বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
ভিয়েতনামকে টপকে গেল বাংলাদেশ। তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে আবারও দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ হয়েছে বাংলাদেশ। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে ভিয়েতনামের চেয়ে ১৯৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার বেশি আয় করেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ এসময়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৭৯ কোটি ৮৫ ডলারে আর ভিয়েতনামের হয়েছে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার।
এর আগে গেল জুলাইয়ে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ ২০২১ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০২০ সালে বাংলাদেশকে পেছনে ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হয়েছে ভিয়েতনাম। করোনা মহামারির ওই বছরে বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে গেছে ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আর ভিয়েতনাম থেকে ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক। ২০২০ সালে অবশ্য করোনার সংক্রমণ রোধে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। সেক্ষেত্রে ভিয়েতনামের অবস্থা ছিল তুলনামূলক ভালো।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে তখন বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ বাড়ছে। এর কয়েকটি যৌক্তিক কারণও রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। যেমন, ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে টালমাটাল অবস্থা তৈরি হলে সেদেশকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বেশ কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে দিয়েছে বিভিন্ন দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। মিয়ানমার থেকেও সরে আসা ক্রয়াদেশের একটা অংশ পেয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
প্রতি মাসেই ক্রয়াদেশ বাড়ছে বলে উল্লেখ করে পোশাক খাতের জ্যেষ্ঠ এই উদ্যোক্তা বলেন, চলতি বছর শেষে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের চেয়ে ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার এগিয়ে থাকবে বলে মনে হচ্ছে। তবে, ভিয়েতনাম যেহেতু উন্নতমানের পোশাক বাজারজাত করে থাকে এবং ভোক্তাদের চাহিদাও রয়েছে এই ধরনের পোশাকে। তাই এই অবস্থানকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদেরও উন্নতমানের বহুমুখী পণ্য উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ তার।
এক্ষেত্রে সরকার ও ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে পথ চলার তাগিদ দিচ্ছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীরের পরামর্শ, বাংলাদেশকে অবশ্যই ধীরে ধীরে কম দামি পোশাকের বাজার থেকে সরে আসতে হবে এবং উচ্চমূল্যের পোশাক তৈরি করে বাজার দখল করতে হবে। এজন্য, সরকারের তরফ থেকে নীতি সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি উন্নতমানের পোশাক প্রস্তুতকারকদের উৎসাহ দিতে প্রণোদনা দেওয়ার পরামর্শ তার। এছাড়া, স্বল্পোন্নত দেশের কাঁতার থেকে বের হয়ে গেলে যেন রপ্তানি বাজারে হোঁচট খেতে না হয় সেজন্য দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নতমানের পোশাক প্রস্তুত করার উপযোগী কারখানা স্থাপনে বিশেষ জোর দেওয়ার তাগিদ এই অর্থনীতিবিদের।