শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

মোর নাড়িছেঁড়া ধন; তুই কোটেরে বাবা এভাবেই গত ২০ মাস ধরে আহাজারি করছেন রবিউলের মা

এভাবেই গত ২০ মাস ধরে আহাজারি করছেন রবিউলের মা।

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতাঃ

দশমাস দশদিন গর্ভে ধারণ করে প্রসবের তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করে জন্ম দেন ফুটফুটে ছেলে সন্তান। নাড়িছেঁড়া ধনকে কোলে পেয়ে ভুলে যান গর্ভকালীন সময়ের সব কষ্ট ও প্রসবের যন্ত্রণা। সবভুলে ছেলেকে বুকে আগলে নিবিড় মমতায় লালন পালন করেন। ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে শিশুটি। বসতে শেখা, হামাগুড়ি দেয়া, হাটতে শেখা কথা বলা, পর্যায়ক্রমে সব শিখে যায়। আর সবকিছুতেই সারাক্ষণ ছায়ার মতো পাশে থাকে মা। এভাবেই কেটে যায় মাস, কেটে যায় বছর। মায়ের কোল ছেড়ে শিশুটি একাই ছুটোছুটি করতে শিখে যায়। কেটে যায় আরও কয়েক বছর। এরপর হঠাৎই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় শিশুটি। তিলেতিলে বেড়ে ওঠা ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই পাগলিনী প্রায় মা। বিলাপ করেন- মোর নাড়িছেঁড়া ধন তুই কোটেরে বাবা। কতদিন তোর সোনামুখ দেখং না। মোর মানিক তুই কোটে গেলুরে, বলতে বলতে বেহুঁশ হয়ে যান ক্ষণে ক্ষণে। এভাবেই গত ২০ মাস ধরে আহাজারি করছেন রবিউলের মা।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে নিখোঁজ হওয়ার ২০ মাস পেরিয়ে গেলেও সন্ধান মেলেনি ১২ বছরের শিশু রবিউল ইসলাম রবির। সে উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম টুনকু ও রাশিদা বেগমের ২য় পুত্র এবং ফুলবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখ দুপুরে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় সে। এরপর তার পরিবারের লোকজন প্রতিবেশী ও সকল আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি। নিখোঁজ হওয়ার ছয়দিন পর ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে ফুলবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা।

এ ঘটনার পাঁচ মাস পর রবিউলের বাবা রবিউল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কচাকাটা থানার সুবারকুটি গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন, একই এলাকার রেজাউল করিম ও ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের হাসান মিয়া ও তার স্ত্রী তানজিনা বেগমের বিরুদ্ধে ফুলবাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন এলাকায় নিখোঁজ রবিউলের বড় চাচার বাড়ী ভাড়া নিয়ে সাখাওয়াত ও রেজাউল করিম সেখানে কিছু ছাত্রকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা দিত। তাদের এ শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় তারা রবিউলসহ বেশ কয়েকজনকে বিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাতো। এভাবেই প্রলোভন দেখানোর কিছুদিন পর রবিউল নিখোঁজ হয়। রবিউল নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে গাঁ ঢাকা দেয় রেজাউল সাখাওয়াত। বন্ধ হয় তাদের কুরআন শিক্ষা কার্যক্রম। রবিউলকে রেজাউল ও সাখাওয়াত সঙ্গে নিয়ে গেছেন এবং হাসান আলী ও তার স্ত্রী তানজিনা বেগম রবিউল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিখোঁজ আদরের সন্তানকে ফিরে পেতে দিন রাত বিভিন্ন জায়গায় ছুটছেন তার বাবা তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার শিশু সন্তান নিখোঁজ হওয়ার পর ফুলবাড়ী থানায় ডায়েরি এবং পরবর্তীতে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ২০ মাস কেটে গেল। ছেলের কোন সন্ধান পাই নি। এদিকে ওর মা ছেলের শোকে কাতর। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না। সারাক্ষণ ছেলের নাম ধরে বিলাপ করে। তার আহাজারি আর সহ্য হয় না। আমাদের ছেলেটা কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না’- বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।

এ ব্যাপারে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ফুলবাড়ী থানার এসআই খোরশেদ আলম বলেন, নিখোঁজ শিশুটি উদ্ধারে সীমান্তবর্তী থানাসহ দেশের সব পুলিশ স্টেশনে শিশুরটির সব তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও পিবিআই ও গোয়েন্দা সংস্থাকে শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা জানানো হয়েছে। তাকে উদ্ধারে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০