মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

জমি প্রতারক চক্রের সদস্য তোফায়েল জামিনে বের হয়ে ভুক্তভোগীদের নামে মিথ্যাচারে লিপ্ত

জমি প্রতারক চক্রের সদস্য তোফায়েল জামিনে বের হয়ে ভুক্তভোগীদের নামে মিথ্যাচারে লিপ্ত

হুমায়ুন কবীর, রাজশাহীঃ
গত ২ ফেব্রুয়ারী জমি প্রতারক চক্রের মুল হোতা সহ মোট তিনজনকে পুলিশ আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
জমি প্রতারক চক্র আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতারনার দায়ে আরএমপি পুলিশের দুটি মামলায় তিন প্রতারক জেলে। সম্প্রতি জেল থেকে বের হয়েছেন প্রতারক তোফায়েল। জেল থেকে বের হয়ে প্রতারণা শিকার ভুক্তভোগীদের হয়রানি ও নানা মিথ্যাচারসহ অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে, উপশহর এলাকার মৃত আব্দুল হাফিজ খানের ছেলে তোফায়েল (৫৪)। জেলহাজতে থাকা অন্য দুই প্রতারক হলে, নগরীর লক্ষীপুর ভাটাপাড়া এলাকার রেজাউল ইসলামের স্ত্রী এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ড (৩,৫,৬) সাবেক কাউন্সিলর ফারজানা হক (৪৬), একই এলাকার মৃত ফাইজুদ্দিনের ছেলে রেজাউল ইসলাম (৫৩)। সাবেক ওই নারী কাউন্সিলর জমি প্রতারক চক্রের মুলহোতা। তাদের বিরুদ্ধে জমি বায়নার নামে প্রতারনা, চেক বানিজ্য, ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণা, এমনকি আদালতেও প্রতারণা আশ্রয় নেওয়াসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চলতি মে মাস থেকে গত কয়েকদিন যাবৎ এমন অপপ্রচারসহ বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিচ্ছেন ঐ জমি প্রচারক চক্রের অন্যতম সদস্য তোফায়েল। প্রতারক চক্র বিভিন্ন জনের নিকট একই জমি বায়নামা মূলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে বায়নাকারী ভুক্তভোগীদের বাগে আনতে ফারজানা চক্র মিথ্যাচার ও নানা অপপ্রচার শুরু করেছেন।

ঘটনা সুত্রে জানা যায়, অভিনব কায়দায় প্রতারণা, জমি দখল, একই জমি বিভিন্ন জনের নিকট বায়না, বায়না’র পরে তালবাহানা, ভাড়াটিয়া হিসাবে বাসায় ঢুকে বাড়ি দখল, অতঃপর মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎসহ নানা হয়রানি’ ছিলো চক্রটি’র মুল পেশা। এসব বিষয়ে এ বছর আরএমপি’র দুটি থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। রাজপাড়া থানা পুলিশ চক্রের তিনজনকে আটক করেন। তিন প্রতারকের একজন তোফায়েল অস্থায়ী জামিনে বের হয়ে নানা কূটকৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছেন।

পুলিশ, প্রত্যাক্ষদোষী এবং ভুক্তভোগী সুত্রে জানা যায়, রাজশাহী জেলার পবা থানাধীন আলীগঞ্জ মৌজায় জেএল নং- আর.এস-৬২, খতিয়ান নং- সি.এস-৬৯, এস.এ- ৮২, আর.এস- ২২৪, প্রস্তাবিত- ৭১০৪, দাগ নং- সাবেক- ৪৫৪, আর.এস- ৭৬০, রকম- ভিটা, পরিমাণ- ০.৭৮০০ একর কাত- ০.১৬২৯ একর জমি আছে মোছা: ফারজানা হকের। মোছা: ফারজানা হক গত ২৩ জুন ২০২২ ইং তারিখে ০.০৩৩০ একর জমি পবা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ৭৬৯৮ নং দলিল মূলে নগরীর মোল্লাপাড়া এলাকার সাজ্জাদ বাদশার সাথে বায়না রেজিস্ট্রী করে ১০ লাখ টাকা নেয়। প্রথম বায়না রেজিস্ট্রির দুই সপ্তাহ পরেই ০৭ জুলাই ২০২২ ইং তারিখে ০.০৭৭৫ একর জমির ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে বায়না করে পবার আলীগঞ্জ এলকার আব্দুল গাফ্ফারের কাছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয়। দ্বিতীয় বায়নার পর গত ২১ জুলাই ২০২২ ইং তারিখে ০.১১৫৫ একর জমির ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে বায়না করে গোদাগাড়ী উপজেলার ইমামগঞ্জ চক্কহরণ এলাকার শরিফুল ইসলামের কাছে ১৬ লাখ টাকা নেয় মোছা: ফারজানা হক। তৃতীয় বায়নার পর গত ১৭ আগস্ট ২০২২ ইং তারিখে ০.১৬২৯ একর জমি পবা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ৯৮০৯ নং দলিল মূলে নগরীর বহরমপুর এলাকার মোঃ শফিকুল ইসলামের সাথে বায়না রেজিস্ট্রী করে ৩৫ লাখ টাকা নেয়। পরবর্তীতে ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ইং তারিখে ০.১৬২৯ একর জমি পবা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ১৬৬০৮ নং দলিল মূলে পবা উপজেলার বসুয়া এলাকার আব্দুল খালেক ও মোঃ মহিদুল হকের সাথে বায়না রেজিস্ট্রী করে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে মোছা: ফারজানা হক। বর্তমানে প্রতারণা, জমি দখল, ভাড়াটিয়া হিসাবে বাসায় ঢুকে বাড়ি দখল, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগে প্রতারণা চক্রের তিন আসামির মধ্যে সাবেক কাউন্সিলর মোছা: ফারজানা হক ও তার স্বামী রেজাউল হক জেল হাজতে আছে এবং অপর আসামী তোফায়েল জামিনে আছে।

ভুক্তভোগীদের দাবি, ওই নারী বায়নার মাধ্যমে আরও অনেক জনের কাছ থেকেই টাকা হাতিয়ে রেখেছেন। নগরীর উপশহর এলাকায় বি-৩০৫ বাড়িটি ফারজানা হক প্রতারণা’র মাধ্যমে দখল করে আছেন । ফারজানা’র শ্বশুর তাঁর বাড়িটিও বিভিন্ন জনের নিকট বায়না করেন। কিন্তু ফারজানা সেই বাড়ী দখল রেখে বলেন, ছেলে মেয়ে বাড়ি বিক্রি করতে দিচ্ছে না। সেখানেও কয়েকজনের সাথে প্রতারণা করেন তারা। প্রতারণা শেষে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত না দিয়ে তাদের হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে বিভ্রান্তিকর তথ্যদিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে। মামলাবাজ ফারজানা, কথায় কথায় মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে বহু মামলা আছে এবং সে নিজেও বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে কোটে বহু মামলা করেছেন।
চলতি বছর ২৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে বাদশা ও ফারজানা পবা ভূমি সাবরেজিস্টারের অফিসে উপস্থিত হলে বিষয়টি তৃতীয় বায়নাকারী আব্দুল খালেক জানতে পারেন । তিনি সাবরেজিস্টারের অফিসে গিয়ে হাজির হয়ে ফারজানাকে হাতে নাতে ধরে ফেলে। এরপর ফারজানার সামনে হাজির হয় দ্বিতীয় বায়নাকারী শফিকুল।এসময় পবা দলিল লেখকদের উঠানে এনিয়ে বিচার শালিশ শুরু হয়। আব্দুল খালেক বায়নার বাকি টাকা দিয়ে পুরো জমি রেজিস্ট্রি নিতে চান। আব্দুল খালেক জানান, ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় ফারজানার প্রায় ১০ কাটা জমি নেয়ার জন্য বায়না দলিল করা হয়। বায়নার সময় তাকে ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। দলিল মতে, বাকি টাকা ৬ মাসের মধ্যেই তাকে বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে জানতে পারি ফারজানা অন্যদের কাছেও বায়না করে টাকা নিয়েছেন। তিনি এভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে রেখেছেন। এখন আমি বায়নার বাকি টাকা পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি নিতে চাইলে তিনি জমি দিতে রাজি না। এমনকি তিনি যার যার সাথে বায়না করেছেন তাদের কাউকেই জমি রেজিস্ট্রি দিতে চাচ্ছে না। এতে করে আমরা সবাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

লক্ষীপুর ভাটাপাড়া এলাকাবাসী জানায়, প্রতারক চক্রের সুনির্দিষ্ট কোনো আয় নাই। প্রতারণা তাদের পেশা। মানুষের নিকট টাকা নিয়ে চেক দেয় তারা। পরে তাদের হয়রানি করতে প্রতারক চক্র মামলা হামলাসহ নানা কূটকৌশল অবলম্বন করেন। মামলা ও হয়রানি’র ভয়ে কেউ এদের বিরুদ্ধে যেতে চায় না।
সাবেক মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা হক ও রেজাউল ইসলাম ওরফে ডলার সম্পর্কে এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্য মতে রেজাউল ইসলাম ওরফে ডলার শারিরীক প্রতিবন্ধী হবার দরুন তার বউ ফারজানা হককে আমরা ভোট দিয়ে কাউন্সিলর করে তার পর থেকে তার নিকৃষ্ট আসল চেহারা মানুষের সামনে বের হয়ে আসে। বিভিন্ন এনজিও করে মানুষকে হয়রানি করা টয়লেট নির্মান করার নামে টাকা নিয়ে নিম্নমানের টয়লেট তৈরী করে দেওয়া সহ বিভিন্ন অনিয়ম করতে থাকে।
ফারজানা কাউন্সিলর হবার পর তোফায়েল নামের একজন ব্যাক্তির সাথে সব সময় তাকে ঘুরতে দেখা যায়, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে তোফায়েলের সাথে তার সম্পর্ক বলে চাচাতো ভাই খালাতো ভাই তবে তাদের একসাথে চলাফেরা দেখে অনেকেই সন্দেহ করে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে। এছাড়াও তোফায়েল গার্মেন্টস প্রশিক্ষণ সেন্টার করে রেজিষ্ট্রেশনের নামে অনেকের কাছে থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী সদর ২ আসনে নির্বাচন করার জন্য সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নমিনেশন তুলে সাধারন মানুষের নাম ঠিকানা মোবাইল নাম্বার দিয়ে তার সমর্থনে নমিনেশন ফরমের সাথে সংযুক্ত করে, কিন্তু নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে ঐ সকল ব্যাক্তিদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা তোফায়েল কে চিনে না বা তাকে সংসদ সদস্য নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে মানেন না বলে মতামত দেয় এবং তারা বলে মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা হক আমাদের নাম ঠিকানা মোবাইল নাম্বার নিয়ে গেছে অন্য কথা বলে, সেখানেও ফারজানা হক ও তোফায়েল সরাসরি নির্বাচন কমিশনের সাথে প্রতারণা করে এবং তোফায়েল এর প্রার্থীতা বাতিল হয়। পরবর্তী ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনে ফারজানা আইনি জটিলতায় নির্বাচন থেকে ছিটকে পরে । তবে তাদের প্রতারণার কার্যক্রম বন্ধ থাকে না। কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় তার বাসায় কার্যালয় ছিলো পরবর্তীতে বাসাটা এনজিও অফিস করে এবং ভিতরের রুমে নাহার নামক একজন দেহব্যবসায়ী মহিলাকে ভাড়া দিয়ে সেই বাসায় দেহব্যবসা চালায় আর এ অপকর্মে ফারজানা ও তোফায়েল সহায়তা প্রদান করে। এলাকাবাসী জানান নাহার নামের মেয়েটা সেই সময় তোফায়েলের গার্মেন্টস প্রশিক্ষণ ট্রেনিং সেন্টারের নিচে ( ঝাউতলা মোড়ে আমানা হাসপাতালের নিচে) টেইলার্সের দোকান ছিলো সেই সুত্রে ফারজানা ও তোফায়েলের সাথে পরিচয়, নাহার বহু দিন থেকেই বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে দেহব্যবসা চালাতো।পরবর্তীতে ফারজানা ও তোফায়েল ঐ মহিলাকে দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে সহায়তা প্রদান করে।
প্রতারণার অভিযোগে আটক হবার পূর্বেও রেজাউল ইসলাম ওরফে ডলার ঘটকালি কাজ করছিলো। এলাকার মানুষের মাঝে তাদের বিবাহ যোগ্য ছেলেমেয়েদের ভালো ভাবে বিয়ে দিয়ে দিবে এবং তার অনেক পরিচিত আছে বলে যাতায়াত খরচ সহ বিভিন্ন খরচের নাম করে বিভিন্ন এমাউন্টের টাকা নিয়ে আর যোগাযোগ করে না। তবে এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্য মতে রেজাউল ইসলাম ওরফে ডলার এমন অপরাধ মূলক কাজের সাথে জড়িয়ে পরেছে তার বউ ফারজানা হকের জন্য।
ফারজানা তোফায়েল প্রতারণা চক্র তাদের অপকর্মকে সুরক্ষিত করার জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হয়। এদিকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তোফায়েল বিভিন্ন ভাবে প্রতারিত ভুক্তভোগীদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার করে হয়রানি করছে।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১