বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
হুমায়ুন কবীর, রাজশাহীঃ
সাংবাদিক ও পুলিশের পেশাগত লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। উভয়েই জনগণের স্বার্থে দেশের জন্য কাজ করে থাকে। তবে রাজশাহীতে পুলিশের একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনা ও অসৌজন্যমূলক আচরনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। ঠিক এমনই এক ঘটনা ঘটেছে গতকাল শনিবার ৩ রা ডিসেম্বর রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের সংবাদ সংগ্রহ করে ফেরার পথে। ফোন চোরের ছবি তোলায় মোঃ নাঈম হাসান নামে এক সাংবাদিকের ফোন কাড়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সংবাদকর্মী নাঈম হাসান রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক উপচার পত্রিকায় কর্মরত আছেন। সেই সাথে রাজশাহী অনলাইন সাংবাদিক ফোরাম ও জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ।
জানা যায়, ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির সমাবেশে ফোন চুরির অপরাধের অভিযোগে পুলিশ এক ব্যক্তিকে আটক করে। এমন একমুহূর্তে সংবাদকর্মী নাঈম হোসেন ওই চিত্র ধারণের সময় রাজপাড়া থানায় কর্মরত মালেক নামের এক পুলিশ সদস্য তার ফোন কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে । এ সময় ওই পুলিম সদস্য সংবাদকর্মী নাঈম হোসেন এর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ভুক্তভোগী সংবাদকর্মী নাঈম হাসান জানান, আমি পুলিশ সদস্যের ছিনতায়কারীর মত আচরণ দেখে অবাক হয়ে গেছি ।
ওই সময় আমি বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের সংবাদ সংগ্রহ করছিলাম। দেখলাম পুলিশ সদস্য এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আমি ভিডিও করতে গেলে সেই পুলিশ সদস্য আমার ফোন ছিনতায়কারীর মতো ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য হাত চালান। কিন্তু আমার জানা মতে, সাংবাদিকের কাছ থেকে কখনো কলম বা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার এখতিয়ার তার নেই। সেখানে দেখলাম পুলিশ সদস্য সেই ব্যক্তিকে ফোন চোরের অভিযোগে আটক করছে। সে ফোন চোর হতেই পারে। সে বিএনপি`র গণসমাবেশে যোগ দিতেও আসতে পারে আবার ফোন চুরি করতে আসতেও পারে । কিন্তু পুলিশ সদস্য গণমাধ্যমকর্মীর প্রেসকার্ড দেখার পরও কেনো ফোন অন্ধের মত কাড়তে চাইলেন?
তিনি বলেন, পুলিশ সদস্য চোর ধরার মত ভালো কাজ করছিলেন। যদি সে ফোন চোর হয় তাহলে আপনি তো অনেক ভালো কাজ করছিলেন। তাঁর ভালো দিক তুলে ধরার জন্য আমি ভিডিও টা ধারণ করছিলাম, তাহলে তিনি কেনো আমার কাজে বাঁধা দিলেন। কেন ঝাঁপিয়ে পড়লেন আমার ফোনের দিকে? তাহলে কি বুঝবো ওই পুলিশ সদস্যের মতলব খারাপ ছিল?
সংবাদকর্মী নাঈম হাসান তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানান,”স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মতলব ঠিক করেন, আমার মনে হয় মালেক সাহেব, রাজশাহীর সাংবাদিকদের একতা সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই। একটু পিছনে তাকিয়ে দেখেন, সাংবাদিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য সেদিন রাজ পাড়া থানায় কি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। এঘটনায় জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা বিভাগীয় কমিটির সভাপতি নুরে ইসলাম মিলন জানান, সমাবেশ থেকে পুলিশ কাউকে আটক করবে, তাঁর কারণ জানার অধিকার সংবাদ কর্মীদের রয়েছে । তাছাড়াও প্রশাসনের তথ্য প্রচারে রাজশাহীর সাংবাদিকরা নিরলস কাজ করছেন। সেখানে, পরিচয় পত্র দেখার পরও সাংবাদিকের ফোন বা কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়ার প্রবণতা খুবই খারাপ ও নিন্দনীয় বিষয়।
তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২০১১ সালের ১৫ আগস্ট গৃহীত কেরালা পুলিশ আইনের ৩৩(২) ধারায় বলা হয়েছে গণস্থানে কিংবা ব্যক্তিগত স্থানে পরিচালিত পুলিশের যে কোন কর্মকাণ্ডের ভিডিও, অডিও বা অন্যকোন ইলেকট্রোনিক রেকর্ড যে কোন নাগরিক ধারণ করতে পারবে। আইন অনুসারে করা এই কাজে কোন পুলিশ অফিসার বাধা দিতে পারবে না। যদি কোন পুলিশ অফিসার তা করে, তবে তিনি আইনের ১২১ ধারা বলে অনুর্ধ ছয় মাসের কারাদণ্ড কিংবা দুই হাজার রুপি জরিমানা কিংবা উভয়বিধ শাস্তি পেতে পারেন। অন্যদিকে একই আইনের ৩৩(১) ধারা বলে পুলিশও তাদের কৃতকর্মের ভিডিও, অডিও বা ডিজিটাল রেকর্ড রাখতে পারবে যা পরবর্তীতে কোন মামলা বা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে পুলিশি কর্মের ন্যায্যতা ও আইনানুগতার সাক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
কিন্তু বাংলাদেশের পুলিশ আইনে এমন কোন বিধান নেই। তাই একটি যুগোপযোগি আইনে এই জাতীয় বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা দরকার। আর যত দিন পর্যন্ত সেই বিধান হবে না, ততো দিন পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের সাংবাদিকদের সাথে কিরূপ আচরণ করতে হবে, কোন ঘটনায় তারা ছবি তুলতে পারবে এবং কোন ঘটনায় পারবে না ( না পারার পক্ষে কোন বিধান নেই) সে সম্পর্কে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। সর্বশেষে তিনি বলেন, অপেশাদার আচরণে জড়িত ও অভ্যস্ত পুলিশ সদস্যদের বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় পুলিশ দ্রুত জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সকল পর্যায়ের পুলিশ নেতৃত্বকে মনে রাখতে হবে সমাজে পুলিশের প্রতি জনগণের যে মনোভাব তার সিংহভাগ গঠিত হয় মিডিয়া তথা সাংবাদিকদের মাধ্যমে।
আর এমপি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের বন্ধুত্ব থাকবে। সাংবাদিক পুলিশের দ্বন্দ হতে পারেনা। আমাদের পুলিশ আইন বা পুলিশ প্রবিধানে সাংবাদিকদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করতে হবে তার সঠিক কোন নির্দেশনা নেই। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে একটি মিডিয়া গাইড লাইন্স প্রচার করা হলেও অধিকাংশ পুলিশ সদস্য সে সম্পর্কে ওয়াকেফহাল নন। অথচ মুক্ত তথ্য প্রবাহের অধিকার স্বীকৃত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পুলিশকে প্রতিনিয়তই সাংবাদিকদের মোকাবেলা করতে হয়।