শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
সারি সারি বাঁশ আর খুঁটিতে হাটের প্রস্তুতি সারা, পশুও আসতে শুরু করেছে। ক্রেতারাও আসছেন; তবে গরু দেখতে, কারণ বেচা এখনও শুরু হয়নি।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঢাকায় কোরবানির পশুর হাট গিয়ে মঙ্গলবার এই চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীতে এবার ২০টি হাট বসছে, সেগুলোতে বিক্রি শুরু হবে আর তিন দিন বাদে ১৭ জুলাই থেকে। ঈদের আগে বেচা-কেনার জন্য সময় থাকছে চার দিন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে এবার অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচায় সরকার গুরুত্ব দিলেও ঈদের আগে আকস্মিকভাবে নয় দিনের জন্য সব বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়ার ঘোষণা এসেছে।
ফলে কোরবানির হাট যখন চলবে, তখন কোনো বিধি-নিষেধ থাকছে না; যদিও জনসমাগমের ঘটনা করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। আর কোরবানির হাটে জনসমাগম তো ঘটবেই।
অন্যদিকে মহামারীর দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে নাজুক অবস্থা চলছে দেশে; সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
সেক্ষেত্রে সংক্রমণ এড়াতে কী ব্যবস্থা- জানতে চাইলে দুই সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারাই বলেন, এবার হাট ব্যবস্থাপনায় নতুন কয়েকটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে- গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে ঢুকতে দেওয়া হবে না, বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিরা হাটে ঢুকতে পারবে না, হাটে প্রবেশকারীকে গ্লাভস, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে ঢুকতে হবে। হাটে হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক সাবান রাখতে হবে। যত্রতত্র ময়লা–আবর্জনা না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে।
হাটে ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য আলাদা গেইট থাকবে। হাটে ঢোকা, কেনাকাটা ও বের হওয়ার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
এসব বিষয় ইজারাদারদের নিশ্চিত করতে হবে জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শর্ত না মানলে ইজারা বাতিলও হতে পারে।”
সিটি করপোরেশন হাট ইজারা দেওয়ার সময় অবশ্য প্রতি বছরই নানা শর্ত দিয়ে থাকে। কিন্তু এসব ভঙ্গ হলে ইজারা বাতিলের কোনো সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি।
ধুপখোলা মাঠে কোরবানির পশুর হাটে ঘুরতে এসে গরু পরখ করছেন এক তরুণ। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
এবার গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ৯টি হাটের ইজারা দিয়েছে। সারুলিয়ার স্থায়ী পশুর হাটসহ ১১টি ইজারা দিয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)।
মঙ্গলবার সকালে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত হাটে গিয়ে দেখা যায়, এরই মধ্যে ইজারাদাররা হাটের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। সারি সারি বাঁশ আর খুঁটি দিয়ে পশু বাঁধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকশ গরুও রয়েছে বাঁধা।
হাটে আসা সূত্রাপুরের ডাল পট্টি এলাকার বাসিন্দা বাদল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসা পাশেই, তাই গরু দেখতে আসলাম। এখন তো আর কেনা বেচা শুরু হয়নি, শুরু হলেই কিনে ফেলব।”
পুরান ঢাকার ধুপখোলা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির পশুর পাশাপাশি ক্রেতাদের উপস্থিতিও কম নয়। বিক্রি না হলেও অনেকেই দেখতে এসেছে।
কুড়িগ্রাম থেকে গরু নিয়ে আসা আফতাব উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৪টি মাঝারি আকারের গরু নিয়ে সকালেই নেমেছি। আমাদের গরু রাখব কোথায়, তাই হাটে আমাদের নির্ধারিত জায়গাতেই রেখেছি।”
গাবতলী হাটে গিয়ে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কোরবানির পশু আনা হয়েছে। কিছু কিছু পশু বিক্রিও হয়েছে বলে জানা গেল।
গাবতলী গরুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন জানান, “আমাদের এই হাটে ৭০ হাজার গরু রাখার ব্যবস্থা করেছি। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কোরবানির পশু এসেছে।”
দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, “কখন হাট প্রস্তুত করা যাবে আর কখন থেকে হাট বসানো যাবে, সেটি ইজারার শর্তে বলে দেওয়া হয়েছে।
“১৭ তারিখের পূর্বে কোনো কেনাবেচা হবে না। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অবৈধভাবে কোথাও হাঁট বসতেও দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
“আজকে বাংলামোটরের একটি স্থানে ২০-২৫টি গরু নিয়ে বসেছিল, আমরা উঠিয়ে দিয়েছি। আর খিলগাঁওয়ের একটি হাট অবৈধভাবে বসেছিল, আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত সেটা বন্ধ করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটির হাট
উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘের ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগ এলাকায় ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ সেকশন ১ ও ২-এর খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা এবং গোলাপবাগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মার্কেটের পেছনের খালি জায়গা।
ঢাকা উত্তর সিটির হাট
বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) ব্লক-ই, সেকশন-৩–এর খালি জায়গা, কাওলা শিয়ালডাঙ্গাসংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরখান মৈনারটেক শহীদ নগর হাউজিং (আবাসিক) প্রকল্পের খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদনগর) অস্থায়ী পশুর হাট, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কসংলগ্ন রাজধানী হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং ও বছিলা গার্ডেন সিটির খালি জায়গা এবং ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন ৩০০ ফুট সড়কসংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল লিমিটেড ও যমুনা হাউজিং কোম্পানি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন খালি জায়গায় পশুর হাট বসানো হবে।
সুত্র : বিডিনিউজ ২৪ ডট কম