মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
দেশে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হলেও আমদানিকারকরা চাল আনতে পারছেন না।
আমদানিকারকদের অনেকে বলেছেন, সরকার থেকে বেসরকারি খাতকে ১২ লাখ টনের বেশি চাল আমদানির অনুমোদন দেয়ার পরও তারা ১০ শতাংশ চালও আনতে পারেননি।
অন্যদিকে সরকারিভাবে ভারত, মিয়ানমার , ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। দেশে বোরো এবং আউশ ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় আমন ধানের উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হতে পারে বলে সরকারের কৃষি বিভাগ আশঙ্কা করছে।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বোরো ধান সংগ্রহে সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল, সেটিও পূরণ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সরকার বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমতি দেয় ।
অনুমোদনের পরও চাল আসছে না
কর্মকর্তারা বলেছেন, অনেক আমদানিকারক ইতোমধ্যেই আবেদন করেছেন এবং সরকার ১২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদনও দিয়েছে।
কিন্তু দু’মাস আগে অনুমোদন দেয়া হলেও বেসরকারিভাবে এপর্যন্ত এক লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন চাল আনা গেছে ভারত থেকে।
আমন ধান আসার আগ পর্যন্ত চালের বাজার স্থির রাখতে সরকার এখন আমদানি করার পদক্ষেপ নিয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলছেন, চাল রপ্তানিকারক যে কোন দেশ থেকে চাল আমদানি করতে বলা হয়েছে, কিন্তু আমদানিকারকরা শুধু ভারতের ওপর নির্ভর করে আছে।
“তারা (আমদানিকারকরা) ইন্ডিয়া থেকে চাল আমদানিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। কারণ রপ্তানিকারক অন্য কোন দেশ থেকে ইন্ডিয়ার চেয়ে কম দামে চাল পাবে না।”
আমদানিকারকরা যা বলছেন
আমদানিকারকদের অনেকের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, চালের আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার কারণে এ মুহুর্তে তারা চাল আমদানিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ভারতে সম্প্রতি ভাঙা চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আতপসহ বিভিন্ন ধরনের চালের ওপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে ভারত থেকে চাল আমদানিতে দাম বেশি পড়ছে।
নওগাঁ জেলা থেকে একজন চাল আমদানিকারক নিরোধ বরন সাহা বলেছেন, আমদানিকারকরা সবসময় একমাত্র ভারত থেকেই চাল আমদানি করে থাকেন।
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমারে শুধু আতপ চাল পাওয়া যায়। এর মধ্যে থাইল্যান্ডে চাহিদা দিলে তারা সিদ্ধ চাল তৈরি করে দিতে পারে। এবং এর জন্য তারা বাড়তি পয়সা নেয়। সেজন্য আমদানিকারকরা মূলত ভারত থেকে চাল আমদানি করে থাকেন।
নিরোধ বরন সাহা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সিলেটের একটা অংশ এবং চট্টগ্রাম ও সাতক্ষীরা জেলার জনগোষ্ঠীর একটা অংশ আতপ চাল ব্যবহার করেন।
সারাদেশের মানুষ মোটা চাল এবং মিনিকেট – এ ধরনের বিভিন্ন চাল খেয়ে থাকেন। আর এই চাল ভারতেই পাওয়া যায়। এছাড়া ভারত থেকে চাল আমদানিতে পরিবহন খরচও কম হয়। এই বিষয়গুলো প্রধান্য পায় আমদানিকারকদের কাছে।
নিরোধ বরন সাহা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ভিয়েতনাম, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড থেকে আতপ চাল আমদানিতেও অনেক বেশি খরচ হলে দেশে বাড়তি দামে বিক্রি করা সম্ভব হবে না। “ভারতেও এখন চালের যে দাম, তার চেয়ে বাংলাদেশে দাম অনেক কম। ফলে এমুহুর্তে চাল আমদানি করে লোকসান হবে। সে কারণে আমদানিকারকরা ধীর গতিতে চলছে” বলেন আমদানিকারক মি: সাহা।
বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে আরেকজন আমদানিকারক ড. মুণাল মাহবুবও পরিস্থিতিকে একইভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “চালের আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার কারণে আমদানিকারকদের মধ্যে লাভ-ক্ষতির ভয় কাজ করছে।”
সরকার চাল আনছে চারটি দেশ থেকে
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার অবশ্য বলছেন, বেসরকারিভাবে চাল আমদানি উৎসাহিত করতে দেশে আমদানি শুল্ক কমানোসহ বিভিন্ন সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তিনি আশা করেন, বেসরকারিভাবে চাল আমদানি বাড়বে।
একই সাথে মি. মজুমদার সরকারিভাবেও চাল আমদানির তাদের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যন্ড এবং ভিয়েতনাম – এই চারটি দেশ থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির চুক্তি করে এলসি খোলা হয়েছে।
সরকারিভাবে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির টার্গেট নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে এপর্যন্ত এক লাখ টন চাল দেশে এসেছে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এখন আমন মৌসুম শুরু হবে এবং সতেরো লাখ মেট্রিক টনের বেশি চাল মজুদ রয়েছে। ফলে দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে তারা আশা করেন।
বিবিসি