শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
হুমায়ুন কবীর রাজশাহীঃ
আলোচনা সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছে না রাজশাহী ১ আসন (গোদাগাড়ী – তানোরের) সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর।
এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তার নিজের চেয়ারে বসে থেকে মোবাইলে ভিডিও করছেন। আর এক এক করে জনপ্রতিনিধিরা এসে এমপির সামনে টেবিলে রাখা পবিত্র কোরআন শরীফে হাত রেখে শপথ নিয়েছেন। কোরআন শরীফে হাত রেখে বলতে শোনা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ, নৌকা ও স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরোধীতা বা তাদের সঙ্গে বেইমানী করবে না।
আগামী নির্বাচনে নিজের পক্ষে রাখতে জনপ্রতিনিধিদের পবিত্র কুরআন শরীফে হাত রেখে শপথ করালেন রাজশাহী-১ তানোর-গোদাগাড়ী আসনের সংসদ সদস্য এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। গত শনিবার রাতে সংসদ সদস্যের নিজ কার্যালয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী তার নির্বাচনি এলাকার ১২ জন দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কোরআন শরীফ ছুঁয়ে আনুগত্যের শপথ করান। যার ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ভাইরাল হয়ে গেছে।
পবিত্র কোরআন শরীফে হাত রেখে সাংসদ ফারুক চৌধুরীর প্রতি আনুগত্যের শপথ করার মধ্যে রয়েছেন- গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র ওয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, মাটিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা, দেওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল, গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা, মোহনপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম, বাসুদেবপুর ইউনিয়নের নজরুল ইসলামসহ তানোর ও গোদাগাড়ীর বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র।
এমপির প্রতি অনুগত থাকতে পবিত্র কোরআন শরীফে হাত রেখে শপথ করার বিষয়টি স্বীকার করে গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নৌকার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে এমপি তাদের শপথ করিয়েছেন। কারণ এখন এমপির পক্ষে থাকলেও ভোটের আগে অনেকেই সরে দাঁড়ায়। তাদের শপথ করাতে বাধ্য করা হয়নি বলেও দাবি করেন এই জনপ্রতিনিধি।
গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র ও গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়েজ উদ্দিন বলেন, আমরা সংসদ সদস্যের প্রতি আনুগত্য থাকার শপথ নিয়েছি। এসময় অনেকেই ছিল। সবাই কোরআন শরীফ ছুঁয়ে শপথগ্রহণ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইউপি চেয়ারম্যান জানান, দুইদিন আগে গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের ডেকে পাঠান এমপি। গত শনিবার সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের নিজের চেম্বারে সবাইকে নিয়ে যান। সেখানে কোরআন শরীফে হাত রেখে এক এক করে সবাইকে শপথ করান। প্রথমে তার অনুগতরা শপথ করেন। ফলে বাধ্য হয়ে অন্যদের শপথ করতে হয়েছে।
ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি বলেন, আমি কাউকে শপথ করাইনি। তারা নিজেরাই কুরআন শরীফে হাত রেখে শপথ করেছেন। আমি কাউকে বলিনি বা চাপও দিইনি। এটা কেউ বলতে পারবে না। তারা সবাই আলোচনা করে এক সঙ্গে ঢাকায় এসেছে। তারা আমার কাছে বলেছে আমরা সবাই এক সঙ্গে থাকতে চাই। প্রয়োজনে কোরআন ছুঁয়ে শপথ করব। এরপর নিজের ইচ্ছায় মন থেকে তারা শপথ করেছেন। দুই একজন যারা ভুল বলছিল তাদের আমি বলে দিয়েছি। এর বেশি কিছু না। এটি তারাও ভিডিও করেছে; আমিও ভিডিও করেছি।
বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার ও জেলা কমিটির উপ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান।
এ দিকে নিজের পক্ষে রাখতে জনপ্রতিনিধিদের কোরআন শরীফে হাত রেখে শপথ করানোর এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ভিডিও প্রকাশ হলে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের অনেক নেতারা এ বিষয় নিয়ে কোন কিছু জানে না বলে গণমাধ্যমকে জানান।
এদিকে পবিত্র কোরআন শরিফ নিয়ে শপথ করার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিশিষ্ট আলেম বলেন আল্লাহর নামে শপথ বা কসম করা ব্যাতীত যে কোন বস্তু বা ব্যাক্তি নিয়ে কসম করা কাবীরা গুনাহ এটা জন্য তওবা করা ও কাফ্ফারা দিতে হয়, তিনি আরও জানান এটা পবিত্র কোরআন শরিফ কে অবমাননা করা।
সংসদে নির্বাচিত সদস্যদেরকেও পবিত্র কোরআন শরিফ নিয়ে শপথ করা হয়না সেখানে শুধু মাত্র নিজের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য পবিত্র কোরআন শরিফ ছুঁয়ে শপথ করানো টা রাজনৈতিক ভাবে নিজের অবস্থান দূর্বল মনে করা।
সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর এমন বিতর্কীত বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে আবারও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ইতিপূর্বে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষকে মারধর করা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে দন্দ, সব মিলিয়ে তর্ক বির্তক সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছে না সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর।