শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
নানা সমস্যায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে ফেনী সরকারি কলেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এক বছরের মাথায় প্রতিষ্ঠিত এ কলেজের একসময় দেশজুড়ে সুনাম থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আজ তা হারিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে একাডেমিক ভবন সংকট, শিক্ষক সংকট, আবাসিক সংকট, আর্থিক কেলেংকারিসহ নানা অনিয়মের ঘোরে পড়েছে শতবর্ষী এ প্রতিষ্ঠানটি। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, কলেজের অনেক কাজ হয়েছে। আরো অনেক সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা পর্যায়ক্রমে সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, ২০০৮ সালে ফেনীর ফলেশ্বর এলাকায় ১০০ আসনের ছাত্র হোস্টেল চালু করে কর্তৃপক্ষ। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা আর রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের দাপটে অসহায় শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে এ হোস্টেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর শুরুতে বন্ধ হওয়ার পর এটি এখন ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এদিকে কলেজ প্রতিষ্ঠার শত বছর পর চলতি বছরের আগস্টে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রী হোস্টেল চালু হলেও সেখানে মাত্র ৩০-৩৫ ছাত্রীকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের বাকি আবেদনগুলো পড়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কাটছে না।
কলেজটির ২২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে পরিত্যক্ত ঘোষিত প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। সেখানে মাত্র ১০-১২ জন শিক্ষার্থী বসতে পারেন। বৃষ্টিতে ছাদ চুয়ে পানি পড়ে অনেক বই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
অভিভাবক জানান, কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম অনেকটা ভেঙে পড়েছে। একসময় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভাগ করে একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে দেয়া হতো। কিন্তু কয়েক বছর কলেজে একাডেমিক কার্যক্রম তদারকি না থাকায় শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুপস্থিত থাকার প্রবণতা বেড়েছে। তাছাড়া কয়েকজন শিক্ষক কলেজ চলাকালীন কোচিংয়ে ক্লাস নেয়ার বিষয়ে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এছাড়া করোনার আগে থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের বাস সার্ভিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের এক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ নিজের অনুগতদের অডিট কমিটির সদস্যভুক্ত করেন। তারা অডিট করতে এসে শুধু কলেজের অর্থ লোপাটের বিষয়টি জায়েজ করে চলে যান। অডিট প্রতিবেদন ও আয়-ব্যয় বিবরণী একাডেমিক কাউন্সিলে পাস করানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও কয়েক বছর যাবত ফেনী কলেজে তার বাস্তবতা পাওয়া যায়নি। প্রতিদিন কলেজে দৈনিক শ্রমিক দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা নিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে একটি চক্র। এছাড়া কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন বিভিন্ন সংস্কার উন্নয়নের নামে লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।
নৈশপ্রহরীরা দায়িত্ব পালন না করায় অডিটরিয়ামের পূর্বাংশ হয়ে উঠেছে মাদকের অভয়ারণ্য ও অনৈতিক কাজের আখড়া। এছাড়া ফলেশ্বরে স্থাপিত ছাত্র হোস্টেলের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। অথচ প্রতি সেশনে ২২ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে থেকে ২০০ টাকা হারে ৪৪ লাখ টাকা নিরাপত্তা খাতে আদায় করা হয়। এ টাকার কোনো হদিস পান না শিক্ষার্থীরা।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের পাশে ২৫ শতাংশ ভূমি দখলে আনতে মামলা করেও প্রয়োজনীয় ভূমিকা না রাখায় রায় কলেজের বিপক্ষে চলে যায়। কলেজের পূর্ব পাশে সোবহান মঞ্জিলের সীমানাপ্রাচীর দিয়ে কলেজের মূল্যবান জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে। জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি কলেজের জায়গা দখল করলেও প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
এদিকে কলেজের ১৯৮৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা মূল প্রশাসনিক ভবনে এখনো ঝুঁকি নিয়ে চলছে শ্রেণী কার্যক্রম। ভবনের সামনের সব দরজা বন্ধ করে পেছনে দেয়াল কেটে দরজা লাগিয়ে নির্মাণশৈলী ধ্বংস করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বিমল কান্তি পাল জানান, ফেনী সরকারি কলেজে বিগত সময়ে অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। আরো অনেক কাজ বাকি আছে। সেগুলো ক্রমান্বয়ে হাতে নেয়া হবে। হোস্টেলগুলো চালু করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বহিরাগত ঠেকাতে ভিজিল্যান্স টিম সক্রিয়। নতুন ভবন অনুমোদন হয়েছে। সেটি নির্মাণ হলে গ্রন্থাগার স্থানান্তর করা হবে, ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম করতে হবে না। কলেজের সম্পত্তি দখলের বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির পর সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকেই অডিট কমিটি গঠন করে স্বচ্ছতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে এবং আয়-ব্যয় বিবরণী একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন করা হয়। এক্ষেত্রে কলেজের কোনো অর্থ লোপাট বা তছরুপ করা হচ্ছে না।
সূত্রঃ বণিক বার্তা