শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
স্বদেশি স্টার্টআপ ‘পালকি মোটরস’ বাজারে এনেছে বৈদ্যুতিক ব্যাটারিভিত্তিক পরিবেশবান্ধব গাড়ি পালকি। চার দরজা, চার চাকার এই গাড়ির দাম মাত্র ৫ লাখ টাকা। ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে এই গাড়ির প্রি-অর্ডার।
নাম কেন পালকি
মোস্তফা আল মোমিন জানান, তাঁরা শুরু থেকেই চেয়েছিলেন গাড়ির নাম বাংলা শব্দের হোক। এ জন্য বাহনের সমার্থক হিসেবে রথ, পালকিসহ আরও কিছু শব্দ বাছাই করা হয়। সেগুলোর মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত পালকিকেই চূড়ান্ত করেন তাঁরা। কারণ পালকি বাংলা শব্দ। তা ছাড়া শব্দটির মধ্যে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া আছে। মোস্তফা আল মোমিন বলেন, ‘আমাদের রাজা-বাদশাহরা পালকিতে চলাচল করতেন। বিয়েতে নববধূ আনতে পালকি ব্যবহার করা হতো। পালকির সঙ্গে বাঙালির অন্য রকম আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে। এ জন্য গাড়ির নাম হিসেবে পালকি শব্দটাকেই আমরা বেছে নিয়েছি।’
পালকির শুরু
বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির ভাবনাটা মোস্তফা আল মোমিনের মাথায় আসে ২০১৩ সালে। সে সময় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈদ্যুতিক গাড়ির একটি প্রকল্পে কাজের সুযোগ হয় তাঁর। তখনই বৈদ্যুতিক গাড়ি কী করে দেশের বাজারে আনা যায়, সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত মূলধন না থাকায় সে সময় পরিকল্পনা পর্যন্তই আটকে থাকতে হয় মোমিনকে। এরপর বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতকোত্তর করতে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। স্নাতকোত্তর শেষে দেশে ফিরে গ্রামীণফোনের অ্যাক্সিলারেটর প্রোগ্রামের তৈরি স্টার্টআপ সিওয়ার্কে কাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু করোনার কারণে সেটি বন্ধ করে দিতে হয়। এরপরই ২০২২ সালে পুরোপুরিভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ির কাজে মনোনিবেশ করেন মোমিন।
পালকিতে খরচ কেমন
সাধারণ ডিজেলচালিত গাড়িতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়ে ১০ টাকা। পালকি সেখানে ১ টাকা ৬৩ পয়সা খরচে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবে বলে জানান মোমিন। ৬০ভি ১০০এইচ লিড অ্যাসিড ব্যাটারিসংবলিত পালকি একবার চার্জে ১৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারবে। এর ব্যাটারি চার্জ হতে সময় নেয় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। লিড অ্যাসিড ব্যাটারি ৩৬ হাজারের বেশি কিলোমিটার পর্যন্ত সেবা দিতে পারবে।
৪০ শতাংশ যন্ত্রাংশ বাংলাদেশের
পালকির বডির বেশির ভাগ অংশ চীনের তৈরি। আর ইঞ্জিন আনা হচ্ছে তাইওয়ান থেকে। তবে খুচরা যন্ত্রাংশের ৪০ শতাংশ বাংলাদেশের তৈরি বলে জানান মোমিন। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে স্থাপন করা হয়েছে পালকি মোটরসের অ্যাসেম্বল শেড। সেখানেই চলছে পালকির কাজ।
সবার জন্য পালকি
তিন লাখ টাকা ডাউন পেমেন্টে বুকিং দেওয়া যাবে পালকি। বাকি টাকা গাড়ি হাতে পাওয়ার পর পরিশোধ করতে হবে। মোমিন মনে করেন, দেশের বাজারে পালকি খুব সাশ্রয়ী মূল্যের গাড়ি হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সব শ্রেণির ক্রেতার কথা ভেবেই এই গাড়ি বাজারে আনা হয়েছে। একজন অটোরিকশাচালক, যিনি অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, তিনিও এটা কিনতে পারবেন। পালকির মাধ্যমে তিনি অনায়াসেই মাসে ৪৫ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন, অটোরিকশার মাধ্যমে যা সম্ভব না। আবার যাঁরা নিজের শিশুকে স্কুলে আনা-নেওয়ার জন্য বা কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের জন্য কম দামে গাড়ি খুঁজছেন, তাঁরাও এটা কিনতে পারবেন। বৈদ্যুতিক গাড়িতে ইঞ্জিন জটিলতা না থাকায় খুব সহজেই এই গাড়ি পরিচালনা করা যাবে।’ তাই এই গাড়ি সবার জন্য বলে জানান মোস্তফা আল মোমিন।