শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
হুমায়ুন কবীর, রাজশাহীঃ
কারা অভ্যান্তরে মাদক বিক্রী,বন্দী কেনা-বেচা,চাকরী বাণিজ্য, বদলী সংক্রান্ত বিষয়ে অর্থের লেনদেন সহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও একক আধিপত্য বিস্তার করে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় বানিয়েছেন রাজশাহী কারাগার থেকে এলপিআর-এ থাকা জেল পুলিশের সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর শহিদুল ও বর্তমানে রাজশাহী কারাগারে কর্মরত তার ছেলে কারারক্ষী শাহিনুর । এই পিতা-পুত্র মিলে বানিয়েছেন একাধিক ভবন। কিনেছেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট,দোকান ও জমি।
সূত্র মতে জানা যায়, পাবনা চাটমোহর থানা বাজার এলাকার বাসিন্দা জেল পুলিশের সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর শহিদুল কারারক্ষী পদ হতে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী প্রধান কারারক্ষী (১৬শ-গ্রেড)। এরপরের পদোন্নতি প্রধান কারারক্ষী (১৫শ-গ্রেড) পদবীতে। আরেকটি পদোন্নতি পেয়ে সর্বপ্রধান কারারক্ষী (১৪শ-গ্রেড) হয়ে চাকরির সর্বশেষ পদোন্নতি সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর (১৩শ-গ্রেড) পদে অবসর নিয়েছেন । এরই মধ্যে মেহেরপুর উল্লাপারা সিরাজগঞ্জ এলাকায় দু’তলা ফাউন্ডেশন এ বাড়ি নির্মান ,আশরাফ পারা চাটমোহর পাবনা এলাকায় বাড়ি, পাবনা চাটমোহর থানা বাজার এলাকায় জননী কসমেটিকস নামে ভ্যারাইটি স্টোর করেছে। সেখানে দশ লক্ষ টাকা সালামী ও ১৫ লক্ষ টাকার মালামাল রয়েছে। এ ছাড়াও তারা পিতা-পুত্র মিলে চাটমোহর পৌরসভা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাইশ লক্ষ টাকা দিয়ে২৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। সোনালী ব্যাংক মেহেরপুর উল্লাপাড়া শাখায় সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর শহিদুল এর নামে বিশ লক্ষ টাকার ওপরে রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সুত্রটি জানায়, সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর শহিদুল চাকুরী চলাকালীন বগুড়া কারাগারে সুবেদার থাকাকালিন সময়ে তার ছেলে কারারক্ষী শাহিনুর মিলে পুরো কারাগারেই চালিয়েছে টাকার খেলা আর জমজমাট মাদকব্যবসা। যার যত টাকা ও প্রভাব, কারাগারের ভেতরে তার ততই দাপট চলেছে। মাদকের রমরমা বাণিজ্যও হয়েছে জেলখানার ভেতরে। আর যাদের টাকা নেই তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বগুড়া কারাগারে সেই সময়ে কর্মরত এই সুবেদার শহিদুল ও তার ছেলে শাহীনুরের কাছে। তারা পিতা-পুত্র বগুড়া কারাগারে বন্দীকে মাদক দ্রব্য ফেন্সিডিল বিক্রি করার সময় কারা অভ্যান্তরে হাতে নাতে ধরা খেয়েছিলেন। সে সময়ে বগুড়া কারাগারের জেল সুপার ও জেলারকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ কেরে সে যাত্রায় পার পেলেও তাদের পিতা-পুত্রের সার্ভিস বইয়ে লাল দাগ রয়ে গেছে। এ ছাড়াও এলপিআরে যাওয়া জেল পুলিশের সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর শহিদুলের বন্দি নির্যাতনসহ একাধিক বিষয়ে কয়েকটি ঘটনায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হলেও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং তাকে কুষ্টিয়া মেহেরপুর জেলা কারাগারে বদলি করা হয়। সেখানে সে সময় জেলার না থাকায় জেলারোর দায়িত্বে পালত করতে গিয়ে আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান তিনি। সেখানেও শুরু করেন তার জমজমাট মাদক বিক্রী,বন্দী কেনা-বেচা,চাকরী বাণিজ্য, বদলী সংক্রান্ত বিষয়ে অর্থের লেনদেনসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ।
বগুড়া কারাগারে সুবেদার থাকাকালিন সময়ের খোজ খবর নিতে আমাদের বগুড়া প্রতিনিধির গত ৭দিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর শহিদুল এর নানা অজানা তথ্য। কথা হয় সে সময়ে বগুরা কারাগারে থাকা বন্দী বগুড়া নন্দীগ্রাম এলাকার মাদকসেবি সিরাজুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন আমি ফেন্সিডিল মামলা নিয়ে বগুড়া কারাগারে ছিলাম। এ সময় বগুড়া কারাগারে সুবেদার শহিদুল আমাকেসহ ৬/৭জন মাদক সেবি ও ব্যবসায়ীদের কেশটেবিলে ডেকে বলেন কারাগারে বন্দীদের মধ্যে গোপনে মাদক ব্যবসা করতে। তার কথামতো মাদক ব্যবসা করলে পুরো কারাগার আমাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ ছাড়াও যেহেতু আমরা মাদক সেবী সেহেতু কারাগারে বসে মাদক পাবো এটা তো আমাদের জন্যও ভালো কিছু।
কি কি মাদক কি ভাবে তা আপনাদের কাছে আসতো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সুবেদার শহিদুলের নির্দেশে বগুড়া কারাগারের কারারক্ষী থাকাকালীন সময়ে তার ছেলে শাহীনুর, কারারক্ষী সোহেল,কারারক্ষী নাহীদ সহ আরো ৩/৪জন কারারক্ষী আমাদের চাহিদা অনুযায়ী গাঁজা, হিরোইন, ইয়াবা ও ফেন্সিডিল দিয়ে যেতো। আমি নিজে প্রতিদিন প্রায় দুই কেজি গাঁজা,৩০/৪০পিচ ইয়াবা ও ৩/৫বোতল ফেনসিডিল বিক্রি করতাম।
কেমন দামে কি কি মাদক বিক্রি করতেন কারাগারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, একবিড়ি সমান গাঁজা বিক্রি করতাম এক প্যাকেট বড় গোল্ডলিফ সিগারেটের বিনিময়ে। আর ইয়াবা পাাঁচ/ছয় প্যাকেট বড় গোল্ডলিফ সিগারেট এর বিনিময়ে। ফেন্সিডিল এক এক সময়ে এক এক রকম দামে বিক্রি করতাম। কখনো তিন হাজার,কখনো চার আবার কখনো পাঁচ হাজার টাকায় । আর এসব বরো টাকা গুলো বেশি সময় তাদের বন্দিদের পরিবারের লোকজন সুবেদার শহিদুলের ছেলে শাহীনুর, কারারক্ষী সোহেল, কারারক্ষী নাহীদ এর মাধ্যমে টাকা দিয়ে দিতো। আর ভেতরে পিসি বই থেকে মাদকের মূল্যো পরিমান বাজার লিখে নিয়ে তা পরিশোধ করা হতো।
রাজশাহী কারাগারে খেকে অবসরে যাওয়া জেল পুলিশের সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর শহিদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভড না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ধারাবাহিক ভাবে আগামী পর্বে থাকছে এলপিআরে যাওয়া জেল পুলিশের সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর কুষ্টিয়া মেহেরপুর জেলা কারাগারে ভারপ্রাপ্ত জেলারের দায়িত্বে ও রাজশাহীতে পুলিশের সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর পদে থাকাকালীন সময়ে তাদের পিতা-পুত্রের মাদকব্যবসা, বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও একক আধিপত্য বিস্তারের নানা অজানা তথ্য।