সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
অন্ধকার ঘুচিয়ে আলোকিত হচ্ছে উপকূলের ১৬ চরাঞ্চল ।
সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে শিগগিরই জাতীয় গ্রিডে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হচ্ছে দ্বীপজেলা ভোলাসহ মেঘনা ও তেুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী ১৬টি চরের প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহক। পল্লীবিদ্যুতের আওতায় প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সংযোগ লাইন ও উপকেন্দ্র নির্মাণকাজ পর্যায়ে।
এর মধ্য দিয়ে হাজার বছরের অন্ধকার ঘুচিয়ে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে প্রকৃতির রানী চর কুকরী-মুকরীসহ সাগরকুলের চরগুলো। বিদ্যুৎ কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নানা উন্নয়ন যজ্ঞ। চরাঞ্চলে এ সংযোগের মধ্য দিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আসবে পুরো জেলা। ঘুচে যাবে অন্ধকার, জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হবে অবহেলিত চরের মানুষের ভবিষ্যৎ।
নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যম জাতীয় গ্রিড লাইন গিয়ে যুক্ত হয়েছে সাগর তীরের চর কুকরী-মুকরীর ম্যানগ্রোভ বাগানের পাশের উপকেন্দ্রে। সেখান থেকে সুবজ বাগানের বুক চিরে বিদ্যুতের খাম্বাগুলো চলে গেছে হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও গত দুই মাস বিদ্যুতের সুফল ভোগ করছে এখানকার মানুষ। রাতের অন্ধকার কাটিয়ে বিদ্যুতে আলোকিত হয়েছে দুর্গম চরাঞ্চল। কুকরীর মতো উপকুলের ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ১০ হাজার গ্রাহক ইতোমধ্যে সংযোগ নিয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্য মতে, ভোলাসহ ৩ জেলার ৯টি উপজেলার ১৬টি চর বিদ্যুতের আওতায় আনার কাজ চলছে। এর জন্য চর কুকরী-মুকরী ও মুজিবনগরে ১০ এমভিএ ২টি উপকেন্দ্র নির্মাণকাজ শেষে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।
নদী ক্রসিংয়ে ৫টি স্পটে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বাকি ২টি স্থানে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের কাজ শেষপর্যায়ে। ১ হাজার ৪২৮ কিলোমিটার ওভারহেড সংযোগ লাইনের মধ্যে ১ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে দ্বীপজেলাকে শতাভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এদিকে হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত বিুদ্যতের মাধ্যমে অন্ধকার দূর করে নিজেদের নানা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন অবহেলিত চরের বাসিন্দারা।
চরকুকরীর বাসিন্দা আনিস আহমেদসহ অনেকে জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার বিষয়টি তাদের কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। কল্পনার বাইরে ছিল গৃহস্থের ঘরে বিদ্যুৎ বাতির আলোর বিষয়টি, যা এখন বাস্তব। এতে জীবন যাত্রার উন্নয়নের পাশাপাশি চরবাসী তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে আগামীর বিশ্বে।
কুকরী-মুকরী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাবুল হোসেন জানান, বিদ্যুৎ সংযোগোর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। কমে আসবে বেকার সমস্যার। সাগরতীরের মানুষ এখন এখানেই নতুন নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারবে। দুর্গম এলাকায় বসেই তারা শহরের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। আর পড়াশোনায় ডিজিটাল ছোয়া লাগবে বলে জানান, স্কুলশিক্ষক জাকির মজুমদার।
সাবমেরিন ক্যাবেলের সংযোগের মাধ্যমে অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়ে উন্নয়ন ও আলোর পথে এগিয়ে চলছে বলে মনে করছেন চর ককুরী মুকরীর চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন।
তিনি বলেন, চরাঞ্চলের বিদ্যুতের সংযোগের মাধ্যমে সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে শুরু করেছে। আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। ভোগ করছে আনুনিক সুযোগ-সুবিধা।
চরাঞ্চালকে বিদ্যুতের আওতায় আনাকে অভাবনীয় সাফল্য উল্লেখ করে চরবাসীর অর্থনৈতিক উন্নতিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দেওয়ার দাবি জানান ভোলা জেলা উন্নয়ন ও স্বার্থরক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ রায় অপু।
আর এ বিদ্যুতের মাধ্যমে বিছিন্ন চরের মানুষের জীবন মানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জিএম মো. আলতাপ হোসেন জানান, চরের বাসিন্দারা দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। অফগ্রিড এলাকার মানুষ সহজে বিদ্যুৎ পেয়ে আত্মহারা।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৩৩৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে। সাবমেরিন ক্যাবলে সংযোগ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় হাজিপুর, ঢালচর ও চর নিজামের ১ হাজার ৩৫০ গ্রাহকে সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে।