বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

দ্রব্যমূল্য কমাতে নজর কম 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার নানা খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ কম। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় দুই মাসে ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। কমেছে মাত্র দুটির।  বাজারে এখন সবজির দাম ব্যাপক চড়া। ডিমের প্রতি ডজনের দর উঠেছে ১৭০ টাকায়। মুরগি ও মাছের দামেও স্বস্তি নেই। সব মিলিয়ে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট কমেনি।  মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হারে লাগাম তুলে নিয়ে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে সুদের হার বেড়েছে। মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে একটা জায়গায় স্থিতিশীল হয়েছে। কিন্তু সুদের হার ও ডলারের দামের কারণে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়েছে।  সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় দুই মাসে ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। কমেছে মাত্র দুটির।  বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, সুদের হারে লাগাম তুলে নেওয়ার পদক্ষেপ ঠিকই আছে। তাতে বাজারে টাকার সরবরাহ কমবে। পণ্যের চাহিদা কমবে। মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনাও আছে। কিন্তু অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে এই নীতি ততটা কার্যকর নয়। কারণ, সেসব পণ্যের চাহিদা সব সময়ই থাকে। বাজারে টাকার সরবরাহের ওপর ওই সব পণ্যের চাহিদা, জোগান ও দাম ততটা নির্ভর করে না। এসব পণ্যের দাম কমাতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দরকার।  যেমন ডিম। এর দাম উৎপাদন খরচ, চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। যখন মানুষের হাতে টাকা কম থাকে, তখন বরং ডিমের চাহিদা বেড়ে যায়। ডিমের দাম কমাতে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার।  বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অব্যাহত উচ্চ মূল্য শহর ও গ্রামের সব মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছিল। তখন সরকার কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে বরং উদাসীনতা দেখাত। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থায় সংস্কার দরকার। অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের পক্ষে দুটি বড় মন্ত্রণালয় সামলানোর পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যথেষ্ট নজর দেওয়ার সুযোগ কম। এই মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক নানা চ্যালেঞ্জ এখন আছে, সামনে আরও বাড়বে। এখানে এককভাবে দায়িত্ব দিয়ে একজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন, যিনি গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে কাজ করবেন।  যখন মানুষের হাতে টাকা কম থাকে, তখন বরং ডিমের চাহিদা বেড়ে যায়। ডিমের দাম কমাতে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার।  দাম বেড়েছে, কমেছে টিসিবির বাজারদরের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৮ আগস্টের তুলনায় গতকাল বৃহস্পতিবার মোটা চাল কেজিতে ১ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৬ টাকা, পাম তেল ১২ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১০ টাকা, চিনি ৩ টাকা ও ডিম ডজনে ১৫ টাকা বেড়েছে। বিপরীতে পেঁয়াজ ও আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা কমেছে। এ দুটি পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ছিল। শুল্ক কমিয়ে আমদানির ব্যবস্থা করে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।  টিসিবির তালিকায় আলু ছাড়া অন্য সবজির দাম থাকে না। তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজারদরের তালিকায় বিভিন্ন ধরনের সবজির দর উল্লেখ করা হয়। তাদের হিসাবে, ৮ আগস্টের তুলনায় এখন বেশির ভাগ সবজির দাম বেশি।  যেমন বেগুনের দাম এখন জাতভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, যা ৮ আগস্ট ছিল ৪০ থেকে ৮০ টাকা। একইভাবে চলতি মৌসুমের সবজি চিচিঙ্গার কেজি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, যা মাস দুয়েক আগে ছিল ৩৫ থেকে ৬০ টাকা।  পেঁয়াজ ও আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা কমেছে। এ দুটি পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ছিল। শুল্ক কমিয়ে আমদানির ব্যবস্থা করে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।  ঢাকার মিরপুর-১১ নম্বর কাঁচাবাজার, কালশী কাঁচাবাজার, তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজারের খুচরা দোকান ঘুরে গতকাল দেখা যায়, বেশির ভাগ সবজির কেজি ৬০ থেকে ১০০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, সবজির সরবরাহ কম। দুই মাসে দাম অনেকটাই বেড়েছে।  মিরপুর-১১ নম্বর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মনসুর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবজির দর শুনে মানুষ প্রতিদিনই জানতে চায় এত দাম কেন। আমাদের কাছে কোনো জবাব থাকে না। মানুষ আসলেই কষ্টে আছে। আমাদেরও লাভ কমে গেছে।’ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সবজি ছাড়া বাজারে দুই মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডিম, মুরগি, খোলা ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। মাঝারি চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে, যা টিসিবির তালিকায় উল্লেখ নেই।  নিম্ন আয় ও স্বল্প আয়ের পরিবারে প্রাণিজ আমিষের বড় উৎস ডিম ও ফার্মের মুরগি। ডিমের ডজন এখন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, দুই বছর আগেও বছরজুড়ে সাধারণত ১০০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে থাকত। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ২০ টাকা কম ছিল। দুই বছর আগে ক্রেতারা ব্রয়লার মুরগি কিনতে পারতেন সাধারণত ১৩০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। কালশী বাজারে মাছের দাম নিয়ে দর-কষাকষি করছিলেন গৃহিণী ঝরনা বেগম। তিনি ছোট আকারের রুই মাছ ৩০০ টাকা কেজি কিনতে চাইছিলেন। কিন্তু বিক্রেতা তোফাজ্জলের কথা, দাম এক টাকাও কম হবে না। সবজির দর শুনে মানুষ প্রতিদিনই জানতে চায় এত দাম কেন। আমাদের কাছে কোনো জবাব থাকে না। মানুষ আসলেই কষ্টে আছে। আমাদেরও লাভ কমে গেছে। মিরপুর-১১ নম্বর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মনসুর আলী ঝরনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে কোনো জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। যে যার মতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। ৮০-১০০ টাকার নিচে তরকারি (সবজি) কেনা যায় না। ডিম ও মাছের দামও দিন দিন বাড়ছেই। পুরাই যাচ্ছেতাই অবস্থা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে। মার্কিন ডলারের দাম বাড়তে থাকে। এরপরই সব পণ্যের দাম বাড়া শুরু হয়।  চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, মাছ, মাংস, সবজি, মসলাসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং কারখানায় উৎপাদিত নিত্যব্যবহার্য সাবান, টুথপেস্ট, টিস্যু, নারকেল তেল, শিশুখাদ্য, প্রসাধন ইত্যাদির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার দফায় দফায় জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়িয়েছে, যা আবার শিল্পপণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।  আওয়ামী লীগ সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার কৌশল নিয়েছিল; কিন্তু তা কাজে আসেনি। এখনো কাজে আসছে না। যেমন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলজিপি) ১২ কেজির সিলিন্ডারের নির্ধারিত দর এখন ১ হাজার ৪৫৬ টাকা। গত বুধবারই এক সিলিন্ডার গ্যাস কিনেছেন রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা রওশন আরা। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম ১ হাজার ৭০০ টাকা নিয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার নানা খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ কম।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় দুই মাসে ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। কমেছে মাত্র দুটির। 

বাজারে এখন সবজির দাম ব্যাপক চড়া। ডিমের প্রতি ডজনের দর উঠেছে ১৭০ টাকায়। মুরগি ও মাছের দামেও স্বস্তি নেই। সব মিলিয়ে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট কমেনি। 

মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হারে লাগাম তুলে নিয়ে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে সুদের হার বেড়েছে। মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে একটা জায়গায় স্থিতিশীল হয়েছে। কিন্তু সুদের হার ও ডলারের দামের কারণে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়েছে। 

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় দুই মাসে ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। কমেছে মাত্র দুটির। 

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, সুদের হারে লাগাম তুলে নেওয়ার পদক্ষেপ ঠিকই আছে। তাতে বাজারে টাকার সরবরাহ কমবে। পণ্যের চাহিদা কমবে। মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনাও আছে। কিন্তু অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে এই নীতি ততটা কার্যকর নয়। কারণ, সেসব পণ্যের চাহিদা সব সময়ই থাকে। বাজারে টাকার সরবরাহের ওপর ওই সব পণ্যের চাহিদা, জোগান ও দাম ততটা নির্ভর করে না। এসব পণ্যের দাম কমাতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দরকার। 

যেমন ডিম। এর দাম উৎপাদন খরচ, চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। যখন মানুষের হাতে টাকা কম থাকে, তখন বরং ডিমের চাহিদা বেড়ে যায়। ডিমের দাম কমাতে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অব্যাহত উচ্চ মূল্য শহর ও গ্রামের সব মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছিল। তখন সরকার কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে বরং উদাসীনতা দেখাত। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থায় সংস্কার দরকার। অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের পক্ষে দুটি বড় মন্ত্রণালয় সামলানোর পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যথেষ্ট নজর দেওয়ার সুযোগ কম। এই মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক নানা চ্যালেঞ্জ এখন আছে, সামনে আরও বাড়বে। এখানে এককভাবে দায়িত্ব দিয়ে একজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন, যিনি গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে কাজ করবেন। 

যখন মানুষের হাতে টাকা কম থাকে, তখন বরং ডিমের চাহিদা বেড়ে যায়। ডিমের দাম কমাতে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। 

দাম বেড়েছে, কমেছে

টিসিবির বাজারদরের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৮ আগস্টের তুলনায় গতকাল বৃহস্পতিবার মোটা চাল কেজিতে ১ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৬ টাকা, পাম তেল ১২ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১০ টাকা, চিনি ৩ টাকা ও ডিম ডজনে ১৫ টাকা বেড়েছে।

বিপরীতে পেঁয়াজ ও আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা কমেছে। এ দুটি পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ছিল। শুল্ক কমিয়ে আমদানির ব্যবস্থা করে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। 

টিসিবির তালিকায় আলু ছাড়া অন্য সবজির দাম থাকে না। তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজারদরের তালিকায় বিভিন্ন ধরনের সবজির দর উল্লেখ করা হয়। তাদের হিসাবে, ৮ আগস্টের তুলনায় এখন বেশির ভাগ সবজির দাম বেশি। 

যেমন বেগুনের দাম এখন জাতভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, যা ৮ আগস্ট ছিল ৪০ থেকে ৮০ টাকা। একইভাবে চলতি মৌসুমের সবজি চিচিঙ্গার কেজি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, যা মাস দুয়েক আগে ছিল ৩৫ থেকে ৬০ টাকা। 

পেঁয়াজ ও আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা কমেছে। এ দুটি পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ছিল। শুল্ক কমিয়ে আমদানির ব্যবস্থা করে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। 

ঢাকার মিরপুর-১১ নম্বর কাঁচাবাজার, কালশী কাঁচাবাজার, তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজারের খুচরা দোকান ঘুরে গতকাল দেখা যায়, বেশির ভাগ সবজির কেজি ৬০ থেকে ১০০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, সবজির সরবরাহ কম। দুই মাসে দাম অনেকটাই বেড়েছে। 

মিরপুর-১১ নম্বর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মনসুর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবজির দর শুনে মানুষ প্রতিদিনই জানতে চায় এত দাম কেন। আমাদের কাছে কোনো জবাব থাকে না। মানুষ আসলেই কষ্টে আছে। আমাদেরও লাভ কমে গেছে।’

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সবজি ছাড়া বাজারে দুই মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডিম, মুরগি, খোলা ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। মাঝারি চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে, যা টিসিবির তালিকায় উল্লেখ নেই। 

নিম্ন আয় ও স্বল্প আয়ের পরিবারে প্রাণিজ আমিষের বড় উৎস ডিম ও ফার্মের মুরগি। ডিমের ডজন এখন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, দুই বছর আগেও বছরজুড়ে সাধারণত ১০০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে থাকত। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ২০ টাকা কম ছিল। দুই বছর আগে ক্রেতারা ব্রয়লার মুরগি কিনতে পারতেন সাধারণত ১৩০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে।

কালশী বাজারে মাছের দাম নিয়ে দর-কষাকষি করছিলেন গৃহিণী ঝরনা বেগম। তিনি ছোট আকারের রুই মাছ ৩০০ টাকা কেজি কিনতে চাইছিলেন। কিন্তু বিক্রেতা তোফাজ্জলের কথা, দাম এক টাকাও কম হবে না।

সবজির দর শুনে মানুষ প্রতিদিনই জানতে চায় এত দাম কেন। আমাদের কাছে কোনো জবাব থাকে না। মানুষ আসলেই কষ্টে আছে। আমাদেরও লাভ কমে গেছে।

মিরপুর-১১ নম্বর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মনসুর আলী

ঝরনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে কোনো জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। যে যার মতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। ৮০-১০০ টাকার নিচে তরকারি (সবজি) কেনা যায় না। ডিম ও মাছের দামও দিন দিন বাড়ছেই। পুরাই যাচ্ছেতাই অবস্থা।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে। মার্কিন ডলারের দাম বাড়তে থাকে। এরপরই সব পণ্যের দাম বাড়া শুরু হয়। 

চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, মাছ, মাংস, সবজি, মসলাসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং কারখানায় উৎপাদিত নিত্যব্যবহার্য সাবান, টুথপেস্ট, টিস্যু, নারকেল তেল, শিশুখাদ্য, প্রসাধন ইত্যাদির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার দফায় দফায় জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়িয়েছে, যা আবার শিল্পপণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। 

আওয়ামী লীগ সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার কৌশল নিয়েছিল; কিন্তু তা কাজে আসেনি। এখনো কাজে আসছে না। যেমন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলজিপি) ১২ কেজির সিলিন্ডারের নির্ধারিত দর এখন ১ হাজার ৪৫৬ টাকা। গত বুধবারই এক সিলিন্ডার গ্যাস কিনেছেন রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা রওশন আরা। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম ১ হাজার ৭০০ টাকা নিয়েছে।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০