বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

সমাজ থেকে আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে না: বৃদ্ধি পাচ্ছে তরুণদের আত্মহত্যার প্রবণতা….

সমাজ থেকে আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে না: বৃদ্ধি পাচ্ছে তরুণদের আত্মহত্যার প্রবণতা

আমাদের সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। আর কোনো একটা সমাজ যখন এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় তখন সমাজের ভেতরে এক ধরনের ভাঙন দেখতে পাওয়া যায়। সেই ভাঙনটাই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে আমাদের সমাজে। সারা পৃথিবীতেই এখন এক ধরনের সংকটকালীন সময় অতিবাহিত হচ্ছে। একেক দেশের সংকট একেক ধরনের। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশের যাত্রাপথে রয়েছি। সমাজে ব্যাপকভাবে পুঁজির বিকাশ ঘটছে। পুঁজিবাদের রূপটা আস্তে আস্তে বিকাশমান হচ্ছে। আমাদের সমাজে আগে থেকে কোনো স্পষ্ট মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ নেই। ফলে পুঁজির যাত্রাটা ম্যানেজ করা যাচ্ছে না। পুঁজির বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিস্তার ঘটছে। আমরা দ্রুত শিল্পায়ন এবং দ্রুত নগরায়ণের চেষ্টা করছি। কিন্তু এর সাথে সাথে যে সাংস্কৃতিক যাত্রা দরকার সেটা ঘটছে না। মানুষের জীবন ব্যবস্থা, পরিবার, সমাজ, নিজের আর্থিক উন্নয়ন এসব বিষয়ে আমরা নজর দিতে পারিনি বা সময় দিইনি।

দেশে সুশাসনের অভাব রয়েছে এবং সমবণ্টন প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। পুঁজিপতি ব্যবসায়ী শ্রেণি এমনভাবে ব্যবসা করতে চাচ্ছে যাতে শুধু সেই লাভবান হয়। সমাজের কতটুকু কল্যাণ হচ্ছে, বা আদৌ হচ্ছে কিনা সেটা তাদের চিন্তার বিষয় নয়। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে সমাজের সব মানুষ বিশেষ করে তরুণরা বেশি হতাশার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

তরুণরা স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছে তাদের পিতা-মাতারা যে রাষ্ট্র স্বাধীন করেছেন এবং যে রাষ্ট্র তারা তৈরি করেছেন সেই রাষ্ট্রই তাদের পক্ষে নয়। রাষ্ট্র তাদের পক্ষে কোনো কাজ করছে না। তরুণরা দেখছে তাদের কোনো প্রোডাক্টিভিটি নেই, নেই তাদের কোনো ট্রেনিং। তরুণরা এমন কোনো সাবজেক্টে পড়তে পারছে না যেখান থেকে পাশ করে বের হয়ে সে তার প্রোডাক্টিভিটি দেখাতে পারবে। এমন কোনো পন্থা তার সামনে নেই যেখান থেকে সে একটা মোটামুটি নিশ্চিত জীবন কাটাতে পারবে। এভাবে তরুণরা হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছে।

রাষ্ট্রের বেশিরভাগ সুবিধা এবং অর্থ ভোগ করছে রাষ্ট্রের ৫ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ। বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে স্ট্রাগল করছেন। বেকারত্ব, দ্রব্যের উচ্চমূল্য, অর্থনৈতিক সংকট, সুশাসনের অভাব সবকিছুই প্রভাব ফেলছে তরুণদের মানসিকতার ওপর। বিশ্বায়নের চাপ, দ্রুত নগরায়ণের চাপ, দ্রুত শিল্পায়নের চাপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মারাত্মক ব্যবহার এসব কিছুই তরুণদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিশ্বায়নের ফলে তরুণরা পৃথিবীর সম্পর্কে অনেক বেশি জানছে এবং তরুণদের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেই চাহিদার সঙ্গে তাদের পাওয়াটা মিলছে না। এই বিষয়টাই তাকে সব থেকে বেশি হতাশার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। এই হতাশা থেকে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

চারটি কারণে একজন মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে। এই চারটি কারণের প্রথমটি হলো ‘এনোমি’। অর্থাৎ নৈরাজ্যজনক অবস্থা। সুতরাং সে রকম একটি নৈরাজ্যজনক অবস্থা যদি রাষ্ট্রের ভেতরে দেখা যায় তাহলে তার প্রভাবে মানুষের মনের ভেতরেও নৈরাজ্য দেখা দেয়। এই এনোমি দেখা দিলে একজন মানুষ সমাজের কাছে আসলে কি চায় সেটা স্পষ্ট করে বুঝতে পারে না। আবার সমাজ তার কাছে কি চায় সেটাও সে ভালো করে বুঝতে পারে না। এভাবে সমাজ এবং ব্যক্তির চাওয়া-পাওয়ার হিসাবটা যখন অস্পষ্ট থাকে তখন মনের ভেতরে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি যে কোনো সময় আত্মহত্যা করতে পারে।

মানুষের মানসিক বৈকল্য বা মানসিক অবস্থাটা মূলত তৈরি হয় সমাজ বা রাষ্ট্রের ভেতরে এবং সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রভাবে। এই সমাজ বা রাষ্ট্রই মানুষকে পরিচালিত করে। তরুণদের এই হতাশাচ্ছন্ন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একটিই পথ, আর সেই পথ হলো- গণতন্ত্র এবং সুশাসন।

আমাদের সমাজে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব দরকার। সাংস্কৃতিক বিপ্লব করতে হবে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে। দরকার সাংস্কৃতিক অগ্রগতি। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশব্যাপী পরিকল্পনা করে একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ায় সামনে এগোতে হবে। দেশের প্রায় চার কোটি তরুণ-তরুণী কোনো কাজের মধ্যে নেই এমনকি লেখাপড়ার মধ্যেও নেই। তাদেরকে কীভাবে সক্রিয় করা যায় সেই পরিকল্পনাটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানব উন্নয়ন প্রজেক্টটাকে সবচেয়ে বড় মেগা প্রজেক্ট হিসেবে ধরে যদি এগুনো যায় তাহলে আগামী ১০ বা ১৫ বছর পর বাংলাদেশ এর সুফল দেখতে পাবে।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০