বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
গর্ভবতী মায়েদের (গর্ভকালীন ও গর্ভ পরবর্তী) ক্ষেত্রে গর্ভবতী না এমন মায়েদের তুলনায় কোভিড-১৯ জনিত গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি।
গর্ভাবস্থায় শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন ঘটে যা শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাল সংক্রমণের মতো গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ায়, এমনকি গর্ভাবস্থার পরেও এ ঝুঁকি বিদ্যমান।
এ ছাড়া, গর্ভাবস্থায় রক্ত জমাট বাঁধাজনিত ঝুঁকিও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি যা গর্ভাবস্থার পরেও অব্যাহত থাকতে পারে এবং গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েরা নির্ধারিত সময়ের পূর্বে (৩৭ সপ্তাহের পূর্বে) সন্তান প্রসবের ঝুঁকিতে থাকে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে গর্ভের সন্তানের জন্য ও এটি মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে।
কারণ : পঁচিশোর্ধ্ব বয়সে সন্তান ধারণ, পূর্বনির্ধারিত শারীরিক জটিলতা যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, শারীরিক স্থূলতা, কিডনি রোগ ইত্যাদি, জীবনযাপনের ধরন, কর্ম পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, ইত্যাদি বিষয়গুলো গর্ভকালীন করোনাজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য দায়ী।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিনমাস সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই তিনমাস যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাইরে চলাচল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
এ ছাড়াও তথাকথিত স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক বৈষম্যগত কারণেও সমাজের বিভিন্ন স্তরে গর্ভবতী মায়েরা করোনাকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।
টিকার ভূমিকা : আপনি যদি সন্তান ধারণে আগ্রহী বা সন্তানসম্ভবা হন বা সম্প্রতি মা হয়েছেন এমন হন, তবে আপনি নিশ্চিন্তে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করতে পারেন। এটি আপনার এবং আপনার গর্ভের সন্তানের করোনাজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাবে। আপনার যদি টিকা দেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসক/স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর সঙ্গে কথা বলুন।
সম্পূণ (ফুল ডোজ) টিকা না দেওয়া থাকে সেক্ষেত্রে করণীয় : যদিও সম্পূর্ণরূপে করোনা ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট উপায় নেই, তবে গর্ভবতী মা এবং গর্ভের সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পরিবারের সদস্যদের কিছু নিয়ম মেনে চলা আবশ্যিক। যেমন : ১. বাসার বাইরে গেলে অথবা পরিবারের নিকট সদস্য ব্যতীত বাইরের লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করুন।
২. কোভিড আক্রান্ত হয়েছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি দেখা বা মেলামেশা যথাসম্ভব পরিহার করুন। ৩. মাস্ক ব্যবহার করছেন না এমন ব্যক্তির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখুন। আপনার আশপাশের সবাইকে যথাযথ নিয়ম মেনে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করুন।
৪. যথাসম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলুন, প্রয়োজনে নিরাপদ দূরত্ব (৬ ফিট অথবা ৪ হাত) বজায় রেখে কথা বলুন। ৫. আলোবাতাস চলাচল করে না এমন/বদ্ধঘরে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা থেকে বিরত থাকুন। ৬. সাবান পানি দিয়ে ঘনঘন হাত ধোন। সাবান পানির ব্যবস্থা না থাকলে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করুন।
৭. হাত না ধুয়ে আপনার হাত, নাক, মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। ৮. হাঁচি, কাশির সময় টিস্যু অথবা রুমালে মুখ ঢেকে রাখুন এবং পরে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। ৯. বাড়িতে ন্যূনতম ৩০ দিনের প্রেসক্রিপশন এবং নন-প্রেসক্রিপশন ওষুধ মজুত রাখুন।
গর্ভকালীন এবং গর্ভ পরবর্তী সময়ে সুস্থতায় করণীয় :
১. গর্ভকালীন এবং গর্ভ পরবর্তী সময়ে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা পেতে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। করোনাকালীন সময়ে জরুরি প্রয়োজনে টেলিমেডিসিন সেবা নিতে পারেন। ২. কীভাবে নিজে সুস্থ থাকা যায় এবং গর্ভের বাচ্চা/ভূমিষ্ঠ শিশুর যত্ন নিতে হয় এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে শিশু ডেলিভারির সম্ভাব্য স্থান, সময় এবং উপায় বিষয়ে আগাম পরিকল্পনা করে রাখুন। ৪. গর্ভকালীন কিংবা গর্ভ পরবর্তী সময়ে যদি মানসিক অবসাদ/দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন অবশ্যই তা পরিবারের সদস্য এবং চিকিৎসককে অবহিত করুন।
৫. গর্ভকালীন যেসব নিয়মিত টিকা নিতে হয়, তা যথানিয়মে গ্রহণ করে নিজেকে ও গর্ভস্থ শিশুকে সুরক্ষিত রাখুন। ৬. গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন যে কোনো উপসর্গ, করোনা উপসর্গ কিংবা গর্ভ পরবর্তী যে কোনো শারীরিক অসুস্থতায় দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
৭. মারাত্মক করোনা উপসর্গ যেমন শ্বাসকষ্ট, ক্রমাগত বুকে ব্যথা অথবা চাপ অনুভূত হওয়া, অতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা, অচেতন হয়ে যাওয়া কিংবা ত্বক, ঠোঁট কিংবা হাত-পায়ের নখ নীলচে বা বিবর্ণ হয়ে গেলে দ্রুততম সময়ে রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।
লেখক : ডা. আয়েশা আকতার, জীবাণুবিদ, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা, বাংলাদেশ
তথ্যসূত্র : সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন