শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
হুমায়ুন কবীর, রাজশাহীঃ
রাজশাহীতে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে প্রতারণা করে যাওয়া ভয়ংকর নারী প্রতারকচক্রকে গ্রেপ্তার করেছে রাজপাড়া থানা পুলিশ ।
আটক তিন প্রতারক হলেন, নগরীর লক্ষীপুর এলাকার রেজাউল ইসলামের স্ত্রী রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত আসনের সাবেক কাউন্সিলর ফারজানা হক (৪৬), একই এলাকার মৃত ফাইজুদ্দিনের ছেলে রেজাউল ইসলাম ওরফে ডলার (৫৩) ও উপশহর এলাকার মৃত আব্দুল হাফিজ খানের ছেলে তোফায়েল (৫৪)।
গত ২ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) মধ্য রাতে অভিযান পরিচালনা করে ঐ তিন প্রতারকদের আটক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন রাজপাড়া থানা পুলিশ।
রাজপাড়া থানা সুত্রে জানা যায়, প্রতারক চক্রের মূলহোতা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)এর ৩,৫,৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা হক সহ প্রতারক চক্রের বড় একটি সিন্ডিকেট মিলে একই জমি বিভিন্ন জনের নিকট বায়না করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ফারজানা হকের সঙ্গে জড়িত একাধিক প্রতারক উক্ত কাজে লিপ্ত আছে। তাদেরও গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করবেন বলে এমনটাই বলছে পুলিশ।
প্রত্যাক্ষদোষী এবং ভুক্তভোগী সুত্রে জানা যায়, পবা উপজেলা’র আলীগঞ্জ মৌজা, জেএল নং-আরএস ৬২ মধ্যে আরএস খতিয়ান নং ২২৪, প্রস্তাবিত খতিয়ান নং ৭১০৪, জমাবন্দি নং ৬৮৮৯, খারিজ কেস নং ৭৩৫/৯-১/২০২২-২০২৩, পরিমান ০.১৬২৯ একর জমি কয়েকজন ব্যক্তি’র নিকট বায়না করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বায়নামাকারী ভুক্তভোগী রাজপাড়া থানার বসুয়া এলাকার মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে আব্দুল খালেক (৪৪) বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় তিন প্রতারক আটক হয়। প্রতারকরা এখন জেলহাজতে আছে। আব্দুল খালেকের মতোই একই জমি নিয়ে বায়না মূলে প্রতারিত হয়েছেন মোল্লাপাড়া এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে সাজ্জাদ বাদশা, বহরমপুর এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে শফিকুল ইসলাম, আলীগঞ্জের জাইদুল ইসলামের ছেলে আব্দুল গাফফার, দামকুড়া হাট এলাকার কাজিম উদ্দিনের ছেলে শরিফুল ইসলাম।
ভুক্তভোগীদের দাবি, ওই নারী বায়নার মাধ্যমে আরও অনেক জনের কাছ থেকেই টাকা হাতিয়ে রেখেছেন। নগরীর উপশহর এলাকায় বি-৩০৫ বাড়িটি ফারজানা হক প্রতারণা’র মাধ্যমে দখল করে আছেন। তাঁর শ্বশুর বাড়িটিও বিভিন্ন মানুষের নিকট বায়না করে পরে ছেলে মেয়ে বিক্রি করতে দিচ্ছে না মর্মে কয়েক জনের সাথে প্রতারণা করেন। প্রতারণা শেষে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত না দিয়ে তাদের হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মামলাবাজ ফারজানার কথা না শুনলেই সাধরণ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে বহু মামলা আছে এবং সে নিজেও বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে বহু মামলা করেছেন।
সূত্র মতে, অভিযুক্ত ফারজানা গত বছরের ২৩ জুন ১০ লাখ টাকায় ৬ মাসের প্রথম বায়না করেন মোল্লাপাড়া এলাকার সাজ্জাদ বাদশা সাথে। এর দুই মাসের মাথায় ১৭ আগস্ট পূর্বের বায়না বাতিল না করেই চুপিসারে ৩৭ লাখ টাকায় দ্বিতীয় বায়না কররেন বহরমপুর এলাকার শফিকুলের সাথে। এদিকে দ্বিতীয় বায়নার ৪ মাস না যেতেই ২৯ ডিসেম্বর তারিখে ওই নারী আবারো গোপনে ৪৫ লাখ টাকার নিয়ে তৃতীয় বায়না করেন বসুয়া এলাকার আব্দুল খালেকের সাথে।
বিষয়টি বাদশা জানার পর ঝামেলায় না গিয়ে অভিযুক্ত ফারজানাকে টাকা ফেরত দিতে বলেন। গত ২৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে বাদশা ও ফারজানা পবা ভূমি সাবরেজিস্টারের অফিসে উপস্থিত হলে বিষয়টি তৃতীয় বায়নাকারী আব্দুল খালেক জানতে পারেন । তিনি সাবরেজিস্টারের অফিসে গিয়ে হাজির হয়ে ফারজানাকে হাতে নাতে ধরে ফেলে । এর পর ফারজানার সামনে হাজির হয় দ্বিতীয় বায়নাকারী শফিকুল।
এসময় পবা দলিল লেখকদের উঠানে এনিয়ে বিচার শালিশ শুরু হয়। আব্দুল খালেক বায়নার বাকি টাকা দিয়ে পুরো জমি রেজিস্ট্রি নিতে চান।
আব্দুল খালেক জানান, ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় ফারজানার প্রায় ১০ কাটা জমি নেয়ার জন্য বায়না দলিল করা হয়। বায়নার সময় তাকে ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। দলিল মতে, বাকি টাকা ৬ মাসের মধ্যেই তাকে বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে জানতে পারি ফারজানা অন্যদের কাছেও বায়না করে টাকা নিয়েছেন। তিনি এভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে রেখেছেন। এখন আমি বায়নার বাকি টাকা পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি নিতে চাইলে তিনি জমি দিতে রাজি না। এমনকি তিনি যার যার সাথে বায়না করেছেন তাদের কাউকেই জমি রেজিস্ট্রি দিতে চাচ্ছে না। এতে করে আমরা সবাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
শফিকুল হক জানান, তার সাথে ৩৭ লাখ টাকা বায়না করে প্রতারণার মাধ্যমে অন্যমানুষের কাছেও ফারজানা জমি বায়না দিয়ে টাকা নিয়েছেন। এই নারী প্রতারণার মাধ্যমে নানা মানুষের কাছ থেকে জমি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
বাদশা বলেন, আমার সাথে বায়না করে পরে আরও অনেকের সাথে বায়না করেছে দেখে ঝামেলা এড়াতে আমি টাকা ফেরত চাই। ২৬ জানুয়ারি পবা রেজিস্ট্রি অফিসে বায়না বাতিল করে টাকা ফেরত নিতে আসলে অন্যান্য বায়নাকারীরাও সেখানে এসে উপস্থিত হয়। সবার কাছ থেকে দলিল করে টাকা নিলেও ওই নারী এখন কাউকেই জমি দিতে চাচ্ছে না।
সাবেক মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা হক ও রেজাউল ইসলাম ওরফে ডলার সম্পর্কে এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্য মতে রেজাউল ইসলাম ওরফে ডলার শারিরীক প্রতিবন্ধী হবার দরুন তার বউ ফারজানা হককে আমরা ভোট দিয়ে কাউন্সিলর করি তার পর থেকে তার নিকৃষ্ট আসল চেহারা মানুষের সামনে বের হয়ে আসে। বিভিন্ন এনজিও করে মানুষকে হয়রানি করা টয়লেট নির্মান করার নামে টাকা নিয়ে নিম্নমানের টয়লেট তৈরী করে দেওয়া সহ বিভিন্ন অনিয়ম করতে থাকে।
ফারজানা কাউন্সিলর হবার পর তোফায়েল নামের একজন ব্যাক্তির সাথে সব সময় তাকে ঘুরতে দেখা যায়, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে তোফায়েলের সাথে তার সম্পর্ক বলে চাচাতো ভাই খালাতো ভাই তবে তাদের একসাথে চলাফেরা দেখে অনেকেই সন্দেহ করে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে। এছাড়াও তোফায়েল গার্মেন্টস প্রশিক্ষণ সেন্টার করে রেজিষ্ট্রেশনের নামে অনেকের কাছে থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচন করার জন্য সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নমিনেশন তুলে সাধারন মানুষের নাম ঠিকানা মোবাইল নাম্বার দিয়ে তার সমর্থনে নমিনেশনের সাথে সংযুক্ত করে, কিন্তু নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে ঐ সকল ব্যাক্তিদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা তোফায়েল কে চিনে না বলে মতামত দেয় এবং তারা বলে মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা হক আমাদের নাম ঠিকানা মোবাইল নাম্বার নিয়ে গেছে অন্য কথা বলে, সেখানেও ফারজানা হক সরাসরি নির্বাচন কমিশনের সাথে প্রতারণা করে এবং তোফায়েল এর প্রার্থীতা বাতিল করে। পরবর্তী নির্বাচনে ফারজানা আইনি জটিলতায় নির্বাচন থেকে ছিটকে পরে । তবে তাদের প্রতারণার কার্যক্রম বন্ধ থাকে না। সম্প্রতি রেজাউল ইসলাম ওরফে ডলার ঘটকালি কাজ করছে বলে এলাকার মানুষের মাঝে তাদের বিবাহ যোগ্য ছেলেমেয়েদের ভালো ভাবে বিয়ে দিয়ে দিবে এবং তার অনেক পরিচিত আছে বলে যাতায়াত খরচ সহ বিভিন্ন খরচের নাম করে বিভিন্ন এমাউন্টের টাকা নিয়ে আর যোগাযোগ করে না। তবে এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্য মতে রেজাউল ইসলাম ওরফে ডলার এমন অপরাধ মূলক কাজের সাথে জড়িয়ে পরেছে তার বউ ফারজানা হকের জন্য।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফারজানা হককে রাজশাহী সুপরিচিত একটি সামাজিক সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকান্ডে তাকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।