মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

ত্রাণের ছুতোয় হারিয়ে যায় বন্যার স্থায়ী সমাধান

ভাওয়াইয়া গানের ধাম, নদ-নদীময় কুড়িগ্রাম! কুড়িগ্রামের পরিচিতিতে এই ছন্দটি ব্যবহূত হয়ে আসছে আবহমানকাল ধরে। যেই নদীর কারণেই কুড়িগ্রামের পরিচিতি সেই নদীই এ জেলার মানুষের আমরন গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে। অনেকটা লজ্জা স্থানে জোঁক ধরার মতো, না পারি নিজে ছাড়াতে, না পারি কাউকে ডেকে আমাদের সমস্যাগুলো বলে সমাধান করতে। সয়ে যেতে যেতে এটা যেন একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াই হয়ে গেছে। ভয়াবহ বন্যায়ও লোকজন বলে, আরে ওরা প্রতিকার জানে, প্রতিবছর বন্যা হয়। কিভাবে কাটিয়ে উঠতে হবে ওরা জানে! ফলে আবদারের আর্তনাদ আর হাহাকার এই ‘ওরা পারে’ বলেই ধামাচাপা দেয়া হয়, আমরাও চেপেই যাই। ফলে ক্রমাগত নদীতে ক্ষয়ে যেতে থাকা এ জেলার অর্থনীতি দেশের সবচেয়ে শোচনীয় পর্যায়ে আছে। দরিদ্রতার সূচকে সবচেয়ে নিচু অবস্থানে কুড়িগ্রাম। টাকা দেখলে নাকি কাঠের পুতুলও হাঁ করে! যে জেলার অর্থনীতি প্রতিবছর বন্যায় ধূলিসাৎ হচ্ছে সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই শিক্ষা, সচেতনতা, চিকিৎসা, যোগাযোগ এবং আধুনিকায়নে পিছিয়ে পড়বে স্বাভাবিক তো। এর সমাধানের কিছু উপায় খোঁজা যাক।ক্ষতির পরিমাণ হিসেবে কুড়িগ্রাম জেলায় দুই ধরনের নদী আছে। প্রথমত, ছোট নদী (ধরলা, দুধকুমার, গঙ্গাধর ইত্যাদি)! যাদের ক্ষতি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব! দ্বিতীয়ত, ক্ষতিকারক নদী (তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র)! যাদের ক্ষতি অনেক সময়ই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে। প্রথমে আসি ছোট নদী! ধরলা নদীর মাধ্যমে যে ক্ষতিগুলো ক্রমান্বয়ে হয়ে যাচ্ছে আমরা চাইলে সেগুলো রোধ করতে পারি। পানির কারণে ধরলায় খুব একটা বিড়ম্বনা ভোগ করতে হয় না মানুষকে। সাময়িক পানি বেড়ে গেলেও কমে যেতে খুব একটা সময় লাগে না। কিন্তু নদী ভাঙনের কারণে শত শত বিঘা জমি প্রতিবছর বিলীন হয়ে যাচ্ছে।লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়ন এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম অংশ দিয়ে ধরলা নদীর বাংলাদেশে প্রবেশ। কুড়িগ্রাম সদর পার হয়ে ব্রহ্মপুত্রে গিয়ে মিশেছে। ২০১৮ সালে ফুলবাড়ী ধরলা সেতু উদ্বোধনের পর মোগলহাট থেকে কুলাঘাট ইউনিয়ন হয়ে ধারণা সেতুর দক্ষিণ অংশ পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলার অংশে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে সেখানে ভাঙনের কোনো ভয় নেই।কিন্তু একই নদীর আর আরেক তীর কুড়িগ্রাম দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ও শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের কোনো অংশে কোনো জায়গাতেই বাঁধ তৈরি করা হয়নি। ফলে বাঁশের চেয়ে কঞ্চিই বড় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। নদীর আঁকার এবং দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুপাতে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। এ নদীর পানির নাব্য কমে যাওয়ায় প্রশস্ততা বেড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভাঙা-গড়ার এই খেলায় সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রবীণরা বলতেন, নদীর পার্শ্ববর্তী চর ২০ বছরের বেশি চলে না! একপাশে ভেঙে আরেকপাশে তৈরি হওয়া চরগুলো ২০ থেকে ২৫ বছরের মাথায় আবার ভাঙনের শিকার হয়। ফলে এই অঞ্চলের মানুষের অভাব দূর ও দুর্দিন কেটে ওঠা কি বলতে পারে না। স্কুল-কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেঙে গিয়ে পুনরায় গড়ে উঠতে ৮ থেকে ১০ বছর লেগে যায়। এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই! গুছিয়ে তোলা প্রতিষ্ঠান সব বিলীন করে নেয় ধরলা। ভাঙা-গড়ার এই প্রতিযোগিতায় সব সময় পিছিয়ে যাচ্ছে মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকে, নেই সচেতনতাও।ধরলা সেতুর উত্তর অংশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তীরে চারটা গ্রাম মিলে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এই অঞ্চলে রয়েছে কয়েকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র! যা ব্যবস্থা না নিলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ জলে যাবে। আমরা চাইলেই ধরলার মতো ছোট নদীগুলোর তীরে স্থায়ী বোল্ডার বাঁধ তৈরি করে ফসলি জমি ও বসতবাড়ির ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারি। এ ক্ষেত্রে সরকারের এক থেকে দু’বছরের একটা প্রজেক্ট হাতে নিলেই হয়ে যাবে।সম্প্রতি ধরলা সেতুর ভাটিতে বড়ভিটা ইউনিয়নে ধরলার তীর রক্ষায় একটা প্রকল্পের কাজ চলমান, কিছু অংশ সম্পন্ন হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে মোটামুটি চার কিলোমিটার তীর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু বাকি অঞ্চলগুলোর কি হবে? আমাদের প্রাণের দাবি হলো, বড়ভিটায় যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে সেটা বর্ধিত করে পুরো ধরলা নদীর তীর ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করতে হবে। এই একটি প্রকল্পই পারবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুরাবস্থা থেকে বের করতে। নদীর ভাঙন রোধ হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বৃদ্ধি পাবে অর্থনীতি, শিক্ষা ও যোগাযোগ।এবার আসি দ্বিতীয় প্রকারের নদীতে বিশেষত ব্রহ্মপুত্র। এ নদীর বুকে আছে বড় বড় চর। যেগুলো ফেলেও রাখা যায় না, আবার বসবাস করাও কষ্টসাধ্য। তাই যেখানে বন্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তার ভেতরে অন্যতম হলো বন্যাপূর্ব প্রস্তুতি। জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে বন্যা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে এবং পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। বন্যা চলাকালীন ত্রাণ, খাবার, জরুরি ওষুধ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতে হবে। হঠাৎ করেই বন্যা এসে গেলে কাউকে যেন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জীবন দিতে না হয়, সেজন্য উদ্ধার কাজের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে একটি করে উন্নত প্রযুক্তির নৌকা ও প্রশিক্ষিত মানুষ সবসময় প্রস্তুত রাখতে হবে। যেই এলাকাগুলোতে বাঁধ দিয়ে ভাঙনমুক্ত ঘোষণা করা যাবে সেগুলো ভাঙন মুক্ত করতে হবে এবং যেই চরগুলোতে তীর রক্ষা বাঁধ দেয়া সম্ভব হবে না, সেই অঞ্চলের বাসিন্দাদেরকে স্থায়ী ভূমিতে বসবাসের সুযোগ করে দিতে হবে। তারা যেন সম্পূর্ণভাবে নদীর গভীরে থাকা চরের ওপর নির্ভরশীল না হয় এজন্য তাদের যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।এগুলো গেল অতীব জরুরি চাহিদা যেগুলো না করলেই নয়। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কুড়িগ্রাম দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সামর্থ্য অর্জনের জন্য এই মুহূর্তে থেকেই বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর অংশ হিসেবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।এছাড়াও কুড়িগ্রামে নদীর সংখ্যা অনেক বেশি, তাই স্বভাবতই সেই নদীর গভীরে থাকা জমিগুলো অনাবাদি বা আংশিক আবাদি। তাই এই অঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য কুড়িগ্রাম শহরে বড় বড় শিল্পকারখানা স্থাপনের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এই প্রকল্পগুলোতে কুড়িগ্রামকে এতটা অগ্রাধিকার দিতে হবে যাতে আগামীর বাংলাদেশে কুড়িগ্রাম আর পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত না হয়। এই ব্যবস্থাগুলো না নিয়ে শুধুই চিড়া-মুড়ির ত্রাণ নিয়ে আমাদের সহায়তা করতে আসা নিতান্তই মজা করার নামান্তর!

ভাওয়াইয়া গানের ধাম, নদ-নদীময় কুড়িগ্রাম! কুড়িগ্রামের পরিচিতিতে এই ছন্দটি ব্যবহূত হয়ে আসছে আবহমানকাল ধরে। যেই নদীর কারণেই কুড়িগ্রামের পরিচিতি সেই নদীই এ জেলার মানুষের আমরন গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে। অনেকটা লজ্জা স্থানে জোঁক ধরার মতো, না পারি নিজে ছাড়াতে, না পারি কাউকে ডেকে আমাদের সমস্যাগুলো বলে সমাধান করতে। সয়ে যেতে যেতে এটা যেন একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াই হয়ে গেছে। ভয়াবহ বন্যায়ও লোকজন বলে, আরে ওরা প্রতিকার জানে, প্রতিবছর বন্যা হয়। কিভাবে কাটিয়ে উঠতে হবে ওরা জানে! ফলে আবদারের আর্তনাদ আর হাহাকার এই ‘ওরা পারে’ বলেই ধামাচাপা দেয়া হয়, আমরাও চেপেই যাই। ফলে ক্রমাগত নদীতে ক্ষয়ে যেতে থাকা এ জেলার অর্থনীতি দেশের সবচেয়ে শোচনীয় পর্যায়ে আছে। দরিদ্রতার সূচকে সবচেয়ে নিচু অবস্থানে কুড়িগ্রাম। টাকা দেখলে নাকি কাঠের পুতুলও হাঁ করে! যে জেলার অর্থনীতি প্রতিবছর বন্যায় ধূলিসাৎ হচ্ছে সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই শিক্ষা, সচেতনতা, চিকিৎসা, যোগাযোগ এবং আধুনিকায়নে পিছিয়ে পড়বে স্বাভাবিক তো। এর সমাধানের কিছু উপায় খোঁজা যাক।ক্ষতির পরিমাণ হিসেবে কুড়িগ্রাম জেলায় দুই ধরনের নদী আছে। প্রথমত, ছোট নদী (ধরলা, দুধকুমার, গঙ্গাধর ইত্যাদি)! যাদের ক্ষতি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব! দ্বিতীয়ত, ক্ষতিকারক নদী (তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র)! যাদের ক্ষতি অনেক সময়ই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে। প্রথমে আসি ছোট নদী! ধরলা নদীর মাধ্যমে যে ক্ষতিগুলো ক্রমান্বয়ে হয়ে যাচ্ছে আমরা চাইলে সেগুলো রোধ করতে পারি। পানির কারণে ধরলায় খুব একটা বিড়ম্বনা ভোগ করতে হয় না মানুষকে। সাময়িক পানি বেড়ে গেলেও কমে যেতে খুব একটা সময় লাগে না। কিন্তু নদী ভাঙনের কারণে শত শত বিঘা জমি প্রতিবছর বিলীন হয়ে যাচ্ছে।লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়ন এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম অংশ দিয়ে ধরলা নদীর বাংলাদেশে প্রবেশ। কুড়িগ্রাম সদর পার হয়ে ব্রহ্মপুত্রে গিয়ে মিশেছে। ২০১৮ সালে ফুলবাড়ী ধরলা সেতু উদ্বোধনের পর মোগলহাট থেকে কুলাঘাট ইউনিয়ন হয়ে ধারণা সেতুর দক্ষিণ অংশ পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলার অংশে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে সেখানে ভাঙনের কোনো ভয় নেই।কিন্তু একই নদীর আর আরেক তীর কুড়িগ্রাম দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ও শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের কোনো অংশে কোনো জায়গাতেই বাঁধ তৈরি করা হয়নি। ফলে বাঁশের চেয়ে কঞ্চিই বড় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। নদীর আঁকার এবং দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুপাতে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। এ নদীর পানির নাব্য কমে যাওয়ায় প্রশস্ততা বেড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভাঙা-গড়ার এই খেলায় সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রবীণরা বলতেন, নদীর পার্শ্ববর্তী চর ২০ বছরের বেশি চলে না! একপাশে ভেঙে আরেকপাশে তৈরি হওয়া চরগুলো ২০ থেকে ২৫ বছরের মাথায় আবার ভাঙনের শিকার হয়। ফলে এই অঞ্চলের মানুষের অভাব দূর ও দুর্দিন কেটে ওঠা কি বলতে পারে না। স্কুল-কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেঙে গিয়ে পুনরায় গড়ে উঠতে ৮ থেকে ১০ বছর লেগে যায়। এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই! গুছিয়ে তোলা প্রতিষ্ঠান সব বিলীন করে নেয় ধরলা। ভাঙা-গড়ার এই প্রতিযোগিতায় সব সময় পিছিয়ে যাচ্ছে মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকে, নেই সচেতনতাও।ধরলা সেতুর উত্তর অংশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তীরে চারটা গ্রাম মিলে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এই অঞ্চলে রয়েছে কয়েকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র! যা ব্যবস্থা না নিলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ জলে যাবে। আমরা চাইলেই ধরলার মতো ছোট নদীগুলোর তীরে স্থায়ী বোল্ডার বাঁধ তৈরি করে ফসলি জমি ও বসতবাড়ির ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারি। এ ক্ষেত্রে সরকারের এক থেকে দু’বছরের একটা প্রজেক্ট হাতে নিলেই হয়ে যাবে।সম্প্রতি ধরলা সেতুর ভাটিতে বড়ভিটা ইউনিয়নে ধরলার তীর রক্ষায় একটা প্রকল্পের কাজ চলমান, কিছু অংশ সম্পন্ন হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে মোটামুটি চার কিলোমিটার তীর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু বাকি অঞ্চলগুলোর কি হবে? আমাদের প্রাণের দাবি হলো, বড়ভিটায় যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে সেটা বর্ধিত করে পুরো ধরলা নদীর তীর ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করতে হবে। এই একটি প্রকল্পই পারবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুরাবস্থা থেকে বের করতে। নদীর ভাঙন রোধ হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বৃদ্ধি পাবে অর্থনীতি, শিক্ষা ও যোগাযোগ।এবার আসি দ্বিতীয় প্রকারের নদীতে বিশেষত ব্রহ্মপুত্র। এ নদীর বুকে আছে বড় বড় চর। যেগুলো ফেলেও রাখা যায় না, আবার বসবাস করাও কষ্টসাধ্য। তাই যেখানে বন্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তার ভেতরে অন্যতম হলো বন্যাপূর্ব প্রস্তুতি। জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে বন্যা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে এবং পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। বন্যা চলাকালীন ত্রাণ, খাবার, জরুরি ওষুধ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতে হবে। হঠাৎ করেই বন্যা এসে গেলে কাউকে যেন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জীবন দিতে না হয়, সেজন্য উদ্ধার কাজের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে একটি করে উন্নত প্রযুক্তির নৌকা ও প্রশিক্ষিত মানুষ সবসময় প্রস্তুত রাখতে হবে। যেই এলাকাগুলোতে বাঁধ দিয়ে ভাঙনমুক্ত ঘোষণা করা যাবে সেগুলো ভাঙন মুক্ত করতে হবে এবং যেই চরগুলোতে তীর রক্ষা বাঁধ দেয়া সম্ভব হবে না, সেই অঞ্চলের বাসিন্দাদেরকে স্থায়ী ভূমিতে বসবাসের সুযোগ করে দিতে হবে। তারা যেন সম্পূর্ণভাবে নদীর গভীরে থাকা চরের ওপর নির্ভরশীল না হয় এজন্য তাদের যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।এগুলো গেল অতীব জরুরি চাহিদা যেগুলো না করলেই নয়। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কুড়িগ্রাম দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সামর্থ্য অর্জনের জন্য এই মুহূর্তে থেকেই বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর অংশ হিসেবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।এছাড়াও কুড়িগ্রামে নদীর সংখ্যা অনেক বেশি, তাই স্বভাবতই সেই নদীর গভীরে থাকা জমিগুলো অনাবাদি বা আংশিক আবাদি। তাই এই অঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য কুড়িগ্রাম শহরে বড় বড় শিল্পকারখানা স্থাপনের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এই প্রকল্পগুলোতে কুড়িগ্রামকে এতটা অগ্রাধিকার দিতে হবে যাতে আগামীর বাংলাদেশে কুড়িগ্রাম আর পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত না হয়। এই ব্যবস্থাগুলো না নিয়ে শুধুই চিড়া-মুড়ির ত্রাণ নিয়ে আমাদের সহায়তা করতে আসা নিতান্তই মজা করার নামান্তর!

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১