শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

রাজশাহীতে মিথ্যা মামলার বেড়াজালে নিহতের পরিবার

হুমায়ুন কবীর রাজশাহীঃ
রাজশাহীতে ইটভাটা শ্রমিক স্বামী কামাল হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করায় আসামীদের হুমকী ও মিথ্যা মামলায় দিশেহারা হয়ে পরেছে নিহত কামালের স্ত্রী সানোয়ারা বেগম,তার ১৭বছরের ছেলে আরিফুজ্জামনসহ পরিবারের সদস্যরা। মিথ্যা মামলা ও পুলিশের হাত থেকে রেহায় পেতে ছুটে বেরাচ্ছে এই অসহায় পরিবারটি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের কাছে তাদের পরিবারের ওপরে করা মিথ্যা মামলা দুটো সঠিক ভাবে তদন্ত করে তাদেরকে এই হয়রানী থেকে মুক্ত ও মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোড় দাবী জানিয়েছেন এই অসহায় পরিবারটি।

নিহত কামালের স্ত্রী সানোয়ারা বেগম বলেন, আমার স্বামী কামালকে হত্যাকারী তার ছোট ভাই আনারুল ইসলাম দির্ঘদিন থেকে গরু চুরি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ছিলেন। সে বিভিন্ন জেলা থেকে চুরি করা গরুগুলো বিভিন্ন বাড়িতে রাখতেন। পরে হাটের দিন সেগুলো বিক্রি করতেন। এমন ঘটনায় পানা থানা তাকে একবার গরুচুরির অপরাধে চোরাইগরুসহ আটক করেছিলেন। এ বিষয়ে গোটা গ্রামের লোকজন জানে। তার এ গরু চুরি ব্যবসায় বাঁধা দেয়াতে আমার স্বামী কামলকে সে ও তার পরিবারের সদস্যরা নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার ঘটনায় আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করায় আমার,আমার ছেলে ও কামাল হত্যা মামলার সাক্ষীদের ওপরে দুইটি মিথ্যা মামলা করেন। আমি মিথ্যা মামলাদুটো সঠিক ভাবে তদন্ত করে তাদেরকে এই হয়রানী থেকে মুক্ত ও মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোড় দাবী জানাচ্ছি।

জানা যায়, গত ২২সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের বথুঁয়া গ্রামে ইটভাটা শ্রমিক কামাল হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা ঘটনায় বিচার চেয়ে স্ত্রী মোসা: সানোয়ারা বাদী হয়ে নিহত কামালের ছোট ভাই আনারুল সহ ৭জনের নাম উল্লেখ করে চারঘাট মডেল থানায় মামলা করেন । সেই মামলায় সাক্ষী করা হয় ০১ নিহত কামালের ছেলে অরিফুজ্জামান(১৭) একই গ্রামের ০২ ইনসান এর ছেলে আয়নাল(৩০),০৩ জামাল উদ্দিন এর ছেলে মাসুদ রানা(৩০), ০৪ রবিউল ইসলামের স্ত্রী তানিয়া বেগম(৪০), ০৫ জামাল উদ্দিন এর ছেলে রবিউল ইসলাম(৪০)কে।
এ মামলাকে কেন্দ্র করে বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের হয়রানী করতে কামাল হত্যা মামলার তিন নম্বর আসামী নাহিদা আকতার বাদী হয়ে কামাল হত্যা মামলার বাদী মোসা: সানোয়ারাসহ মামলার সাক্ষীদের জড়িয়ে তার বাড়ি ঘর লুটপাটের একটি মিথ্য মামলা করেন। যা চারঘাট থানায় তদন্তাধিন রয়েছে।

অন্যদিকে গত২৭জানুয়ারী ২০২৩ইং কামাল হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামী মোসা: নাসিরা বেগম(৪৫) রাজশাহী জেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী (৪) আদালতে কামাল হত্য মামলা ঘটনার ৫নম্বর সাক্ষী রবিউল(৪৫),তার ভাই এনামুল (৪০), এনামুলের স্ত্রী মেরিনা,কামালের ছেলে ০১ নম্বর সাক্ষী অরিফুজ্জামান, কামাল হত্যা মামলার বাদী তার স্ত্রী মোসা সানোয়ারার নামে একটি মামলা করেন।

মামলার বিবরনে মোসা: নাসিরা বেগম উল্লেখ করেন তার বাসায় আসামীগনেরা গত ২৪ ডিসেম্বর সন্ধায় হামলা চালিয়ে মোসা: নাসিরা বেগমকে তলপেটে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে তাকে ও তার মামলার সাক্ষীদের গলায় হাসুয়া দ্বারা কোপ মারিয়া হত্যার হুমকি দেয়ার তথা উল্লেখ থাকলেও ২৪ ডিসেম্বর মোসা: নাসিরা বেগম ও তার কোন সাক্ষী কোন চিকিৎসাপত্র মামলায় উল্লেখ বা দাখিল করেন নি। বরং মামলায় উল্লেখিত ঘটনার জের দেখিয়ে গত ২৬ডিসেম্বর চারঘাট এলাকার দি মেডিনোভা ডিজিটাল ডায়াগনষ্টিক এ্যন্ড ডায়াবেটিক সেন্টার, ৩০ডিসেম্বর ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল লক্ষীপুর শাখা ও ২০২৩সালের ৬থেকে ৮জানুয়ারী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মোট তিনটি চিকিৎসা পত্র দাখিল করেছেন। সেই চিকিৎসা পত্রগুলো নিয়ে প্রথমে চারঘাট উপজেলার দি মেডিনোভা ডিজিটাল ডায়াগনষ্টিক এ্যন্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে যোগাযোগ করলে সেখানকার পরিচালক চিকিৎসাপত্র অনুযায়ী তাদের রেজিষ্টার ও ক্যাশম্যমো দেখে বলেন চিকিৎসা পত্র অনুযায়ী রোগীর কোন সমস্যা হয়নি।

এদিকে ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল লক্ষীপুর শাখায় নাসিরা বেগমের চিকিৎসাপত্র নিয়ে সেখানে গেলে সেখানকার কর্ত্যব্যরত চিকিৎসকও একই কথা বলেন।
এবার সর্বশেষে ৬থেকে ৮জানুয়ারী সরকারী হাসপাতাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির কাগজে দেখা যায় ভর্তির তারিখে কাঁটা-ছেরা করা। এছাড়াও চিকিৎসা পত্রে ঔষদ সেবনের নিয়ামাবলি লেখা দেখে কেউ বলবেনা সেটি কোন শিক্ষিত জনের হাতের। এমন চিকিৎসা পত্রটি নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গেলে ওই দিনে নাসিরা বেগম নামে কোন রোগী ভর্তির কোন খোঁজ মেলেনি। এমনকি চিকিৎসা পত্রে পুলিশ কেস লিখা কোন সীল ছিলোনা। অথচ ১৬ সপ্তাহের গর্ভবতীর পেটে লাথি মারার অভিযোগ করলেও পাশের বাড়ির কেউ ঘটনার বিষয়ে কিছুই বলতে পারছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক তথ্যে তার প্রতিবেশী জানান “আমার বাড়ি ও তার বাড়ির দূরত্ব ২ হাত অথচ ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানতে পারলাম না। কোর্টে মামলা হবার পরে জানতে পেরেছি এসব মিথ্যা বানোয়াট মামলার কথা।

চারঘাট ১ নং ওয়ার্ড শলুয়া ইউনিয়নের মেম্বার এজাজুল হক বলেন, “কামাল অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। আর তার ভাই আনারুল ইসলাম গরু চোর সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ছিলেন। তার এমন কর্মকান্ডে বাঁধা হওয়াতে খুন হতে হয় কামালকে।কামাল হত্যা মামলার ৩ নম্বর আসামী নাহিদা আকতার ও ৬ নম্বর আসামী মোসা: নাসিরা বেগম পৃথক দুইটি মামলা করেছেন নিহত কামালের পরিবার ও তার হত্যা মামলার স্বাক্ষীদের ওপরে সে দুইটি মামলার একটিও সঠিক না। তিনি আরো বলেন লোকমুখে শুনছি কামাল খুনের মামলা তুলে নিলে তারাও মামলা তুলে নিবে।’

এ বিষয়ে চারঘাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাবুবুল আলম এর সাথে কথা বললে তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এমন মিথ্যা মামলা দিয়ে একটি পরিবারকে হয়রানী করার কারন জানতে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ ইফতে খায়ের আলম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার ক্ষেত্রে আমরা নিরপেক্ষ ও সুষ্টভাবে তদন্ত করে থাকি সেই সাথে আমাদেরও যারা তদন্তকারী কর্মকর্তা থাকে তাদেরকেও সেই ভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়। তার পরের আপনাদের মাধ্যমে জানা অভিযোগের বিষয়টি আমরা আবারো খতিয়ে দেখবো বলে জানান তিনি। তবে এতো কিছুর পরও একটা বিষয় নিয়ে ধোঁয়াশা দূর হচ্ছে না, গর্ভবতী নাসিরার ১৬ সপ্তাহের বাচ্চার হত্যাকারী কে? খুনের মামলা থেকে বাঁচার জন্যই কি গর্ভের সন্তান কে নিজে হত্যা করে বাদীপক্ষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে?

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০