মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন নেপথ্যে বিচক্ষণ এসআই আবু হায়দার

ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন নেপথ্যে বিচক্ষণ এসআই আবু হায়দার

হুমায়ুন কবীর,রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী মহানগরীর হোসনিগঞ্জ এলাকায় এক বাসায় চুরি করতে গিয়ে চুরি করা দেখে ফেলায় সেই বাসার ৫০ বছরের গৃহিণীকে খুন করা হয়।খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিকে গ্রেফতার করেছে আরএমপি’র বোয়ালিয়া মডেল থানার অন্তর্ভুক্ত মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আবু হায়দার ও তার টিম।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১২ই মার্চ রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন হোসনিগঞ্জ এলাকার শেখ আব্দুল কাদের ওরফে অনিক সকাল ৯:৩০ মিনিটের সময় তার মায়ের লাশ গলায় কাপড় প্যাঁচানো রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পরে থাকতে দেখে।
এছাড়াও তিনি তার মায়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের দাগ দেখতে পান। বিষয়টি আব্দুল কাদের ওরফে অনিক তাৎক্ষণিক বোয়ালিয়া মডেল থানাকে অবহিত করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে। আব্দুল কাদেরে ওরফে অনিক এর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যার মামলা রুজু হয়। মামলার তদন্তের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় বোয়ালিয়া মডেল থানার অন্তর্ভুক্ত মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আবু হায়দারকে।
এসআই আবু হায়দার খুনের মামলার তদন্ত শুরু করেতে গিয়ে একপ্রকার অন্ধকারে তথ্য বিহীন ভাবে মামলার তদন্ত শুরু করে। শুরু করেন আরএম পির সিসি টিভি ফুটেজ থেকে তদন্ত শুরু করে প্রায় ৮০ দিনের মধ্যে আসামীকে গ্রেপ্তার করে।
আসামি খুনের দায় ও চুরির কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামি, মো: ওমর ফারুক মৃদুল (২১)রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন হোসনিগঞ্জ এলাকার মো: আফতার উদ্দিন মিরুর ছেলে।
আসামীর স্বীকারোক্তি ও পুলিশের দেয়া তথ্য মতে আসামী মো: ওমর ফারুক মৃদুল (২১) আনুমানিক রাত ১১:২৫ মিনিটে চুরির উদ্দেশ্য মৃত বিউটি বেগমের বাসায় ঢুকে। সে সময় বিউটি বেগম রুমে ছিলো না পরে বিউটি বেগম রুমে ঘুমাতে ঢুকলে আসামী মো: ওমর ফারুক মৃদুল খাটের নিচে লুকিয়ে থাকে। বিউটি বেগম ঘুমিয়ে পরলে আসামী মৃদুল খাটের নিচে থেকে বের হয়ে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে স্টিলের আলমারি খোলার চেষ্টা করে তখন শব্দে বিউটি বেগমের ঘুম ভেংগে যায় এবং রুমে থাকা রড দিয়ে আসামীকে মারার প্রস্তুত নিতেই আসামী মৃদুল বিউটি বেগমের সাথে ধস্তাধস্তি করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এতে বিউটি বেগম মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে অচেতন হয়ে পরে। তারপর আসামী মৃদুল পুনরায় স্টীলের আলমারি খুলতে গিয়ে লক্ষ করে বিউটি বেগম নিঃশ্বাস নিচ্ছে তখন আসামী মৃদুল ওড়না দিয়ে মুখ নাক পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে স্টিলের আলমারিতে রাখা প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে আনুমানিক রাত ২:৩০ মিনিটের দিকে বিউটি বেগমের বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তদন্তকারী কর্মকর্তার দেয়া তথ্য থেকে আরো জানা যায় আসামী মৃদুল চুরি করা টাকা নিয়ে সকালে ৯:৩০ এ একটি ব্যাংকে জমা করে তার বউ কে মিথ্যা করে বলে তার নানি অসুস্থ তাকে এখনই বরিশাল রওনা দিতে হবে। এরপর দুইজন মিলে রাজশাহী রেলস্টেশনে বসে থেকে বিকালের ট্রেনে ঢাকা যায় এবং আরিচা থেকে লঞ্চে করে বরিশাল শ্বশুর বাড়ি পৌঁছে। ঠিক সেইদিনই বউকে শ্বশুর বাড়ি রেখে মৃদুল কক্সবাজার চিটাগং বেড়াতে যায় সেখানে কয়েক দিন থেকে পুনরায় শ্বশুর বাড়ি এসে আত্নগোপন করেন এবং আটক হবার সময়ও আসামী মৃদুল শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। পুলিশের সাইবার টিমের সহযোগীতায় আসামীর লোকেশন সনাক্ত করে এসআই আবু হায়দার তার টিম নিয়ে বরিশাল জেলা পুলিশের সহায়তায় গভীর রাতে আসামী ওমর ফারুক মৃদুলকে গ্রেপ্তার করে। রাজশাহী নিয়ে আসে এবং আদালতে জবানবন্দি দিয়ে আসামীকে কারাগারে প্রেরন করে।
আদালতের স্বীকারোক্তীতে আসামী ওমর ফারুক মৃদুল খুন ও চুরির ঘটনা স্বীকার করে।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরাওয়ার্দী গণমাধ্যমকে জানান “ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ এবং আরএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিকে সনাক্ত করতে সক্ষম হই।
এরই ধারাবাহিকতায়, গত ৫ই জুন বরিশাল মুলাদী থানাধীন চরকালেকা এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামি ওমর ফারুককে গ্রেফতার করে বোয়ালিয়া মডেল থানার মালোপাড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আবু হায়দার সহ একটি টিম।
আসামী ওমর ফারুক মৃদুল মৃত বিউটি বেগমের পাশ্ববর্তী এলাকার এবং পূর্ব পরিচিত। বাবা মায়ের সাথে ঝগড়াবিবাদ করে বউ সোনিয়াকে নিয়ে আলাদা থাকে। এলাকা বাসী ও পুলিশের দেয়া তথ্য মতে ওমর ফারুক মৃদুল আইপিএল জুয়া খেলার সাথে জড়িত।
বিউটি বেগম হত্যা মামলায় তার ছেলে শেখ আব্দুল কাদের বাদী হয়ে সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করেন মামলা নং ৯/ ১৩-৩-২৩, ধারা ৩০২/৩৪ পেনাল কোড দন্ড বিধি।
বিউটি বেগম হত্যা মামলা নিয়ে অনেকের মাঝে ভিন্ন মত দেখা দেয় অনেকে ধারনা করে প্রকৃত খুনিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে না তারপরও এসআই আবু হায়দারের বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতায় খুনিকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এটা কোন গল্প বা নাটক নয় এটা রাজশাহী বোয়ালিয়া মডেল থানার খুন ও আসামী গ্রেপ্তারের বাস্তব ঘটনা।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১