বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি : ইলিয়াস খান

মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি : ইলিয়াস খান

আমাদের দেশে প্রতিটি সরকারের শাসনকালে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। তবে কোনো কোনো সরকারের ক্ষেত্রে সেটা ছিল সাময়িক। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ রকম পরিস্থিতি দেখা দিতেই পারে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিয়েছে সেটা বিবেচনা করতে হবে। একটি গণ-অভ্যুত্থান শেষে যখন নতুন কোনো সরকার হয়, সেই পরিস্থিতিতে দেশকে অল্প সময়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে নিয়ে আসা অত্যন্ত দুরূহ। এর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের অসহযোগিতা। যাদের দায়িত্ব দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার, সেই তারাই যখন অধিকাংশ অসহযোগিতা করে, তখন আর কোনো উপায় থাকে না। তারপরও সরকার বসে নেই। পুলিশের শক্তিবল বাড়ানোর আন্তরিক চেষ্টা করছে। ঠিক এমনি এক মুহূর্তে কোনো কোনো জায়গায় ছিনতাই, ডাকাতি, খুন হচ্ছে। একদিকে সাংগঠনিকভাবে বৃহৎ পরাজিত দল আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে পুলিশের দলবদ্ধ অনুপস্থিতি। এই দুইয়ের অনুপস্থিতির সুযোগে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সুযোগ সন্ধানীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করছে যদিও শেষ পর্যন্ত অপরাধীরা সফল হবে না।

যারা সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দিহান, তাদের বলি পরাজিত দলের অসংখ্য নেতাকর্মী দেশেই রয়েছেন। রাজপথে না থাকলেও,  মনে করার কোনো কারণ নেই যে, তারা চুপ করে আছেন। আন্দোলনের চিরাচরিত ধারা থেকে বের হয়ে, এখন সেই পরাজিত রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী নানান ধরনের সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। যার সর্বশেষ পদক্ষেপ আইনশৃঙ্খলার অবনতির চেষ্টা। যদিও বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। এবারও তাই-ই হবে। একটা বিষয় লক্ষণীয়, তারা কিন্তু প্রকাশ্যে রাজপথে কোনো কর্মকান্ড চালানোর সাহস পাচ্ছেন না। যে কারণে বিভিন্ন ঘটনার পর এখন আইনশৃঙ্খলায় অস্থিরতা নিয়ে আসার চেষ্টা। এখানে একটি বিষয় চলেই আসে। তা হচ্ছে, সরকারের তাহলে দায়িত্ব কী? সরকার কোনোভাবেই চাইবে না, জনগণের স্বাভাবিক জীবনে কোনো আতঙ্কজনক পরিবেশের সৃষ্টি হোক। ফলে সর্বোচ্চ আন্তÍরিকতা দিয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তার অর্থ এই নয় যে, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। যে ঘটনাগুলো ঘটছে, খুবই দ্রুত সেই রকম ঘটনার আর কোনো পুনরাবৃত্তি হবে না। তবে এর জন্য কিছুটা হলেও সময় দিতে হবে। অযথাই যদি আমরা সরকারকে এই বিষয়ে ব্যতিব্যস্ত রাখি, তাহলে কিন্তু বৃহৎ অর্থে ক্ষতি হবে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিরই। সেই বিষয়টা যেন আমরা মনে রাখি। ফলে এই মুহূর্তে আমি কোনোভাবেই উপসংহারে যেতে পারি না যে, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে! মোটেও কিন্তু তা নয়। যে কোনো বিষয় গভীর পর্যবেক্ষণ করে, মূল্যায়নের জন্য সময় নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে যাওয়া দরকার।

এই দেশটা সবার। দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে অবশ্যই গণতান্ত্রিক শক্তিতে বিশ্বাসী মানুষ কোনো সামাজিক অস্থিরতা নতুন করে মেনে নেবে না। ফলে আমাদের এমন কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক হবে না, যাতে পতিত স্বৈরাচারী শক্তি আবার সামাজিক অস্থিরতার সুযোগে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পায়। এই অসচেতনতা বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা কিন্তু ভয়াবহ আইনি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আমি মনে করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সমস্ত মানুষ এই সিদ্ধান্তে একমত হবে যে, বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করে সমাজের সব কাঠামো ঠিক রেখে নির্বাচনের পথে যাওয়াই আমাদের মূল কর্তব্য হওয়া উচিত। ফলে সাময়িক কোনো ধরনের সামাজিক অস্থিরতা হলে, তা সম্মিলিতভাবেই সমাধানের পথ খোঁজা দরকার। এর জন্য প্রয়োজন হলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে বৈঠক করে অন্তর্বর্তী সরকার সময়োপযোগী স্থিতিশীল একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো প্রস্তাব যদি সরকারের জন্য মঙ্গলজনক হয়, তাহলে দেরি না করে সেই প্রস্তাবের প্রয়োগ দরকার। তখন দেখা যাবে, আর কোনো অস্থিরতা থাকবে না। অপরাধীরা সবসময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। তারা এবার একটা বড় ধরনের সুযোগ পেয়েছে। ফলে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েই যাচ্ছে। মনে করার কোনো কারণ নেই যে, এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক ইন্ধন নেই! সেই রাজনৈতিক অপশক্তি আবার ভিন্ন কৌশলে অগ্রসর হতে চাচ্ছে। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হবে। তবু তারা একের পর এক কামড় দিয়েই যাচ্ছে। ক্ষমতার লোভই তাদের বাস্তব পরিস্থিতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।  তারা কোনোভাবেই বোঝার চেষ্টা করছে না, এভাবে কিছুই হবে না। আসলে ক্ষমতার শোক কাটিয়ে উঠতে পারছে না পূর্বের ক্ষমতাসীনরা । ফলে যখন যেভাবে পারছে, অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সার্থক হতে পারছে না। এখনো তারা স্বপ্ন দেখে, আবার ক্ষমতায় যাওয়ার। আবার সেই স্বেচ্ছাচারিতা। আবার লুটপাট। একটা বিষয় বোধগম্য নয়, যদি দেশের অধিকাংশ জনগণ আপনাদেরই ক্ষমতায় দেখতে চাইত, তাহলে গণ-অভ্যুত্থান হলো কার বিরুদ্ধে? অচিরেই দেখা যাবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এবারও তাদের অপকৌশল ব্যর্থ হতে বাধ্য।

আমরা জানি,  অপরাধ দমনে সেনাবাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ফলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের যেসব জায়গায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে, তা অল্প সময়ের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আসবে। কেন আমরা ভুলে যাচ্ছি দেশে পুরোপুরি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নেই, টহল পুলিশ নেই, হাইওয়ে পুলিশ নেই, থানা পুলিশ নেই এই সুযোগে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, পরাজিত শক্তির ইন্ধন। ফলে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে যখন একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি সরকার পরিচালনা করবে, তখন দেখা যাবে আইনশৃঙ্খলা যতটুকু এখনো অস্থির রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। যে কারণে বলছি বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখনো মূল্যায়নের সময় আসেনি। যদিও যে সমস্ত চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন বা অন্যান্য বেআইনি কাজ হচ্ছে তা ওই যে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি সরকারে না থাকার কারণেই। কারণ প্রশাসনের বাইরে এই মুহূর্তে অপরাধীদের প্রতিরোধ করার মতো কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে অনুপস্থিত। পুরোপুরিভাবে তারা নির্ভর করছে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ, বিজিবি, আনসারের ওপর। ফলে সাময়িকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এটা একেবারেই সাময়িক। অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে এটা ঠিক যে, গণ-অভ্যুত্থানে পরাজিত রাজনৈতিক দল পুরোপুরিভাবে আইনশৃঙ্খলা অবনতির জন্য দায়ী নয়। অনেক সুযোগ সন্ধানী অপরাধীও রয়েছে। যারা কোনো সরকার বোঝে না। অন্যদিকে পুলিশও সরকারকে পূর্ণাঙ্গ  সহযোগিতা করছে না। কিন্তু এই পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না। অচিরেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে। জনমনে ফিরে আসবে স্বস্তি। যে কারণে বলছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি। কারণ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি যখন সরকার পরিচালনা করবে, তখন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি আমূল পাল্টে যাবে। দেশ ফিরে আসবে কঠিন শৃঙ্খলার মধ্যে।

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাতীয় প্রেস ক্লাব

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০