বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় নিখোঁজের চার দিন পর পলিথিনে মোড়ানো প্রতিবেশীর বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে এক বৃদ্ধের ৯ টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের ফরদাবাদ গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকা থেকে লাশের খণ্ডিত অংশগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত ব্যক্তির নাম অরুণ মিয়া (৭০)। তিনি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের ফরদাবাদ গ্রামের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা।
আটক দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জেরে অরুণকে হত্যার পর লাশ গুম করতে কেটে টুকরা টুকরা করে ইট দিয়ে পলিথিনে পেঁচিয়ে পাশের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলা হয়েছে।
নিহত অরুণ মিয়া প্রায় ৩৫ বছর আগে প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর একই গ্রামের তারু মিয়ার মেয়ে মোমেনা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর ঘরে লুৎফুর রহমান (৫৫) নামের ছেলে আছে। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে প্রাপ্তবয়স্ক এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।
স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিলেন অরুণ মিয়া। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর মোমেনা বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো। কলহের জেরে ২০১৭ সাল থেকে ছেলে লুৎফর রহমানকে নিয়ে গাজীপুরে বসবাস করে করে আসছিলেন অরুণ। কয়েক মাস আগে গ্রামের লোকজন সালিসের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্ত্রী মোমেনার সঙ্গে অরুণের বিবাদ মীমাংসা করে দেন। এর পর থেকে অরুণ বেশির ভাগ সময় গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। গত শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ অরুণ নিখোঁজ হন। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে না পেয়ে ছেলে লুৎফর রহমান গত সোমবার বাবা নিখোঁজের বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অরুণের প্রতিবেশী সৌদিপ্রবাসী মনির হোসেনের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। সেপটিক ট্যাংকের মুখ খুলে সেখানে টর্চলাইট দিয়ে ট্যাংকের ভেতরে পলিথিনে মোড়ানো কয়েকটি বস্তু দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এসে রাত ১০টার দিকে পলিথিনে মোড়ানো ৯ টুকরা লাশ উদ্ধার করে। এরপর লুৎফর তাঁর বাবার টুকরা টুকরা লাশ শনাক্ত করেন।
এ ঘটনার পরপর দ্বিতীয় স্ত্রী মোমেনা বেগম ও তাঁর মেয়ে লাকী আক্তারকে (২৭) আটক করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করে মোমেনা পুলিশকে জানিয়েছেন, গত শুক্রবার বিকেলে অরুণের সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মোমেনার কলহ হয়। একপর্যায়ে শাবল দিয়ে তাঁর স্বামীর মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যান। পরে স্বামীর লাশ নিজেই ৯ টুকরা করে পলিথিনে পেঁচিয়ে ইট দিয়ে ভারী করে পাশের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন।
বাঞ্ছারামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কুমার পাল বলেন, অরুণ মিয়া হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মোমেনা বেগম ও মেয়ে লাকীকে আটক করা হয়েছে। আর লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।