রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
মোস্তাফিজুর রহমান সুজনঃ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) ভর্তি স্থগীতের ঘটনায় আন্দোলন করতে গিয়ে মারধোরের শিকার হয় আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মারধোরের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পবিপ্রবি ছাত্রলীগের হাতে মারধোরের শিকার হয়েছেন বাংলা ট্রিবিউন ও ডেইলি সানের পটুয়াখালী প্রতিনিধি আবদুল কাইউমসহ একাধিক সংবাদকর্মীরা। পরে উল্লেখিত ঘটনায় সংবাদ না করার শর্তে মুচলেখা দিলে মধ্যরাতে তাকে ছেরে দেয় পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার ও ছাত্রলীগ। শুধু তাই নয়,সংবাদ কর্মীদের ছেরে দেয়ার মুহুর্তে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের তথ্য-উপাত্ত মুছে দেয়া হয় এবং ল্যাপটপ ভেঙ্গে ফেলা হয়। সকল প্রকার এ ঘটনায় সংবাদ প্রচার হলে সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে নারী গঠিত মামলাও ঠুকে দেয়ার হুমকী দেন রেজিস্টার। পবিপ্রবি ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেকের ইন্দোনে এসব হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন হামলার শিকার নারী শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মীরা।
বুধবার ( ৫ এপ্রিল) রাত ৯ টা থেকে রাত একটা পর্যন্ত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) এঘটনা ঘটে।
পবিপ্রবি‘র সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী বলেন-সম্প্রতি সিজিপিএ ও জিপিএ মানদন্ড তুলে নিয়ে মাষ্টার ডিগ্রি প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে স্নাতকোত্তরের সুযোগ দেন পবিপ্রবি প্রশাসন। একদিনের মাথায় কোনো কারন ছারাই ভর্তি সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলে পবিপ্রবি প্রশাসন। এতে ভর্তি বঞ্ছিত শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের নামে। যা নিয়ে পবিপ্রবি ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে হঠে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে পবিপ্রবির ভিসি স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত এর বাসভবনে অবরুদ্ধ করা হয়। ক্যাম্পাসে ভিসি অবরুদ্ধের খবর ছরিয়ে গেলে ভিসির পক্ষে মাঠে নামে ছাত্রলীগ ও বহিরাগতরা। এসব ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পবিপ্রবি ছাত্রলীগের হাতে মারধোরের শিকার হয় সংবাদকর্মীরা।
হামলার শিকার পবিপ্রবি কৃষি বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারে শিক্ষার্থী তাহিরা লিজা বলেন-গত ৫ এপ্রিল স্নাতকোত্তর ভর্তি জটিলতা নিরসনের জন্য শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচীতে যোগ দিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কবি বেগম সুফিয়া কামাল হল থেকে বের হই। এসময় মেধা,ফারজানা, প্রীতি, অনন্যা, সারন,বিন্তি,নাজিফা,সুস্মিতা, আমরিন,সুমাইয়া,স্বর্না বিভিন্ন অস্ত্রসশ্র নিয়ে আমাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাকে গণরুমে তুলে নেন। গনরুমে নেয়ার পরে তারা আমার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। হামলাকালে তারা বলেন-পবিপ্রবি ছাত্রলীগ শাখার সাধারন সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেক ভাইয়ের নিষেধ থাকা সত্তেও তুই কর্মসুচীতে যোগ দেয়ার শাস্তি তোমাদের ভোগ করতে হবে। হামলার পরে সহপাঠিরা পবিপ্রবি হেলথ কেয়ার সেন্টারে নিয়ে গেলে তারা আমাকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। এসময় আমাদের সহায়তা করতে এসে মারধোরের শিকার হয় কয়েকজন সাংবাদিক।
এদিকে এসব বিষয় পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে পবিপ্রবিতে ছুটে যায় ডেইলী সান ও বাংলা ট্রিবিউন পত্রিকার প্রতিনিধি আবদুল কাইউম,সময় টিভির ক্যামেরা পার্সন সুজন দাম, বার্তা বাজারের মো.নয়ন মৃধা,আনন্দ বাজার ও বিডি২৪ লাইভ এর স্বপ্নীল দাস, রাকিবুল ইসলাম তনুসহ একাধিক সংবাদকর্মীরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আন্দোলরত নারী শিক্ষার্থীরা তোপের মুখে পরে অবরুদ্ধ হয়।
এসব সংবাদকর্মীরা জানান, রাত ৯টার দিকে ভিসি অবরুদ্ধের ভিডিও চিত্র নিতে গেলে পবিপ্রবি ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি আশ্রাফুল আলম রুবায়েতসহ কয়েকজনে মারধোর করেন রাকিবুল ইসলাম তনুকে । এসময় তনুর মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন ছাত্রলীগ নেতা রুবায়েত। পরে রাত ১০ টারদিকে বেগম সুফিয়া কামাল ছাত্রবাস থেকে নারী শিক্ষার্থীদের ডাক-চিৎকার শুনে উপস্থিত সংবদকর্মীরা এগিয়ে গেলে হামলাকালীদের তোপের মুখে পরে মারধোরের শিকার হয়। সংশ্লিষ্টরা বলেন- পবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেতাদের হস্তক্ষেপে নারী ছাত্রাবাসের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হলে বেশ কয়েক নারী শিক্ষার্থীরা সংবাদকর্মীদের কাছে সহায়তা চান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য বাংলা ট্রিবিউন ও ডেইলি সানের সাংবাদিক আবদুল কাইউম মুঠোফোনে ভিসি স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত’কে কল দিলে তিনি রিসিভ করেনি। পরে শিক্ষার্থীদের ডাকে অবস্থারত সংবদকর্মীরা ছাত্রবাসের গেটে গিয়ে নারী শিক্ষার্থীদের মারধোরের দৃশ্য ধারন করার চেস্টা করেন। এতে হামলাকারীরা সংবদকর্মীদের মোবাইল কেরে নেয়ার চেষ্টা করেন। পরে পরিস্থিতির অবনতি দেখে সংবাদকর্মীরা দুমকী প্রেসক্লাব চত্বরে অবস্থান করেন। এর কিছুক্ষন পরে পবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেক ও পবিপ্রবি প্রশাসনের বরাত দিয়ে ডেইলী সান ও বাংলা ট্রিবিউন এর প্রতিনিধি আবদুল কাইউমকে তুলে নেন পবিপ্রবির ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি রুবায়েত ও সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব বুখারি এবং তাদের লোকজন। সাংবাদিক কাইউমকে বেগম সুফিয়া হলের সামনে তুলে নিয়ে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারধোর শুরু করেন। যেখানে উপস্থিত ছিলেন পবিপ্রবির রেজিস্টার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসুসহ একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এসময় কাইউমের কাছ থেকে কর্মরত মিডিয়ার আইডি কার্ড ও মোবাইল কেরে নেয়া হয়। এসময় সাথে থাকা ল্যাপটপ ভেঙ্গে ফেলা হয়। মারধোর শেষে কাইউমের ব্যবহৃত মোবাইল থেকে তথ্য মুছে ফেলে হয়। এসব ঘটনার সায় দেন রেজিস্টার সন্তোষ কুমার বসু। সাংবাদিক আবদুল কাইউমের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেয়ার পরামর্শও দেন হলেন শিক্ষার্থীদের। দুই ঘন্টার পরে আলোচ্য ঘটনার সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে কাইউকে ছেরে দেন রেজিস্টার ও ছাত্রলীগ। ছেরে দেয়ার মুহুর্তে সংবাদ হলে নারী গঠিত অভিযোগে সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলারও হুমকী দেন রেজিস্টার।
পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের নিয়মিত সদস্য, বাংলা ট্রিবিউন ও ডেইলি সানের সাংবাদিক আবদুল কাইউম বলেন, আন্দোলনে যোগ দিতে আসা নারী শিক্ষার্থীদের বেগম সুফিয়া কামাল হলের সামনে মারধর করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি দেখে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মুঠোফোনে কল দিয়েছি,তবে সে ফোন ধরেনি। পরে নারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আপনারা এদিকে আসেন দেখেন সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধর করে মেরে ফেলা হচ্ছে, আপনারা বাঁচান। পরে সেই দৃশ্য ধারণ করতে গেলে আমার উপরে চড়াও হয় ৪/৫ জন শিক্ষার্থী । এসময় তারা আমার মোবাইল কেরে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে দুমকি প্রেসক্লাবের চত্বরের একটি দোকানে অবস্থান করে নিউজ লিখতেছি।এসময় সেখানে গিয়ে পবিপ্রবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে টানা হেচরা করে। পবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেক ও পবিপ্রবি প্রশাসনের বরাত দিয়ে পবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব উদ্দিন বুখারীর মোটরসাইকে জোরকরে নিয়ে যায় বেগম সুফিয়া কামাল হলের সামনে। সেখানে নিয়ে পবিপ্রবি রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু ও অন্যান্য শিক্ষদের সামনে মারধর করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রুবায়েত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিহাব উদ্দিন বুখারীসহ অনেকে। পরে আমি একজন শিক্ষককে জড়িয়ে ধরলে অন্যান্য শিক্ষকরা আমাকে উদ্ধার করে। এসময় আমার মোবাইল ও গলায় থাকা আইডি কার্ড নিয়ে যায় এবং সাথে থাকা ল্যাপটপ ভেঙ্গে ফেলে ছাত্রলীগ। পরে অনেক সময় আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। দুইঘন্টা পরে আমাকে মারধর করা হয়নি এমন ভিডিও স্বীকারোক্তি নিতে আবার নির্যাতন করেন ছাত্রলীগ। তাদের শিখানো কথা না বলায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেয়ার পরামর্শও দেন হলেন নারী শিক্ষার্থীদের। পরে নির্যাতনের এক পর্যায়ে ভিডিও স্বীকারোক্তি ও মুচলেকা নেয় ছাত্রলীগ। পরে এসব ঘটনার সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে আমাকে ছেরে দেন রেজিস্টার ও ছাত্রলীগ। ছেরে দেয়ার মুহুর্তে সংবাদ হলে নারী গঠিত অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে মামলার হুমকী দেন রেজিস্টার ও ছাত্রলীগ।
এবিষয় জানতে ছাত্রলীগ নেতা আশ্রাফুল আলম খান রুবায়েতকে কল দিলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কলটি কেটে দেন।
পবিপ্রবি ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেককে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
পবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগর বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবিদাওয়াতে আন্দোলন করতেই পারে। এখানে বাধা ও মারধরের সুযোগ নাই। পবিপ্রবি প্রশাসনের পক্ষ নিয়ে একটি মহল সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে। এবং একই ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের উপরেও হামলা করেছে। এটার বিচার হওয়া উচিৎ।
এসব বিষয় পবিপ্রবির রেজিস্টার প্রফেসর ড. সন্তোস কুমার বসু বলেন, কিছু সংবাদকর্মীরা ছাত্রী হলে প্রবেশ করে মারামারির ভিডিও করছে। এতে তারা বাধার মুখে পরেছে। এখানে কোনো শিক্ষার্থী অথবা সাংবাদিকে মারধোর করা হয়নি। শুধু ধাক্কা-ধাক্কি হয়েছে। আর কোনো শিক্ষার্থীকেও চিকিৎসা নিতে হয়নি।
এবিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত কে, মুঠোফোনে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।