শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জাহিদুজ্জামান তানভীন স্বপ্ন দেখতেন দেশ ও বিদেশের আকাশে তার বানানো ড্রোন উড়বে। তবে তার স্বপ্ন পূরণের আগেই শহীদ হয়েছেন জুলাই বিপ্লবে। শেষবারের মতো তাকে বিদায়ও জানাতে পারেননি তার মা বিলকিস জামান।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তানভীনের মা বিলকিস জামান (৪৫)। তিনি জানান, গত ১৮ জুলাই দুপুরে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে পুলিশ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয় তানভীন। ঘটনাস্থলে শহীদ হয় সে। পুলিশের গুলি তার গলার পাশ ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। বুকে ছিল অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন। আমার ছেলে এভাবে চলে যাবে সেটা কখনও কল্পনাও করিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ঘুমিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে বাইরে গেল সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে। সেদিন আমি ব্যস্ত ছিলাম। ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই খাবার খেয়েছে। চেয়ারে বসে ভাবছিলাম টেবিলে এঁটো প্লেট-বাটি এলোমেলো হয়ে আছে। এগুলো গুছিয়ে নেই। এই ভেবে দরজা পর্যন্ত গেলাম না। তানভীন এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে দরজার সামনে এগিয়ে সালাম দিয়ে বের হয়ে গেল। অন্যদিনের মতো বিদায় জানানো হয়নি তানভীনকে। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস। প্রতিদিন তার সালামের উত্তর দিয়ে তিন কুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়ে মাথায় ফুঁ দিয়ে সদর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতাম।
তানভীনের ছোটবেলা থেকে এই-ই হয়ে আসছিল। দীর্ঘদিনের এই চর্চার ব্যত্যয় ঘটে গেল কেবল ১৮ জুলাই। সালাম দেওয়ার পর সালামের উত্তর দিয়েছি শুধু। এতটুকুই আমার ছেলের সঙ্গে শেষ কথা। এ যাওয়াই যে শেষ যাওয়া হবে তা তো আমি বুঝিনি। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’