মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

কয়রায় ভাসমান সেতু নির্মাণ, দেখতে শত শত উৎসক জনতার ভীড়

কয়রায় ভাসমান সেতু নির্মাণ। দেখতে শত শত উৎসক জনতার ভীড়

মোক্তার হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পাথরখালী খালের উপর পাথরখালী মিলনী যুব সংঘের সদস্যরা ও সুন্দরবন কোয়ালিশনের দাতা সংস্থার আর্থিক সহায়তায় সিএনআরএস এর তত্ত্বাবধানে ১৯৮- ফুট দীর্ঘ একটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

পানির মধ্যে সারি বদ্ধ বাঁশের খুটি লাল , সবুজের রংঙের ঝিলকিনের মাঝখানে পানিতে ৭০টি আড়াইশ’ লিটারের ড্রামের ওপর ভাসছে ১৯৮ ফুট দীর্ঘ এই ভাসমান সেতুটি। আশপাশের পাঁচ গ্রামের মানুষেরা ভীড় জমাচ্ছে এই দৃশ্য অবলোকন করার জন্য।যাহা তাদের যোগাযোগের জন্য সহজ করেছে এটি। পাথরখালী মিলনী যুব সংঘের সদস্যরা প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর কাঠ জোড়া লাগিয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছে।

মিলনী যুব সংঘের সভাপতি অভিজিৎ মহলদার বলেন,আমাদের সকল সদস্যরা ও সুন্দরবন কোয়ালিশনের মাধ্যমে দাতাসংস্থা শেয়ারট্রাষ্ট ও স্টাট ফান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় সিএনআরএস এর তত্ববধানে গত ১৫ মার্চ ভাসমান সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।

গতকাল দুপুরে নির্মাণ কাজ শেষ হলেই সেতৃটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। উদ্বোধনী সময়ে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার নুরুল ইসলাম, সুন্দরবন কোয়ালিশনের ব্যাবস্থাপক মোঃ সাইদুর রহমান ও সিএনআরএস প্রতিনিধি মোঃ হারুন অর-রশিদ।
খুলে দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেতুটির চিত্র ছড়িয়ে পড়লে শতশত উৎসক জনতা দেখতে ভীড় জমাচ্ছে সেখানে।
উল্লেখ্য,১৯৮ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করতে ৭০ টি আড়াইশ’ লিটারের প্লাস্টিকের ড্রাম, ১৩০ সিএফটি শিরীষ কাঠ, ৩০টি বাঁশ এবং ২০ কেজি পেরেক ব্যবহার করা হয়েছে। সেতুটির কাজ শেষ করতে ব্যয় হয়েছে দুই লাখ সাত হাজার টাকা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২২০ মিটার চওড়া একটি খাল আছে, যেটি পাথরখালী খাল নামে পরিচিত। খালটির দুই পারে পাঁচটি গ্রাম। গ্রামগুলোর মানুষ চলাচলের জন্য এতদিন নৌকার ওপর ভরসা করত। খালের উত্তর পারের বতুল বাজার, পাথরখালী, মাঝেরপাড়া গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও দৈনন্দিন হাটবাজারের জন্য নৌকায় করে দক্ষিণ পারের রত্নাঘেরী গ্রামে, পাথরখালী উত্তরপাড়া ও বড়বাড়ী বাজারে আসতে হয়। এছাড়া দক্ষিণ পারের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, মৎস্য কাজ, কৃষি কাজসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ওপারে যায়। এই পাঁচ গ্রামের মানুষের যোগাযোগের ভোগান্তির কথা ভেবে ভাসমান সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

পাথরখালী মিলনী যুব সংঘের সাধারণ সম্পাদক দীনবন্ধু মন্ডল বলেন, খালের ওপর এক সময় একটি সেতু ছিল। সেতুটি ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় ভেঙে যায়। সে কারণে খালের দু’পারের মানুষের চলাচলে নৌকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। মানুষের ভোগান্তী লাঘবে তৈরী করা হলো এই ভাসমান সেতু।
উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানী বলেন, এই ভাসমান সেতু দিয়ে প্রতিদিন অনেক লোক যাতায়াত করতে পারবে। এ ধরনের কাজের জন্য স্থানীয় যুবকদের উৎসাহী করা হবে। সেতু পেয়ে দারুণ খুশি এলাকাবাসী। মাঝেরপাড়া গ্রামের মহিবালা মুন্ডা বলেন, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো রাস্তা এখানে ছিলনা। কী যে কষ্ট ছিল, সেটা কেবল এ অঞ্চলের মানুষই বুঝতে পারেন। সেতুটি হওয়ায় মানুষের অনেক উপকার হয়েছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃমমিনুর রহমান বলেন, এলাকার যুবকেরা সম্মিলিতভাবে অল্প সময়ের মধ্যে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভাসমান সেতুটি নির্মাণ করেছে। তাদের এই উদ্যোগ নিশ্চয়ই একটি ভাল কাজ। তবে পাথরখালী খালের ওপর দীর্ঘ স্থায়ীভাবে একটি সেতু নির্মাণ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১