শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুধু একজন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়নি, মুক্তিযুদ্ধকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল, তারাই এ হত্যার পেছনে ছিল। এ হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষের চারা রোপণ হয়। বাংলাদেশকে এখনো এর দায় বহন করতে হচ্ছে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আলোচকেরা এসব কথা বলেছেন। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন আজ শুক্রবার বিকেলে এ সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ নিহত সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এ হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি-মার্কিন নীলনকশার বাস্তবায়ন হয়। পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার শুরু হয়।
প্রবীণ রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খন্দকার মোশতাক পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে কনফেডারেশন গড়ে তোলার জন্য কলকাতার মার্কিন কনসালের সঙ্গে সলাপরামর্শ করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মোশতাকের নেতৃত্বে কনফেডারেশনপন্থীরা ভূমিকা অব্যাহত রাখে। মোশতাক-কনফেডারেশনের খুনি মেজর সাহেবরা জিয়াউর রহমানের সহযোগিতা পায়।
অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যাকারী গোষ্ঠী প্রথমেই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের সংবিধানকে টার্গেট করে। আমাদের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিকে হত্যা করে। এতে বোঝা যায়, ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে হত্যাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এসব তারাই করেছে, যারা বাংলাদেশকে একেবারেই চায়নি। তাদের মনেপ্রাণে ছিল পাকিস্তান।’
মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশ উল্টো পথে যাত্রা করে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে ফেলা হয়।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মূল্যবোধকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর সাম্প্রদায়িকতা ও যে নৈতিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়, তার ফল এখনো ভোগ করতে হচ্ছে। এখন আমরা শিক্ষা ও নারী নীতি করছি, কিন্তু এসব ক্ষেত্রে নানা আপসকামিতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সারোয়ার আলী বলেন, ‘১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী বাংলাদেশের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ছিল না। ধর্মভিত্তিক সামরিক শাসকদের হাত থেকে মুক্ত করে গণতান্ত্রিক শক্তির দেশ গড়াই ছিল এর লক্ষ্য। ১৯৭৫ সালে সেই স্বপ্নটি ভঙ্গ হয়েছে। আমাদের সত্যিকারের সর্বনাশ হয়েছে।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষার আন্দোলনকে গতিশীল করার চেষ্টা করেছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে শিক্ষার অধিকার দিয়েছিলেন। আজ শিক্ষার এই ঢালাও বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। তাঁকে হত্যার পর শিক্ষার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিস্তার রুদ্ধ হয়ে যায়।
অসাম্প্রদায়িকতা থেকে আমরা অনেক দূর চলে গেছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়েছিল। এখনো তার দায় আমাদের বহন করতে হচ্ছে।’
সভা সঞ্চালনা করেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নারীনেত্রী খুশী কবির, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী প্রমুখ।