মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
১৪ ডিসেম্বর আজ। এক নৃশংসতম কালো অধ্যায়ের নাম। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালির জয় যখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঠিক তখনই নেমে আসে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ । ডিসেম্বরের এই দিনে পাকবাহিনীর সহযোগিতায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তাদের একে একে হত্যা করে। এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার হন লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবীরা। হেরে যাওয়া নিশ্চিত জেনেও বাঙালীকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্য ছিলো তাদের।
ডিসেম্বরের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত যখন হানাদার মুক্ত হতে শুরু করলো তখন তারা বুঝতে পেরে তাদের সামনে শুধু একটি পথ , অনিবার্য পরাজয়। ঠিক তখনই এঁকে ফেলে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের নীল নকশা। তালিকায় নাম রাখে জাতির বরেণ্য সন্তানদের। লেলিয়ে দেয় আলবদর-আলশামসকে। মেধাশূন্যের লক্ষ্যে ক্ষিপ্র হয়ে উঠে পাকবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহর থেকে বিজয়ের আগমুহূর্ত পর্যন্ত যেসব বরেণ্য বুদ্ধিজীবীকে আমরা হারিয়েছি, তাঁদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশীদুল হাসান, আবুল খায়ের, আনোয়ার পাশা, সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, আলতাফ মাহমুদ, নিজামুদ্দীন আহমদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, সেলিনা পারভীন প্রমুখ।
আজকের এই দিনে আমরা জাতির এই মহান সন্তানদের শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করি। কিন্তু যাঁরা নিজেদের জ্ঞান-মনীষা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন, তাঁদের বছরের একটি দিন স্মরণ করাই যথেষ্ট নয়। আমাদের অনুধাবন করতে হবে, কেন এই মহৎপ্রাণ মানুষগুলো জীবন দিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতি গঠনে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছে। অথচ যেকোনো ক্রান্তিকালে মানুষ তাঁদের কাছ থেকে সত্য, ন্যায়ের পথের দিশা পাওয়ার প্রত্যাশা করে। বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে আজ যে দিবস পালিত হচ্ছে, তা সার্থক হবে, যদি আমরা তাঁদের উদার মানবিক চিন্তা ও গণতান্ত্রিক আদর্শকে ধারণ করতে পারি। তাঁরা যে উন্নত ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই পথ ধরেই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জাতীয় জীবনে সংকট কিংবা স্থিতিশীলতার কালে তাঁদের আদর্শ হোক আমাদের পাথেয়।