বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম দীঘি ‘দুর্গাসাগর’। ২ হাজার ৫’শ হেক্টর আয়তনের দুর্গাসাগর দীঘিকে সাগর হিসেবে কল্পনা করা হলে মাঝখানের টিলাটি যেন একটি দ্বীপ। বাতাসের বেগ একটু বেশি হলেই দুর্গা সাগরে ঢেউ ওঠে। আর সেসব ছোট ছোট ঢেউয়ে ভেসে ওঠে পাড়ের বৃক্ষরাজির ছায়া। একটি বারের জন্য হলেও ঘুরে আসতে পারেন বরিশাল শহর থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে মাধবপাশায় অবস্থিত মনোমুগ্ধকর
সৌন্দর্যে ভরপুর দুর্গা সাগর। মৎস্য শিকারিরাও এখানে আসতে পারেন, বিশাল আকৃতির মাছ ধরার জন্য। বছরে বারদুই টিকেট কেটে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ রয়েছে এখানে। কথিত আছে সাগর ঘেঁষা প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপ বারবার বর্মি আর পূর্তগিজ জলদস্যুদের অবাধ লুন্ঠন ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় শ্রীনগর তথা
মাধবপাশায় চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করেন চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের পঞ্চদশ রাজা শিবনারায়ন। রাজবাড়ির কিছুই আজ অবশিষ্ট নেই। বেশ কিছু দীঘি থাকলেও তার অধিকাংশই আজ ভড়াট হয়ে গেছে। যাওবা রয়েছে তা এখন শুধু কালের সাক্ষী। রাজবংশের উত্তরসূরীরা বর্তমানে ভারতে বসবাস করছেন। শিব নারায়ণের স্ত্রী রানী দুর্গাবতী ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে বিশাল এ দীঘিটি খনন করান।তিনি ছিলেন বুদ্ধিমতী ও প্রজাবৎসল। প্রজাদের খাবার পানির কষ্ট লাঘবের জন্য তিনি এই দীঘি খনন করান।
তার নামেই এই দীঘিটি ‘দূর্গা সাগর’ নামে পরিচিত।জনশ্রুতি আছে রানী একবারে যতোটুকু হাটতে পারবেন দীঘি ততোটুকু কাটা হবে তিনি ৬১ কানি ভূমি হেটে যান। সাগর দিয়ে এর বিশালত্বকে বুঝানো হয়েছে। এত বড় দীঘি বরিশাল বিভাগে আর কোথাও নেই। এটি এখন পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষনীয় স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা এ দীঘির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। ২৩৩ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দীঘিটি সর্বশেষ ১৯৭৫ সনে দীঘিটি পুনঃখনন ও সংস্কার করা হয়। দুর্গা সাগর দেখতে আসা দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষন হচ্ছে মাঝখানের দ্বীপটির সৌন্দর্য।
তবে বর্তমানে ওই দ্বীপটি ঘন জঙ্গলে ছেয়ে গেছে। পাড় থেকে দ্বীপটিতে যাবার অনুমতি নেই।চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথীতে এখানে স্নান উৎসবের আয়োজন করা হয়,তার সাথে মেলাও বসে। বিশাল এক দীঘি, তার বুকে একটুকরো দ্বীপ। দীঘির চারপাশে সরু রাস্তা, মাঝে মধ্যে বসার জন্য বেঞ্চ, ঘন সবুজ বৃক্ষরাজি,পাখির কলকাকলি, মাতাল হাওয়া প্রকৃতি প্রেমীদের দেয় অনাবিল প্রশান্তি।