শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

সবজির সরবরাহ কম, দাম বাড়ে হাতবদলে…

সবজির সরবরাহ কম, দাম বাড়ে হাতবদলে

কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সবজির চড়া দামের কারণ সরবরাহ ঘাটতি ও বারবার হাতবদল। উৎপাদন পর্যায়েই এখন সবজির দাম বেশি। ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে সেই দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়।কৃষক, পাইকারি বিক্রেতা, আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সরবরাহব্যবস্থায় কীভাবে দাম বাড়ে, তা দেখতে প্রথম আলোর দুজন প্রতিবেদক যশোর ও বগুড়া থেকে সবজিবাহী দুটি ট্রাকে করে রাজধানীর আড়ত পর্যন্ত এসেছেন।এদিকে গতকাল সোমবার রাজধানীর দুটি পাইকারি ও তিনটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কয়েক দফা হাতবদলে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কেজিতে সর্বনিম্ন ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে গতকাল প্রতি কেজি বরবটির দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। একই দিন তা মিরপুরের শেওড়াপাড়া ও মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে খুচরায় বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়।সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার দফা হাতবদলে দু-তিনজন মধ্যস্বত্বভোগী যুক্ত হন। প্রতি ধাপে দুই থেকে আট টাকা বা তার বেশিও দাম বাড়ে। যেমন গতকাল যাত্রাবাড়ীর একটি আড়তে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। তিন ঘণ্টার ব্যবধানে সেখানেই তা দুই হাত বদলের পরে ১০০ টাকায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি হয়।জানা যায়, উৎপাদন এলাকার মোকাম থেকে রাজধানীতে পণ্য আসার পরও কয়েক দফা হাতবদল হয়। পাইকারি থেকে অন্তত চারবার হাত বদল হয়ে তা ভোক্তার কাছে পৌঁছায়। যেমন ট্রাক থেকে প্রথমে পণ্য যায় আড়তে, সেখানে থেকে পণ্য কেনেন পাইকার বা ফড়িয়ারা। পরে ফড়িয়াদের কাছ থেকে বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন।সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার দফা হাতবদলে দু-তিনজন মধ্যস্বত্বভোগী যুক্ত হন। প্রতি ধাপে দুই থেকে আট টাকা বা তার বেশিও দাম বাড়ে। যেমন গতকাল যাত্রাবাড়ীর একটি আড়তে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। তিন ঘণ্টার ব্যবধানে সেখানেই তা দুই হাত বদলের পরে ১০০ টাকায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি হয়।এদিকে গত শনিবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কারওয়ান বাজারে সবজির ট্রাক আসে রাত ১২টার দিকে। এরপর ট্রাক থেকে সবজি ছয়–সাতবার হাতবদল হয়ে তা খুচরা বিক্রির পর্যায়ে পৌঁছায়।সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল ভোররাতে কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪০০ টাকায়। সেই কাঁচা মরিচ মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে খুচরায় বিক্রি হয় ৬০০ টাকায়। একইভাবে পাইকারি বাজারের ৬৪ টাকার করলা খুচরায় ১০০-১২০ টাকা ও ৪৫-৫০ টাকার মুলা খুচরায় ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়।যাত্রাবাড়ীর পাইকারি বিক্রেতা শেখ মাসুদ বলেন, গত দুই মাসে টানা বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বিভিন্ন সবজির উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। তাতে কৃষক পর্যায়েই সবজির দাম বেড়েছে। এ কারণে তাঁরাও আগের তুলনায় বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন।এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজার পরিদর্শন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সবজি, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম এখন বাড়তি। মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে আমরাও সন্তুষ্ট নই। আমরা চেষ্টা করছি যতটুকু সম্ভব ভোক্তাদের কষ্টটা লাঘবের। বাজারে সবজির সরবরাহে সংকট রয়েছে। বন্যায় অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে। এখন উৎপাদন ও সরবরাহ কম থাকলে যতই বাজার তদারকি করা হোক, দাম খুব কমিয়ে আনা যায় না।’সাংবাদিকের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল ভোররাতে কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪০০ টাকায়। সেই কাঁচা মরিচ মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে খুচরায় বিক্রি হয় ৬০০ টাকায়। একইভাবে পাইকারি বাজারের ৬৪ টাকার করলা খুচরায় ১০০-১২০ টাকা ও ৪৫-৫০ টাকার মুলা খুচরায় ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়।

গত রোববার মহাস্থান হাটে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ একজন কৃষক বিক্রি করেছেন ৩৭০ টাকায়। সেই মরিচ ট্রাকে করে কারওয়ান বাজার আসার পরে ওই রাতেই পাইকারিতে বিক্রি হয় ৫০০ টাকা দরে। এই দুই দফা হাতবদলে দাম বাড়ে ১৩০ টাকা। একইভাবে মহাস্থান হাটের ৬০ টাকার প্রতি কেজি করলা কারওয়ান বাজার আড়তে বিক্রি হয় ৮০ টাকায়, ৭৫ টাকার বেগুন ৯০ টাকা, ৬০ টাকার শসা ও কাঁকরোল ৭৫ টাকা, ৫০ টাকার মুলা ৬৫ টাকা, ৭৫ টাকার ঢ্যাঁড়স ৯০ টাকা আর ৪০ টাকার বরবটি ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। এই সবজি ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হয় আরও বেশি দরে।

মহাস্থান হাট থেকে কারওয়ান বাজারের উদ্দেশে রওনা হওয়া সবজির ট্রাকে ছিল ঢ্যাঁড়স, পেঁপে, বরবটি, শসাসহ ১৩ টন সবজি। রাত দেড়টায় ট্রাকটি কারওয়ান বাজারে এসে পৌঁছায়। ট্রাকচালক, সহযোগীসহ পণ্য পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে মহাস্থান হাট থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত পথে পথে গড়ে প্রতি ট্রাকে এক হাজার টাকা চাঁদা দিতে হতো। এর বাইরে দিতে হতো পুলিশের মাসিক টোকেন বাবদ চাঁদা। এই ট্রাকে পথে পথে চাঁদা আদায়ের কোনো ঘটনা পাওয়া যায়নি।সবজি, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম এখন বাড়তি। মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে আমরাও সন্তুষ্ট নই। আমরা চেষ্টা করছি যতটুকু সম্ভব ভোক্তাদের কষ্টটা লাঘবের। বাজারে সবজির সরবরাহে সংকট রয়েছে। বন্যায় অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে। এখন উৎপাদন ও সরবরাহ কম থাকলে যতই বাজার তদারকি করা হোক, দাম খুব কমিয়ে আনা যায় না।বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদট্রাকচালক আলম হোসেন ও সহকারী হৃদয় মিঞা জানান, আগে বগুড়া জেলার মধ্যে শহরের চারমাথা ভবের বাজার, শাজাহানপুর, শেরপুর, চান্দাইকোনা, কড্ডার মোড় এলাকায় কয়েক দফা চাঁদা দিতে হতো পুলিশসহ বিভিন্ন পক্ষকে। এ ছাড়া চাঁদা দিতে হতো বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজা, টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, কালিয়াকৈর, সাভার, আমিনবাজার এলাকায়ও।মহাস্থান হাট থেকে ৯ ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সবজির ট্রাকটি কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের গলিতে থামতেই ভিড় করেন ব্যাপারীরা। একটু পর শ্রমিকেরা ট্রাক থেকে পণ্য নামানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ট্রাক থেকে নামানো সবজিগুলোর দাম মধ্যরাতেই পাইকারি পর্যায়ে মহাস্থান হাটের চেয়ে দেড় গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

গত রোববার মহাস্থান হাটে পাইকারিতে কৃষকেরা প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ (দেশি) বিক্রি করেন ৩৭০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ১৮০ টাকা। সেই হিসাবে কৃষক পর্যায়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে ১৯০ টাকা। একইভাবে করলার দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা, বেগুনের দাম ৪৫ টাকা বেড়ে ৭৫ টাকা, কাঁকরোল ও শসার দাম ৩০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ থেকে বেড়ে ৭৫ টাকা, পেঁপের দাম ১০ টাকা বেড়ে ৩০ টাকা ও বরবটির দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়।মহাস্থান হাটের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাটে এখন সবজির সরবরাহ কম। অন্যান্য বছর এ সময় শীতকালীন আগাম সবজিতে প্রচুর সরবরাহ থাকত। এ কারণে দাম চড়া।যশোরের পাইকারি মোকাম থেকে এক কেজি সবজি ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিতে পরিবহন খরচ পড়ে ২ টাকা ৩৫ পয়সা। তার সঙ্গে শ্রমিক, মোড়কজাত বাবদ খরচ যোগ হয় কেজিতে আরও এক থেকে দুই টাকা। অর্থাৎ এক কেজি সবজি যশোর থেকে কারওয়ান বাজারে আসতে খরচ পড়ে প্রায় সাড়ে চার টাকা।

যশোরের পাইকারি মোকাম থেকে এক কেজি সবজি ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিতে পরিবহন খরচ পড়ে ২ টাকা ৩৫ পয়সা। তার সঙ্গে শ্রমিক, মোড়কজাত বাবদ খরচ যোগ হয় কেজিতে আরও এক থেকে দুই টাকা। অর্থাৎ এক কেজি সবজি যশোর থেকে কারওয়ান বাজারে আসতে খরচ পড়ে প্রায় সাড়ে চার টাকা।যশোরের বারীনগর মোকামে গত রোববার কৃষক প্রতি কেজি পটোল বিক্রি করেন ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায়। সেই পটোল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আড়তে আসার পর বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। পরে তা আরও কয়েক দফায় হাতবদল হয়ে দাম বাড়তে থাকে। গত রোববার সকালে কৃষকের খেত থেকে ছোট ছোট যানবাহনে করে পটোল, মুলা, পেঁপে, কাঁচা মরিচ, বেগুন, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বারীনগর মোকামে আনা হয় বিক্রির জন্য। সেসব সবজি ব্যাপারীরা কিনে ট্রাকে তুলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার আড়তে পাঠান।সবজির ওই ট্রাকে ছিল বিভিন্ন ধরনের ৮ টন সবজি। যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত পথে মধুমতি সেতু, বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস হাইওয়ে, পদ্মা সেতু ও মুন্সিগঞ্জ টোল প্লাজায় সরকারি টোল বাবদ মোট ২ হাজার ২৪০ টাকা পরিশোধ করতে হয় চালককে। পথে কোথাও কোনো চাঁদাবাজি হয়নি। তবে বারীনগর পাইকারি হাটে বিএনপির কয়েকজন স্থানীয় নেতা ট্রাকভেদে ১০০ ও ২০০ টাকা চাঁদা নেন। যশোর থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ট্রাকভাড়া ছিল ১৬ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি সবজি পরিবহনে খরচ পড়ে সাড়ে চার টাকা।এ বছর অসময়ে অতিবৃষ্টিতে শীতকালীন আগাম সবজির উৎপাদন ২৫ শতাংশ কমে গেছে। তাতে বাজারে সবজির দাম বাড়তি। তবে কৃষকেরা আগাম সবজির চাষ শুরু করেছেন।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদারবারীনগর মোকামে খেতের সবজি বিক্রি করা ডহেরপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল মোল্লা বলেন, বৃষ্টির কারণে এবার সবজির উৎপাদন কমে গেছে। তবে দাম বেশি পাওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।ওই বাজারের ব্যাপারী আতিয়ার রহমান বলেন, এক মাস ধরে বাজারে সবজির সরবরাহ কম। বছরের এ সময় প্রতি হাট থেকে ৫০–৬০ ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। আর এখন যাচ্ছে ১০ থেকে ১২ ট্রাক সবজি। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দামও চড়া।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর অসময়ে অতিবৃষ্টিতে শীতকালীন আগাম সবজির উৎপাদন ২৫ শতাংশ কমে গেছে। তাতে বাজারে সবজির দাম বাড়তি। তবে কৃষকেরা আগাম সবজির চাষ শুরু করেছেন। দ্রুতই সরবরাহ বাড়বে বলে আশা করা যায়।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০