমজান মাসে অধিক পরিমাণে বেড়ে যেত। রমজান মাসে প্রত্যেক রাতেই জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসুল (সা.) তাকে কোরআন শোনাতেন।’ (বোখারি : ১৯৩৬)।