শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

জনসভার মঞ্চে আসাদ না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী

জনসভার মঞ্চে আসাদ না থাকায় ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী

হুমায়ুন কবীর, রাজশাহীঃ

গত ২৯ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চে উঠার পাশ না পেয়ে সভামঞ্চের বাইরের সড়কে দাঁড়িয়ে জনসভা শুনছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদসহ দলের কয়েকজন প্রবীণ নেতা। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা আসাদকে আমন্ত্রণপত্র তো দূরের কথা, জনসভা মাঠে প্রবেশের পাশও দেননি। তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আসাদকে মঞ্চে ডাকা হয়। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে ডেকে নিয়ে কথা বলেন আসাদের সঙ্গে। এ বিষয়টি রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে তুমুল আলোড়ন ফেলেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার বিকাল ৩টা ৫৪ মিনিটে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের জনসভা মঞ্চে উঠার পরপরই নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি মঞ্চের চারদিকে চোখ দিয়ে কাকে যেন খুঁজছিলেন। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সমাবেশের অন্যতম উপস্থাপক আব্দুল ওয়াদুদ দারার কাছে জানতে চান আসাদ কোথায়? মঞ্চের আশপাশেও নেই। প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকেও জিজ্ঞেস করেন আসাদ কোথায়?

এদিকে এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দারা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, আসাদকে মঞ্চের কাছে থাকা এবং জনসভায় আসার পাশ দেওয়া হয়নি। এ কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের ওপর চরম অসন্তুষ্ট হন। সঙ্গে সঙ্গে একজন কেন্দ্রীয় নেতা আসাদকে মঞ্চের কাছে দ্রুত আসতে বলেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী জনসভা মঞ্চে ভাষণ দিতে শুরু করেন। আসাদ মঞ্চের কাছে গিয়ে বসেন।

এদিকে বক্তব্য শেষ করে আসাদকে মঞ্চে তার পাশে ডেকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার খোঁজখবর নেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আসাদের সঙ্গে সাত মিনিট কথা বলে মঞ্চ থেকে নেমে যান।

এদিকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান।

প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো তার একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে আসাদুজ্জামান লিখেছেন- ‘কৃতজ্ঞতা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আপা। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কী কথা হয়েছে, তা বলতে চাননি তিনি। আসাদ জানান, প্রধানমন্ত্রী আমার ও সংগঠনের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। আমি তার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।

আসাদ আরও বলেন, আপা আমাকে মঞ্চের আশপাশে না দেখতে পেয়ে ডেকে নিয়েছেন। এজন্য আমি আপার কাছে আবারো কৃতজ্ঞ।

তবে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চে উপস্থিত নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে সালাম দেন আসাদুজ্জামান আসাদ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আসাদের কাছে জানতে চান তুমি মঞ্চে নেই কেন? আসাদ উত্তর দেন মঞ্চে আসার জন্য আমাকে পাশ দেওয়া হয়নি। বাইরে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনছিলাম।

এরপর প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার কাছে প্রশ্ন করেন, আসাদ মঞ্চে নেই কেন? তাকে কেন পাশ দেওয়া হয়নি। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আসাদ সব সময় নৌকার বিরোধিতা করেন। এ কারণে তাকে পাশ দেওয়া হয়নি। দলের নেতাকর্মীরা তার প্রতি ক্ষুব্ধ।

এ সময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল বলেন, আমাকে ফেল করানোর জন্যও অনেক চেষ্টা করেছেন তিনি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী আসাদকে উদ্দেশ করে বলেন, এই তুমি নৌকার বিরোধিতা কর কেন? জবাবে আসাদ বলেন, আমি কখনো নৌকার বিরোধিতা করি না। যারা দলের নাম ভাঙিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেন, দল বিক্রি করে খান, জামায়াত-বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতা করেন, আমি শুধু তাদের বিরোধিতা করি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অনেক কিছুই শুনি। সে নৌকার বিরোধিতা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমি নেব। এজন্য তাকে জনসভায় ডাকা হবে না কেন? প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া শুনে জেলা নেতারা দুঃখ প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আসাদুজ্জামান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ সময়ে সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে আসাদ রাজশাহী জেলার প্রতিটি এলাকায় আওয়ামী লীগকে ব্যাপকভাবে সংগঠিত করেন। তবে তাকে কোণঠাসা করতে জেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনের নমিনেশন দেওয়া হয়নি তাকে। তারপরও আসাদ থেমে থাকেনি পদ পদবী ছাড়াই দলের টানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত শেখ হাসিনার প্রতি সম্মান রেখে আওয়ামীলীগের একজন সাধারন কর্মী হিসাবে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে। এমনকি বিপদে ছুটে যান ত্যাগী অবহেলিত এই নেতা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে ও ব্যাস্ত সময় পার করেন, বিভিন্ন ইউনিয়ন উপজেলা পর্যায়ে গিয়ে প্রচার প্রচারণা মিছিল মিটিং করে জনসভাতে উপস্থিত থাকার আহবান জানান। তবে সাবেক এই নেতাকে জনসভা উপলক্ষে দলীয় কোন কর্মসুচীতে দেখা যায়নি। জনসভা চলাকালীন সময়ে আসাদের নেতৃত্বে বিশাল একটি মিছিল জনসভায় যোগদান করে, কিন্তু ভিতরে ঢুকতে না পেয়ে মাঠের পাশে রাস্তায় বসে জনসভায় অংশ গ্রহণ করে। তাকে রাস্তায় বসে থাকতে দেখে উপস্থিত অনেকেই দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে।

যোগ্য ব্যাক্তির মুল্যায়ন করতে ভুলে যান না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তাই স্নেহের আসাদকে মঞ্চে না পেয়ে ডেকে নিয়েছেন।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০