বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
দুই বছরেরও বেশি সময় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি। এরমধ্যে অনেক স্থানেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে না পারায় সেখানেও রয়েছে শূন্য পদ। এমনকি দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে দুই দফায় নাম ঘোষণা করে ১৯ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হলেও একে একে পাঁচজন শীর্ষ নেতার মৃত্যুতে সেখানেও রয়েছে সঙ্কট।
এমন অবস্থায় দ্রুতই কাউন্সিল করতে প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সময় সংবাদকে জানিয়েছেন, যেকোনো সময় হতে পারে বিএনপির কাউন্সিল। তবে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই হতে পারে তা।
তিনি বলেন, ‘এই করোনাকালীন সময়েও আমরা আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম ভেতরে ভেতরে চালিয়ে যাচ্ছি। দল সংগঠিত আছে। করোনা হেল্প সেন্টার প্রতিটি জেলায় জেলায় চালাচ্ছি, সেখানে নেতাকর্মীরা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। এতে করে সংগঠন ঠিকই আছে। আমরা যেকোনো মুহূর্তে কাউন্সিল করব।’
‘তবে, কাউন্সিল করতে যদি সরকার জায়গা দেয় তাহলেই সম্ভব’, বলেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
তিনি বলেন, ‘বাড়ির উঠানেও ক্ষমতাসীনরা আমাদের সংগঠন চালাতে দেয় না, পুলিশ হামলা করে। এ অবস্থার মধ্যেও আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে দলের কমিটিগুলো করছি। সরকার দমননীতি বন্ধ করলেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে সহজ হবে।’
তিনি বলেন, ‘মহামারির এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে কার্যক্রমও চালাতে দিচ্ছে না প্রশাসন।’
দলের ভেতরে এমুহূর্তে কোনো মতভেদ আছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির অন্যতম এই নীতি নির্ধারক জানান, দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে এমন কথাগুলো অপপ্রচার চালায় একটি গোষ্ঠি। কিন্তু এটা সত্য যে, কেউ বলছে আন্দোলন এখনই করতে হবে, কেউ বলছে করোনার মধ্যে আন্দোলন করলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমন মতানৈক্য দলের মধ্যে আছে, কিন্তু বিএনপি সবসময়ই ঐক্যবদ্ধ আছে, বিএনপি সংগঠিত আছে।
বিএনপির কাউন্সিল করতে কেন এতদিন লাগছে জানতে চাইলে ইকবাল হাসান বলেন, ‘গতবছরের মে মাসেই কাউন্সিল করার কথা ছিল, করোনার কারণে সেটা ভেস্তে গেল। অনেক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে, ইউনিয়ন ও থানা পর্যায়ে প্রায় ৭০ শতাংশ কমিটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনা সব পাল্টে দিল।’
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ৬ষ্ঠ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলের পর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয় তিন বছর পর ২০১৯ সালের মার্চেই। কিন্তু তার প্রায় আড়াই বছর পার হলেও এখনও কাউন্সিল করতে পারেনি দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দল।
এদিকে, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের ৫ জনই একে একে মারা গেছেন। কমিটির প্রথম সদস্য বেগম খালেদা জিয়াও দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। পদাধিকার বলে কমিটির আরেক সদস্য তারেক রহমান রয়েছেন লন্ডনে। অপর আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ রয়েছেন ভারতের শিলংয়ে।
এদিকে, স্থায়ী কমিটির অন্যতম প্রবীণ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন দলের কাছে। রফিকুল ইসলাম মিয়াও অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন যাবত বিচ্ছিন্ন রয়েছেন দলের কর্মকাণ্ড থেকে। আরেক প্রবীণ সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারও বয়সের ভারে অনিয়মিত দলের কাছে।
হাতেগোনা পাঁচ থেকে সাতজন নিয়মিতই নানা মাধ্যমে বৈঠকে উপস্থিত থাকেন প্রায় সব সময়ই। এমন অবস্থায় দলের অনেক নেতাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের এই সঙ্কট দলকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা তৈরি করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা হয় সময় সংবাদের। যাদের মধ্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বিএনপি একটা রাজনৈতিক দল। যেখানে পাঁচ জন মিলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, আবার ১০০ জন মিলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। এতে কোনো সঙ্কট তৈরি হয় না। তবে হ্যাঁ, যতবেশি আলোচনা হবে, তত বেশি ভালো রেজাল্ট আসবে।’
তাহলে কবে নাগাদ স্থায়ী কমিটিকে আরও কার্যকর করতে শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে জানতে চাইলে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘শূন্য পদ সবগুলোই পূরণ করা হবে। করোনা মহামারি ও বেগম জিয়ার বন্দী দশা এই পরিস্থিতিতে আসন পূরণ করা একটু কঠিন হবে। সামনে আমাদের কাউন্সিল করার পরিকল্পনা আছে, তখনই শূন্য আসনগুলো পূরণ করা হবে। তবে এখনই পূরণ করার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। যেহেতু সময় খুব কম কাউন্সিলের জন্য, সেখানে স্থায়ী কমিটির সদস্য নিয়োগের বিষয়টি চেয়ারপার্সন সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি (বেগম জিয়া) হয়তো চিন্তা করতে পারেন কাউন্সিলেই শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে, তাও হতে পারে।’
অন্যদিকে, বর্তমান পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে কর্মসূচি গ্রহণে সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিএনপিকে। এমনকি সাংগঠনিক তৎপরতা পরিচালনায় কেন্দ্রীয় দিকনির্দেশনা প্রদানেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব শূন্য পদগুলো পূরণের চিন্তা-ভাবনা করছে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। দুর্দিনে যারা বিএনপির পাশে ছিলেন এবং নানা প্রতিকূল পরিবেশেও দলের অনুগত ছিলেন, এমন পরীক্ষিত নেতাদের স্থায়ী কমিটিতে জায়গা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
সূত্রঃ সময়