বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

বিপরীত স্রোতে সরকার

বিপরীত স্রোতে সরকার

গঠিত হওয়ার পর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার বিপরীত স্রোতে সাঁতার কেটে চলেছে। সেই স্রোত কখনো কখনো প্রবল হয়ে উঠছে। যেমন সর্বশেষ ‘প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ’ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বক্তব্য কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন সরব হয়ে ওঠে। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান। ওই রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি জানান, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, তার কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।’ রাষ্ট্রপতির এ বক্তব্যের পর তার অপসারণ দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভের ডাক দেয় এবং বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। বিএনপি বর্তমান মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে ‘সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক’ সংকটের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি গত ২৩ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে দলের এ অবস্থানের কথা জানিয়ে দেয়। গত শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে। পরে আন্দোলনের নেতারা সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির দলীয় ফোরামে আলোচনা করে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাবে। তবে ছাত্র সমন্বয়করা বলেন, তারা রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে ঐক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছেন। রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিয়ে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার সব কাজ করা উচিত।’ এদিকে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ভিন্ন। দলটি মনে করে, পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। মো. সাহাবুদ্দিনকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে নতুন কাউকে খুঁজতে সরকারের প্রতিনিধিরা নানামুখী তৎপরতা চালায়। প্রধান বিচারপতিকে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি এতে সম্মত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন এ যাত্রায় অথবা অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবেন কি না, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

গত ৫ আগস্ট এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একের পর এক বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করে চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন ইস্যু সরকারের সামনে চলে আসছে। দাবিদাওয়া নিয়ে মাঝেমধ্যেই পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারে অথবা অন্য কোনো ব্যানারে শাহবাগে অবস্থান নেওয়া হচ্ছে। এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করা একদল শিক্ষার্থী ২৩ অক্টোবর সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করেন। পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে ৫৩ শিক্ষার্থীকে আটক করে। পরদিন সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলার মামলায় ২৬ শিক্ষার্থীকে আদালতের আদেশে কারাগারে পাঠানো হয়। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি চাকরিবিধি সংস্কারসহ দুই দফা দাবিতে ১৭ অক্টোবর বিভিন্ন জেলায় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করে অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এত ভোগান্তিতে পড়েন দুই কোটি গ্রাহক। আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া কয়েক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে ১৯ অক্টোবর শাহবাগ মোড়ে অবরোধ করে আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ। ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে ওইসব কলেজের শিক্ষার্থীরাও কর্মসূচি পালন করেছে। তারা এ বিষয়ে সরকারকে আলটিমেটামও দিয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দাবিদাওয়া আদায়ের হিড়িক চলছে। এ প্রসঙ্গে আগের কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। আনসারদের একটি অংশের সচিবালয় ঘেরাও, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা, আশুলিয়া-গাজীপুরে গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ-অস্থিরতা ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যায়। বাংলাদেশ যেন রাতারাতি ‘সব পেয়েছির দেশে’ পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি রাজধানীতে এক সেমিনারে বলেন, ধান কাটার মৌসুমের মতো এখন দাবি দেওয়ার মৌসুম চলছে।

অথচ অন্তর্বর্তী সরকারকে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যেমন—আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা, নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি। আর একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে—সংস্কার কমিশনসমূহের সুপারিশের কাজ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শেষ করতে পারা। নির্বাচন কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের আলোকে (যে সুপারিশে রাজনৈতিক দলসমূহ ও বিভিন্ন অংশীজনের সম্মতি থাকবে) একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করাই হবে প্রফেসর ইউনূসের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করে যাওয়ার চেয়ে সরকারকে অন্য অনেক উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। পুলিশ বাহিনী এখনো পুরোপুরি সক্রিয় নয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৮৭ জন কর্মকর্তা আজ অবধি কাজে যোগ দেননি। যাদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। গত ১৯ অক্টোবর রাজশাহীতে উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশ পুরোপুরি কাজে যোগদান করতে পারছে না। তবে ৫ আগস্টের পর যে অবস্থা ছিল, তা থেকে উত্তরণ ঘটেছে।’ এদিকে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত পুলিশের ২৫২ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) সরকার অব্যাহতি দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে নানা কারণে আরও ১৯ জনের চাকরি গেছে। ৬৬ জন এসপির প্রাক-পরিচিতি আবার যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

এইতো গেল পুলিশ বাহিনীকে পুরোপুরি সক্রিয় করতে অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী তৎপরতা। এদিকে নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও সুফল মিলছে কম। যেমন ভোজ্যতেল ও চিনির দাম কমাতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। তারপরও পণ্য দুটির দাম তো কমেনি, বরং বেড়েছে। চালের দামও বাড়তি, পেঁয়াজের দামও কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে, তবে ডিম ও সবজির দাম কিছুটা কমেছে। বাজার কবে স্থিতিশীল হবে এ প্রশ্নের জবাব সরকারও সম্ভবত দিতে পারবে না। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে সরকারকে বৈরী স্রোত ঠেলেই চলতে হবে। এদিকে আশুলিয়া-গাজীপুরে গার্মেন্টস শিল্প এলাকা যেন সরকারের জন্য এক ধরনের স্থায়ী সমস্যা হয়ে বিরাজ করছে। বিজিএমইএ, সংশ্লিষ্ট খাতের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ উদ্যোগ এবং দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ওই শিল্প এলাকায় কর্মপরিবেশ ফিরে এলেও কোনো কোনো কারখানায় মাঝেমধ্যে শ্রমিক বিক্ষোভ হচ্ছে। এসব কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করলে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয় যানবাহন যাত্রীদের। সম্প্রতি বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছে, দুই মাস শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় এ শিল্পে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাঁদাবাজি ও ঝুট সমস্যা এখনো বড় সমস্যা হয়ে আছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে আহত, হাত-পা হারানো, চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া ছাত্র-জনতার সুচিকিৎসা একটি বড় ইস্যু। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের অনেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য আর্তনাদ করছেন।

সব চলমান সমস্যার পাশাপাশি ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে যাওয়া, বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় রেখে যাওয়া—এর অবসান ঘটাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ করতে হবে। সরকার গঠিত প্রথম পর্যায়ের ছয়টি সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে তাদের কাজ শুরু করেছে। পরবর্তী সময়ে আরও চারটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে সংবিধান পুনর্লিখন নাকি সংশোধন করা হবে, এ নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও অংশীদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সংবিধান সংস্কারপ্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ এর আগে দেওয়া বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘সংবিধান পুনর্লিখন করতে হবে।’ অন্যদিকে ১৯ অক্টোবর এক সেমিনারে শেখ হাসিনার সরকারের ইচ্ছামতো সংশোধন হওয়ার সংবিধান পুনর্লিখন না করে সংশোধন করার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজন। সেমিনারে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেন, ‘সংবিধানে এরই মধ্যে যেগুলো স্বীকৃত বা মীমাংসিত বিষয় এগুলোতে মনে হয় হাত দেওয়া ঠিক হবে না। এগুলো বিদ্যমান রেখে এখান থেকে শুরু করতে হবে।’ ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘একটি বক্তব্যে এসেছে আমরা কি নতুনভাবে সংবিধান লিখব নাকি আগেরটা সংশোধন করব, আগেরটা সংশোধন করাই বাঞ্ছনীয়। কেননা আগেরটার মধ্যে অনেক মূল্যবান বক্তব্য আছে।’ এদিকে ২৪ অক্টোবর এক আলোচনা সভায় ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘একাত্তরের সংবিধান এখন অপ্রাসঙ্গিক। গত সাড়ে ১৫ বছরে তিনটি নির্বাচন এ সংবিধানের দোহাই দিয়ে হয়েছে। এখন কেন আন্দোলনকারীদের এই সংবিধানের ধারাবাহিকতা বহন করতে হবে?’

সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে পুনর্লিখন নাকি সংশোধন, এ নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক, যাই বলি না কেন, যখন চলছে তখন নির্বাচনের সময়সীমা নিয়েও চলছে নানামুখী বক্তব্য। এ নিয়েও মাঝেমধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস যখন (সেপ্টেম্বর মাসে) নিউইয়র্কে, তখন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একটি সাক্ষাৎকার গুরুত্ব দিয়ে সংবাদপত্র ছাপা হয়। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এ সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, ‘আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হতে পারে সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে এ সরকারের প্রতি পরিপূর্ণ সমর্থন থাকবে। সংস্কারের ধারাবাহিকতায় এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটা উচিত।’ সেনাপ্রধানের এ বক্তব্য সরকারের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা সরকারের মতামত নয়। এ পর্যন্ত সরকার কোনো মত দেয়নি। কাজেই কখন মেয়াদ ঠিক হবে সেটা সরকারই বলবে। আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন, তখন সেটাই হবে তারিখ।’ সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে দেওয়া বক্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় আগামী বছরের (২০২৫) মধ্যে নির্বাচন করা হয়তো সম্ভব হতে পারে।’ তার এ বক্তব্য নিয়ে পরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক ব্যাখ্যায় আইন উপদেষ্টা বলেন, “নির্বাচন হয়তো আগামী এক বছরের মধ্যে হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে। সেখানে (টিভি আলোচনায়) এসব ফ্যাক্টর পুরোপুরি ব্যাখ্যা করার সুযোগ পাইনি। আমাদের সরকারের কথা থেকে সবাই বুঝবেন যে সংস্কার ও রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বলা হয়েছে। এগুলোই সেই ফ্যাক্টর। নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘পলিসি ডিসিশন’। প্রধান উপদেষ্টাই একমাত্র নির্বাচন ঘোষণার এখতিয়ার রাখেন।”

কবে জাতীয় নির্বাচন এ প্রশ্ন রাজনীতির ময়দানে ঘুরেফিরেই উচ্চারিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় ইস্যু নির্বাচন। ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে হাজির হচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচন। ২০১৪ সালে ১৫৩ আসনে বিনা ভোটে প্রার্থীদের জয়ী হওয়া, ২০১৮ সালে রাতের ভোট এবং ২০২৪-এর আমি-ডামি নির্বাচনের পর ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতন সেই ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি করে। তবে নির্বাচনের দিন-তারিখ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর যেমন ভিন্ন অবস্থান রয়েছে, তেমনি উপদেষ্টাদের কারও কারও বক্তব্য এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করছে। নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপরীত স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটতে হচ্ছে। নির্বাচনের সময়সীমা প্রকাশে সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলের এক ধরনের চাপ রয়েছে। সময়সীমা নিয়ে রয়েছে তাদের ভিন্ন অবস্থান। বিএনপি প্রথম দিকে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের কথা বললেও সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। বিএনপি বর্তমানে নির্বাচনের জন্য যতখানি প্রয়োজন ততখানি সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছে। এ প্রসঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্য হচ্ছে—‘সংস্কার অনেক প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া এবং সময়সাপেক্ষ। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। জনগণের সঙ্গে সংস্কার কাজ করলে সেটি সহজ হবে।’ অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচন ও সংস্কারের জন্য আলাদা দুটি রোডম্যাপ ঘোষণার কথা বলা হয়েছে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ‘যতখানি দরকার ততখানি সংস্কার’ করে নির্বাচনের পক্ষে মত দিচ্ছে। এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ভিন্নমত ভবিষ্যতে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

দেশের বিদ্যমান অবস্থা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সংস্কার ও নির্বাচন আয়োজনে কতটা অন্তর্বর্তী সরকার কতটা কৌশলী ভূমিকা রাখবে—সেদিকে দেশবাসীর দৃষ্টি থাকবে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন, কাজের ব্যাপ্তি ও অঙ্গীকারের বিরাট ব্যবধান রয়েছে। ১৯৯০ সালের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের অভ্যুত্থানে। দাবি ওঠে ফ্যাসিবাদী শাসন যাতে আবার মাথাচাড়া না দেয়, সেজন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের। নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার, সংবিধান সংস্কার, বিচার বিভাগ সংস্কারসহ বিভিন্ন সংস্কারের সুপারিশমালা তৈরি এবং শেষ অবধি নির্বাচন আয়োজন করা—এ যেন এক উত্তাল সাগরে সাঁতার কেটে তীরে পৌঁছানো। এর সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন ইস্যু। অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন সেই বিপরীত স্রোতেই সাঁতার কাটতে হচ্ছে।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০৩১