শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
মানুষ কুরআন ও হাদিসের পথ থেকে যখনই দূরে চলে যায় তখনই নানাবিধ আজাব মানুষকে পাকড়াও করে।
সুনানে ইবনে মাজাহ-এর ৪০১৯নং হাদিসে আবদুল্লাহ বিন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন : হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও’। ওই হাদিসের পাঁচটি বিষয় হচ্ছে-
প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়া
আধুনিকতার নামে আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অশ্লীলতার সয়লাব চলছে। বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানেও নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, পর্দাহীনতা, পরকীয়া, ভালোবাসার নামে অবৈধ বসবাস ইত্যাদি আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হচ্ছে।
অথচ রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্য অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব রোগের উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি’। আর এ মহামারি জাতিকে অভাব থেকে ক্রমান্বয়ে দুর্ভিক্ষের দিকে নিয়ে যায়।
ওজন বা পরিমাপে কারচুপি
আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন আর ব্যবসাকে করেছেন হালাল। কিন্তু হালাল ব্যবসার মধ্যে অন্যায় পন্থা অবলম্বন করে ওজনে কম করলে হালাল ব্যবসাও হারাম হয়ে যায়। আর এ যেন রাতারাতি ধনী বনে যাওয়ার মাধ্যম। এ ছাড়া আমাদের অধীনস্ত কর্মচারী কিংবা গৃহকর্মীদের থেকে সাধ্যাতীত কাজ আদায় করে তার প্রাপ্য মজুরি প্রদান না করাটাও কারচুপির শামিল। অথচ রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘কোনো জাতি যখন ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ ও কঠিন বিপদ-মুসিবত’।
জাকাত প্রদানে অনীহা
মুসলিম জাতি যখন জাকাতের মতো ফরজ বিধান অমান্য করে তখন আল্লাহ তাদের ওপর বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ করে দেন। হাদিসে এর চেয়েও কঠিন কথা উল্লেখ করা হয়েছে : ‘(কোন জাতি যখন) জাকাত আদায় না করে তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না’। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে অনাবৃষ্টি কিংবা বর্তমানে আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরি থেকে যে গরম লাভা নির্গত হচ্ছে তা ফসলাদি বিপন্ন করে দুর্ভিক্ষকে তরান্বিত করছে।
আল্লাহ ও তার রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ
গোটা বিশ্বে আজ মুসলিমদের চরিত্রে পশ্চিমা সংস্কৃতি সয়লাব হওয়ায় তারা আজ আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকারগুলো ভুলে যেতে শুরু করেছে। ফলে আল্লাহ মুসলিমদের ওপর দুশমনদের ক্ষমতাশীল করে দেওয়ায় তারা মুসলিমদের প্রতি অসামান্য জুলুম করে যাচ্ছে। প্রকৃতার্র্থে, আমরাই আমাদের প্রতি জুলুম করছি। হাদিসের ভাষায় : ‘যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তার রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের ওপর তাদের বিজাতীয় দুশমনদের ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়’। আজ সমগ্র বিশ্বে আমরা এ হাদিসের বাস্তবতা দেখছি।
আল্লাহর বিধানানুযায়ী বিচার না করা
মানুষের সুস্থ বিবেক তার নিজের আদালত স্বরূপ। সেখানে কুরআনে বর্ণিত বিচারব্যবস্থা বাদ দিয়ে আমরা নিজ পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রে সুবিধামতো বিচার করি আর আন্যদের ক্ষেত্রে করি বিপরীত।
মুসলিম বিশ্বের শাসকরাও আজ মানবরচিত বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে আদাজল খেয়ে লেগেছে। তাদের এ হীন মানসিকতার অশুভ পরিণাম ভোগ করতে হয় সব ধর্ম-বর্ণের লোকদের।
অথচ রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা না করে এবং আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে গ্রহণ না করে, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন’। আর যুদ্ধ দুর্ভিক্ষ নিয়ে আসে।
আমরা প্রত্যেকেই নিজের ভুল সম্পর্কে জানি, তাই নীরবে রবের কাছে নিজের ভুল স্বীকার করে আল্লাহর দেওয়া সচ্ছলতা ও প্রাচুর্যকে অহংকারের বস্তু না বানিয়ে বরং নিয়ামত মনে করি। আর রবের সামনে বিনম্রচিত্তে সিজদায় মাথা নত করে দুর্ভিক্ষ নামক অভিশাপ থেকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর আশ্রয় চাই।
লেখক : পিএইচডি গবেষক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়