শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
জাতীয় নির্বাচন আসলেই রাজনীতিতে ভাঙা গড়া ও নানা মেরুকরণ হয়। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেও পর্দার আড়ালে নানা তৎপরতা চলছে। দল-জোট গঠনে পুরোদমে চলছে মেরুকরণ, সমীকরণ। তৎপর রয়েছে বিভিন্ন এজেন্সি। বিদেশি মিশন প্রধানদের দৌড়ঝাঁপ কৌতুহল বাড়াচ্ছে। দিল্লি যাত্রার প্রাক্কালে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকও গুরুত্ববহ। সীমানার বাইরেও চলছে তাৎপর্যপূর্ণ তৎপরতা। রাজনীতির দাবার বোর্ডে খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। নাটকীয় অনেক মেরুকরণ ঘটতে পারে বলে গুঞ্জন ডালপালা মেলছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর ও আগামী বছরের অক্টোবর -এ দুটি ডেডলাইন মাথায় নিয়ে দাবার গুটি চালাচালি হচ্ছে। রাজা চেক দেওয়ার চাল ভন্ডুল করতে পাল্টা চালও চলছে-চলবে। রাজনৈতিক দাবাড়ুরা প্রত্যেকেই এবার আত্মবিশ্বাসী।
এ মূহুর্তে রাজনীতির দাবার বোর্ডের দুই গুটি বেশ নজর কাড়ছে। একটি জামায়াত, অন্যটি রব-মান্না-নূর-সাকীদের ‘মঞ্চ’। ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরও দাবার বোর্ডেরই এক্সটেনশন। বিএনপির লাগাতার কর্মসূচি, শাসক দলের উন্মত্ত হামলা-সন্ত্রাস নিম্ন চাপকে যে কোন সময় ঘনীভূত করে প্রবল ঝড়ে রূপ দেবে কিনা তা দেখার বিষয়। প্রধান বিরোধী শক্তি ও সম্ভাব্য পালাবদলে ক্ষমতার দাবিদার বিএনপিকে ঘিরে আছে নানা ফাঁদ। এর কোন একটিতে পা পড়লেই বড় বিপর্যয়। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে আছে সর্বাধিক জনসমর্থনপুষ্ট এই দলটি।
এরই মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ঘোষণা এসেছে মাঠ রাজনীতিতে তৃতীয় বৃহৎ শক্তি জামায়াতের পক্ষ থেকে। প্রায় দু-দশকের মাথায় এসে জামায়েত শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়ে দিল তারা বিএনপি জোটে নেই। জামায়াতের এক নায়েবে আমীরের সঙ্গে সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর বৈঠকের গুঞ্জন চাউর হয়েছে বেশ কিছুদিন আগেই। নিবন্ধন ফিরে পেতে লবিং করছে দীর্ঘদিন মাঠ রাজনীতিতে কোনঠাসা হয়ে থাকা দলটি। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে বড় শোডাউন, সিলেট অঞ্চলে বন্যাসহ নানা দুর্যোগে নির্বিঘ্নে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের তৎপরতায় নতুন বার্তা পাচ্ছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। আবার নির্বাচন নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেও চমকে দিচ্ছেন রাজনীতির বিশ্লেষকদের।
দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েন চলছে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান দুই দল বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। বিএনপি নেতারা বিভিন্ন সময় জামায়াত ছাড়ার কথা বললেও জামায়াতের পক্ষ থেকে কেউ এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। সম্প্রতি এক সভায় ভার্চুয়াল বক্তব্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন জামায়াতের আমীর ড. শফিকুর রহমান। জামায়াতের আমীরের দেয়া বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপটি প্রকাশ হয়েছে ভার্চুয়াল জগতে। প্রশ্ন উঠেছে এটা ঘটনাক্রমে প্রকাশ হয়েছে নাকি পরিকল্পিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
জামায়াত সূত্রের বরাতে গণমাধ্যম জানাচ্ছে, দলের একটি ঘরোয়া ভার্চুয়াল সভায় তিনি ওই বক্তব্য দেন। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এতোদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিলো। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিলো। সেটা আর ফিরে আসেনি।
তিনি বলেন, বছরের পর বছর পর এই ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না।
এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছেন, বিশেষ করে প্রধান দলের (বিএনপি) এই জোটকে কার্যকর করার কোন চিন্তা নাই। বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট দিবালোকের মতো এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাস্তবতা হচ্ছে নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর উপর ভর করে পথ চলা। তবে হ্যাঁ জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি, এর সাথে তারা ঐক্যমত পোষণ করেছে। তারা আর কোন জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবো। যদি আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করেন তাহলে আমাদের আগামী দিনগুলোতে কঠিন প্রস্তুতি নিতে হবে এবং অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দোয়া করেন, এসকল ত্যাগ যেনো আল্লাহর দরবারে মঙ্গলজনক হয়। এ ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ পাক যেন আমাদের পবিত্র একটি দেশ দান করে। যে দেশটা কোরআনের আইনে পরিচালিত হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের তৎকালীন আমির গোলাম আযম এবং ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
জামায়াত প্রবল ঝড় মোকাবিলা করে একলা পথ চলছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এবার একলা চলো নীতির ঘোষণা আসলো। এটাই হাল রাজনীতিতে নতুন মাত্রা পাবে।
চট্টগ্রাম, ২৮ আগস্ট ২০২২।