মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

প্রতিনিয়ত বিতর্কের জন্মদিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবন ক্ষীন করছেন ডাবলু সরকার

প্রতিনিয়ত বিতর্কের জন্মদিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবন ক্ষীন করছেন ডাবলু সরকার

হুমায়ুন কবীর, রাজশাহীঃ
যেভাবে ঝড়ের গতিতে রাজশাহীর রাজনীতিতে উত্থান হয়েছিলো ঠিক সে ভাবেই পতন হতে চলেছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের।একের পর এক তার বিতর্কিত কর্মকান্ড শেষে অশ্লীল ভিডিও ইস্যু নিয়ে অতি শীঘ্রই আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও গতকাল ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখের প্রচার ব্যানারে ডাবলু সরকার রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির ছবি ছাড়া ব্যানার তৈরি করে প্রচার করায় আবারো নগরজুড়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নিত্যআলোচনায় স্থান পাচ্ছে ডাবলু সরকারের পূবের বিতর্কিত কর্মকান্ডগুলো। অন্যদিকে ভাব ও গতিতে ডাবলু নিজেকে সচল রাখার চেষ্টা করলেও দলীয় নেতাকর্মীরা ক্রমশ সরে যাচ্ছেন তার চারপাশ থেকে। অনেকটা একা হয়ে পড়ছেন তিনি। বিভিন্ন কৌশলে প্রশাসনের লোকেরাও ডাবলু সরকারকে এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে ।

জানা যায়, সর্বশেষ ২০২০ সালের ১ মার্চ অনুষ্ঠিত ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। করেছেন ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। একসময় ছিলেন বিআরটিসি বাসের টিকিট মাস্টার। বর্তমানে নগরীজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে তার জমিজমা, টাওয়ার, মার্কেট, ভবনসহ বিপুল বিত্তবৈভব। তবে সম্প্রতি গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে তার অশ্লীল ও আপত্তিকর ভিডিও। এটি এডিট করা ও পরিকল্পিত দাবি করে ডাবলু সরকার ইতোমধ্যে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা করলেও এখন পর্যন্ত তার ভিডিওটি এডিট করা প্রমান করেতে পারেনি ডাবলু সরকার। ডাবলু সরকারের এমন নৈতিক স্খলনজনিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন তাঁকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সকল কর্মকাণ্ড থেকে বহিষ্কারের দাবি জানায়। এ ছাড়াও ‘রাজশাহী আওয়ামী পরিবার, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ব্যানারেও ডাবলু সরকারের এমন নৈতিক স্খলনজনিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে ২মার্চ রাজশাহী মহানগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ রাজশাহী বারের আইনজীবী আবু রায়হান মাসুদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও সমাবেশ করলে ডাবলুর অনুসারীরা ডাবলু বিরোধী আন্দোলনের ব্যানার কেড়ে নিয়ে যান। এ ছাড়াও বিভিন্ন ভাবে আন্দোলন বন্ধ করা চেষ্টাও করেন ডাবলুর অনুসারীরা।

আইনজীবী আবু রায়হান মাসুদ বলেন, ডাবলু সরকার মহানগর আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা। এই নেতার যে ভিডিও ফাঁস হয়েছে তা খুবই আপত্তিকর। ভিডিওটি যে নকল নয় সেটা ডাবলু সরকার প্রমাণ করতে পারেননি। আমরা দাবি করছি ভিডিওটি যদি প্রকৃত হয়; তাহলে ডাবলুর বিরুদ্ধে আইনি ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা ভিডিওতে যা দেখছি তা সঠিক হলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে তার থাকার কোনো অধিকার নেই। সচেতন রাজশাহীবাসী তার অপসারণ দাবি করছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘এই কলঙ্ক যেন রাজশাহী আওয়ামী লীগ, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান ও প্রধানমন্ত্রীর গায়ে না লাগে। নির্বাচনের বছরে যেন কারও কাছে বিব্রত হতে না হয়, সে জন্য ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীর এক নেতা বলেছেন, ডাবলু বিশেষ কারও পরামর্শে ভিডিও ফাঁস হওয়ার পরেই মামলা ঠুকে দিয়ে বাঁচতে চেয়েছেন। কিন্তু তিনি কি প্রমাণ করতে পেরেছেন, ভিডিওটি নকল? কাজেই এটি কৌশল গ্রহণের অপচেষ্টা মাত্র। তাকে শুধু দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার নয়, আইনের আওতায় আনা উচিত। আমরা অপেক্ষায় আছি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ডাবলু যেহেতু আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন তাই এই মুহূর্তে দলের করণীয় দেখছি না। এরপরও যদি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন বিষয়টি তদন্ত হওয়া দরকার। সেটা হতে পারে।

উল্লেখ্য গত ২০২০সালে রাজশাহীতে সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তি দখল, জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ভিত্তিত্বে অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।দুদকে পাওয়া অভিযোগে বলা হয়, রাজশাহীর বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা রাজারকারপুত্র ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের বাড়িঘর দখল ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন ডাবলু সরকার। অথচ তিনি ছিলেন বিআরটিসির বাসের টিকিট বিক্রেতা। তারা জানান, ডাবলু সরকারের বাবা রশিদ সরকার রাজশাহীর কুখ্যাত রাজাকার আবদুস সাত্তার ওরফে টিপুর সহযোগী ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, ডাবলু সরকার আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তার পরিবারের সবাই আগে মুসলিম লীগ ও পরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ডাবলুর ভগ্নিপতি মীর ইকবালের হাত ধরে ডাবলু আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে। রাজশাহীর কুমারপাড়ায় ‘সখিনা বোর্ডিং’ দখল করে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে দেশ ছাড়া করে ডাবলু। পরে তিনি সেখানে ১৬ তলা বিশিষ্ট সরকার টাওয়ার নির্মাণ করেন। রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে আবদুল জলিল বিশ্বাস মার্কেটটি নামমাত্র মূল্যে দখলে নিয়েছেন ডাবলু। রাতের আঁধারে ছোটবনগ্রামের বস্তিবাসী উচ্ছেদ করে ১২ বিঘা জমি দখল করেছেন। কুমারপাড়ার বিআরটিসির ডিপোর জায়গাটি এক হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে দখলে নেন ডাবলু। সিএন্ডবি মোড়ের পাশেই জায়গা দখল করে তিন তারকা হোটেল নির্মাণ করছেন তিনি। সেখানে তার দুই অংশীদার বিএনপি নেতা শিমুল ও এনায়েত। এছাড়া কুমারপাড়ায় রঘুশাহ নামের এক হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে পাঁচ কাঠা জমিও দখল করে নেন ডাবলু।
এদিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট করার জন্য দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে মনোনয়ন তুলে দলের প্রতি অশ্রদ্ধা জানান বলেও অভিযোগ দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের। ডাবলুর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবন কেমন হবে এই প্রশ্নের জবাবে অনেকেই বলছেন ডাবলু সরকারের রাজনৈতিক জীবন ক্ষীন হয়ে যাচ্ছে।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১