বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতাঃ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জমিতে ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। গত কয়েক দিন তীব্র শীত আর কনকনে ঠান্ডার কারণে জমিতে চারা রোপণ কাজ ধীরগতিতে চলছিল। তবে এখন কমেছে শীতের তীব্রতা। জমিতে চারা রোপণের অনুকূল পরিবেশ থাকায় সকাল থেকে সাঁঝ বেলা পর্যন্ত মাঠে মাঠে চলছে বোরোধানের চারা রোপণের কর্মযজ্ঞ। কৃষিশ্রমিকের পাশাপাশি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় কমাতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে নানান উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার। সরকারের গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। সেই ধারাবাহিকতা ইরি-বোরো মৌসুমে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদের লক্ষ্যে উপজেলার শাহবাজার ও বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ায় ট্রেতে বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করা হয়েছে। রোববার থেকে কৃষকরা রাইচ টান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে জমিতে চারা রোপণ কাজ শুরু করেছেন।
কৃষি বিভাগের দাবি, সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষাবাদ, ট্রেতে বীজ বপন, কম বয়সের চারা রোপণ, চারা রোপণে রাইচ ট্রান্সপ্লান্টার ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার, আইল ফসল, ধান কর্তনে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ভরা মৌসুমে কৃষি শ্রমিক সংকটের সমাধান সম্ভব হবে সমলয় চাষাবাদে।
সমলয় পদ্ধতিতে বোরোধান চাষাবাদে আগ্রহী শাহবাজার এলাকার কৃষক সফিয়ার রহমান রব্বানী ও শাহজাহান আলী বলেন, আমরা বহুদিন ধরে ধান চাষাবাদ করে আসছি। তবে এর আগে কখনোই ট্রেতে বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করিনি। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শে এবারই প্রথম বোরো ধানের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। ট্রেতে বীজ বপনের অল্পদিনের মধ্যেই চারা গজিয়েছিল। চারাগুলো সবুজ সতেজ হয়ে বেড়ে ওঠেছে। আজকে মেশিনের মাধ্যমে জমিতে চারা রোপণ করে নিলাম। আমরা আশা করছি এবারে কম খরচে অধিক ফলন ঘরে তুলতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
ওই এলাকার কৃষক নূর মোহাম্মদ মিয়া, রোস্তম আলী বকসী, একরামুল হক ও আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে চারা লাগাতে শ্রমিকরা দেড় হাজার টাকা নিচ্ছে। সেখানে আমরা মাত্র পাঁচশো টাকা দিয়ে মেশিনের মাধ্যমে জমিতে চারা রোপণ করে নিলাম। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে জমিতে চারা রোপণের ফলে আমাদের খরচ অনেক কম হলো।
উপজেলার বড়ভিটা ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে কৃষকরা যাতে অধিক ফলন পেতে পারেন সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমার ব্লকে ৩৮ জন কৃষক এবারে সমলয় পদ্ধতিতে বোরোধান চাষাবাদ করছেন। আমি আশা করি কৃষকেরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অধিক ফলন পাবেন ইনশাআল্লাহ।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, বোরোধান সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ৩০০ বিঘা জমিতে চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ধান চাষে ইতোমধ্যে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলার শাহবাজার এলাকায় সমলয় পদ্ধতিতে বোরোধান রোপণের কাজ শুরু করা হয়েছে। কৃষকদের আগ্রহ দেখে উপজেলায় আগামী দিনে ধান চাষাবাদে ব্যাপকহারে সমলয় পদ্ধতির ব্যবহারের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।