বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিকিৎকদের এক গ্রুপের ওপর আরেক গ্রুপের হামলার ঘটনা ঘটেছে। অধিদপ্তরে সদ্য নিয়োগ পাওয়া পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবু হানিফসহ অন্যান্যদের যোগদানে বাধা দিতেই চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এই হামলা চালিছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) অধিদপ্তরে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ) ও বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন আহত হন। আহতরা হলেন— বিএসএমএমইউর নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ইমরান হোসাইন এবং অন্য দু’জন হলেন— শাহরিয়ার ও যোবায়ের।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করে বর্তমান নতুন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন করে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এতে পরিচালক পদে নিয়োগ পান ডা. আবু হানিফ। সকালে যোগদান করার জন্য অধিদপ্তরের আসেন তিনিসহ অন্যান্যরা।
এ সময় অধিদপ্তরে অবস্থান নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সচল রাখতে বর্তমান নিয়োগপ্রাপ্তদের কাজের পথ সুগম করার দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকরা। এর পরই রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে ড্যাবের চিকিৎসকরা বহিরাগতদের নিয়ে অধিদপ্তরে অবস্থান করেন এবং চিকিৎসকদের ওপর হামলা করেন। এতে ডা. ইমরানসহ তিনজন আহত হন।ডা. আবু হানিফ রোববার (২০ অক্টোবর) যোগদান করতে আসলে ড্যাবের চিকিৎসকরা বাধা প্রদান করেন। পরে তিনি আজ সোমবার যোগদান করার জন্য অধিদপ্তরে আসেন। এ সময় আবারও তাকে যোগদানে বাধা প্রদান করে ড্যাব। ড্যাবের সদস্যরা পরিচালককে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে আখ্যা দেয়। চিকিৎসকদের অভিযোগ, নিজ দলের না হলেই ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিচ্ছে বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব।
এদিকে, চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তৎক্ষণাৎ অধিদপ্তরে বিক্ষোভ করে চিকিৎসকদের আরেক সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। সংগঠনটির অভিযোগ, ড্যাবের সাথে থাকা বহিরাগত সন্ত্রাসীরা রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে তিনজন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, নতুন যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদেরকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে আখ্যা প্রদান করেন ড্যাবের চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে তাদের যোগদানে বাধা প্রদান করেন। প্রকৃতপক্ষে নিয়োগপ্রাপ্তরা কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের নন। নিজেদের স্বার্থে ড্যাব এসব চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী সরকারের সময়ে পিঠ বাঁচিয়ে চলা সংগঠনের নেতারা এখন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চরমভাবে ‘চেয়ার দখলের যুদ্ধ’ শুরু করেছে বলেও অভিযোগ করেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, আপাদমস্তক নিজেদের সমর্থক ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসকের নিয়োগ মানতে পারছে না সংগঠনটি। স্বাস্থ্য প্রশাসনে একক ‘আধিপত্য’ বিস্তার করতেই তাদের এমন মনোভাব।
এ বিষয়ে ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন অর রশিদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এর আগে, রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে দিনব্যাপী বিক্ষোভ-সমাবেশে করে ড্যাব। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এবিএম আবু হানিফসহ লাইন ডিরেক্টরদের ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে তাদের অপসারণ দাবি করেন তারা।
গত ২০ আগস্ট স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সামনে নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের শান্ত থাকার আহ্বানও উপেক্ষা করেন তারা। তখন তাদের সামনে একজন চিকিৎসককে টেবিলের ওপর উঠতে দেখা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ পাওয়া ভিন্ন মতের চিকিৎসকদের অপসারণে আন্দোলনে নেমেছে ড্যাব।
আন্দোলনে আগ্রহী নয় জানিয়ে দ্রুত তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ড্যাবের চিকিৎসকরা। ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা নিরসনে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেওয়ারও আহ্বান জানান তারা।