মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

কিউকমের গ্রাহকদের টাকা ফেরতে নতুন জটিলতা

ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের পাওনাদার গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। গত বছরের ৩০ জুনের পর যেসব গ্রাহক নিজেদের নগদ, বিকাশ বা রকেট হিসাব থেকে পণ্যের ক্রয় আদেশ দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে টাকা পেয়ে গেছেন। আবার পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন কেউ কেউ। কিন্তু মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা এমএফএস এজেন্টদের মাধ্যমে যাঁরা ক্রয়াদেশ দিয়েছিলেন, জটিলতা দেখা দিয়েছে তাঁদের পাওনা ফেরত দেওয়া নিয়ে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২৪ জানুয়ারি ৬ হাজার ৭২১ জন গ্রাহকের মোট ৫৯ কোটি ৫ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ ১৭ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, এখন পর্যন্ত কিউকমের গ্রাহকদের ২৩ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

বাকি ৩৬ কোটি টাকা পরিশোধের বিষয়ে ফস্টার করপোরেশন এখন বলছে, এজেন্টদের মাধ্যমে যাঁরা ক্রয়াদেশ দিয়েছিলেন, তাঁদের পাওনা পরিশোধ করতে ‘আদালতের আদেশ বা অনুমোদন গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।’ আদালতের আদেশের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি ফস্টার করপোরেশন চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগে।

অবশ্য জটিলতা আঁচ করতে পেরে গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ফস্টার মিলে অনলাইনে বৈঠক করে দুটি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করে। একটি হচ্ছে, এমএফএসের মাধ্যমে যে ওয়ালেট নম্বর ব্যবহার করে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিল, সেই নম্বরগুলো সংগ্রহ করবে ফস্টার করপোরেশন। অন্যটি হচ্ছে, ফস্টারে নিবন্ধিত গ্রাহকদের মোবাইল নম্বরের সঙ্গে ওয়ালেট নম্বরগুলো মিলিয়ে দেখা।

ফস্টারের নতুন প্রস্তাব
এ প্রস্তাব কার্যকর করতে গেলে দুটি পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে ফস্টার। তার একটি হচ্ছে, যেসব ক্ষেত্রে ওয়ালেট নম্বর ও গ্রাহকের মোবাইল নম্বর একই হবে, সেসব ক্ষেত্রে যে ওয়ালেট থেকে টাকা পাঠানো হয়েছিল, সে ওয়ালেট নম্বরেই নির্ধারিত এমএফএসের মাধ্যমে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
আরেকটি পরিস্থিতি হচ্ছে, যেসব ক্ষেত্রে ওয়ালেট নম্বর ও ক্রেতার মোবাইল নম্বর একই হবে না, সেসব ক্ষেত্রে ফস্টারে নিবন্ধিত গ্রাহকের মোবাইল নম্বরে খুদে বার্তা (এসএমএস) এবং ই–মেইলে মেইল করা হবে। ওই এসএমএস ও ই–মেইলে লেনদেনের পরিমাণ, ক্রয়াদেশ নম্বর ও ওয়ালেট নম্বর উল্লেখ করার পাশাপাশি একটি লিংকও সংযুক্ত করা হবে।

লিংকে ঢুকলে গ্রাহককে একটি অনলাইন ফরম দেখাবে, যেখানে লেনদেনবিষয়ক আনুষঙ্গিক তথ্য দিতে হবে। যে ওয়ালেটে গ্রাহক টাকা ফেরত নিতে চান, ওই ফরমে সেই ওয়ালেটের নম্বর দিতে হবে। গ্রাহকের দেওয়া তথ্য ফস্টারে থাকা তথ্যের সঙ্গে হুবহু মিলে গেলে গ্রাহক টাকা ফেরত পাবেন। না মিললে গ্রাহকের কাছে আবার তথ্য চাওয়া হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে কোনো পক্ষ থেকে দাবি উঠলে সব দায় গ্রাহকের ওপর বর্তাবে এবং ফস্টার করপোরেশন ও টাকা ফেরত দেওয়া এমএফএস প্রতিষ্ঠান কোনো দায়িত্ব নেবে না বলে গ্রাহকের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দিতে হবে। তথ্য পাওয়ার পর সাত কর্মদিবসের মধ্যে গ্রাহকের দেওয়া ওয়ালেট নম্বরে এমএফএসের মাধ্যমে টাকা ফেরত দেওয়ার পদক্ষেপ নেবে ফস্টার। আইনি জটিলতা এড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি অনুমোদিত হবে। আদালত থেকে এ বিষয়ে আদেশ বা অনুমোদন নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

আগেও জটিলতা হয়েছিল
যেসব পাওনাদারের টাকা ফেরত দেওয়া হবে, তাঁদের তালিকা তৈরি করে গত ১০ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়েছিল কিউকম ও ফস্টার করপোরেশন। ২৪ জানুয়ারি থেকে পাওনাদারদের টাকা দেওয়া শুরুও হয়। এরপরও মাঝখানে আরেক জটিলতা শুরু হয় এমএফএস প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকগুলোর দিক থেকে। মোট ৫৬ কোটি ৮৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা আটকে রেখেছিল তারা। গ্রাহকেরা টাকা পাচ্ছিলেন না। টাকা ছাড় করতে বাধ্য হয়ে গত ৩১ জানুয়ারি ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) চিঠিও পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, নগদ, বিকাশ, ওয়ান ব্যাংকের ওকে ওয়ালেট এবং শিওরক্যাশের মাধ্যমে গ্রাহকেরা কিউকমের কাছ থেকে পণ্য কেনার আদেশ দিয়েছিলেন। সবচেয়ে বেশি ২৯ কোটি ৪৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা জমা ব্যাংক এশিয়ার গুলশান শাখায়। একইভাবে ইসলামী ব্যাংকের বাড্ডা শাখায় ১৫ কোটি এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের গুলশান শাখায় ১২ কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ দুই ব্যাংকে আটকে থাকা টাকা এসেছিল নগদের কাছ থেকে। চিঠি পাওয়ার পর তিন ব্যাংকই টাকা ছাড় করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

কিউকমের মতো আরেক ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টও পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করেছে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। আলেশা মার্টের পেমেন্ট গেটওয়ে এসএসএল কমার্জ। এতে আটকে থাকা ৪২ কোটি পর্যায়ক্রমে ফেরত পাবেন গ্রাহকেরা। আলেশা মার্ট ও এসএসএল কমার্জের করা যৌথ তালিকা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ৪৮৫ গ্রাহক ১ হাজার ১৪৩টি লেনদেনের বিপরীতে ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা ফেরত পাবেন। পরে আরও গ্রাহক পাবেন ৩২ কোটি টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৩ কোটি টাকার মতো ফেরত পেয়েছেন বেশ কিছু গ্রাহক।

একই পদ্ধতিতে আলাদিনের প্রদীপ, ধামাকা শপিং, বুম বুম এবং দালাল প্লাসের গ্রাহকদেরও টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কাজ চলছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়।

কিউকমের গ্রাহকদের টাকা ফেরত নিয়ে ফস্টারের চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান এ এইচ এম সফিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফস্টারের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কাল বৈঠক হবে। এরপর জানা যাবে প্রক্রিয়াটির কোথায়, কী সমস্যা হচ্ছে।’ আলেশা মার্টের পাওনাদার গ্রাহকেরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ইভ্যালি, ই–অরেঞ্জসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকেরা একই সমস্যায় থাকলেও পাওনা ফেরত নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১