শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শপিং মলের ভেতরে একদল লোকের নামাজ পড়ায় নামাজ বা প্রার্থনা নিষিদ্ধ

ভারতে প্রকাশ্য স্থানে মুসলিমদের নামাজ পড়ার বিরুদ্ধে সম্প্রতি নানা জায়গায় হিন্দুদের যে প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার সবশেষ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের লখনৌতে।

ওই শহরে লুলু শিল্পগোষ্ঠীর একটি নতুন ও অত্যাধুনিক শপিং মলের ভেতরে একদল লোকের নামাজ পড়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রাজ্য পুলিশ ওই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

প্রকাশ্য স্থানে নামাজ পড়ে দেশের আইন ভাঙা হয়েছে- একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী এই মর্মে এফআইআর করলে পুলিশ ওই নামাজিদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর চার্জও এনেছে।

এদিকে এই বিতর্কের পর মল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন তাদের কম্পাউন্ডের ভেতরে কোনও ধরনের সমবেত ধর্মীয় প্রার্থনারই অনুমতি নেই – তবে এই ঘটনায় উত্তরপ্রদেশে বিদেশি বিনিয়োগ টানার চেষ্টা ধাক্কা খাবে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। লখনৌতে বিপাকে লুলু গ্রুপ

দুই হাজার কোটি রুপিরও বেশি খরচ করে এবং ২২ লক্ষ বর্গফুট এলাকা জুড়ে লুলু শিল্পগোষ্ঠী লখনৗতে যে নতুন মল তথা হাইপারমার্কেটটি চালু করেছে সেটি ভারতে তো বটেই, সমগ্র এশিয়াতেই বৃহত্তম বলে দাবি করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লুলু গোষ্ঠীর একটি হাইপারমার্কেট

কেরালার লোক এমএ ইউসুফআলির প্রতিষ্ঠিত লুলু গ্রুপের সদর দফতর সংযুক্ত আরব আমিরাতে, তবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই হাইপারমার্কেটের ব্যবসায় তারা অন্যতম শীর্ষ প্লেয়ার।

সম্প্রতি তারা ভারতেও পা রেখেছে, আর গত রবিবার লখনৌতে তাদের নতুন এই স্টোরটির উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিজে।

কিন্তু উদ্বোধনের দুদিন পরেই মলের এক কোণায় কয়েকজনের নামাজ পড়ার দৃশ্য নিমেষে ভাইরাল হয়ে যায় – অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা নামে একটি সংগঠন এর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

মহাসভার নেতা শিশির চতুর্বেদী বলছিলেন, “এই লুলু মল কেরালা থেকে শুরু করে সর্বত্র ‘লাভ জিহাদে’র প্রসার ঘটাচ্ছে বলে আমরা আগেই সোশ্যাল মিডিয়াতে খবর পাচ্ছিলাম।”

“এদের কায়দাটা হল, কর্মীদের ৮০ শতাংশ মুসলিম যুবকদের নিয়োগ করে আর বাকি ২০ শতাংশ হিন্দু যুবতীদের চাকরি দিয়ে লাভ জিহাদে উসকানি দেওয়া।”
Skip Twitter post, 1

End of Twitter post, 1

লুলু গ্রুপ মুনাফার একটা বড় অংশ ‘শুধু একটি বিশেষ ধর্মের’ লোকেদের পেছনেই খরচ করে বলেও তিনি দাবি করেন।

“এখন ওদের মলে নামাজ পড়া হচ্ছে, এটা জানার পর আমরা অভিযোগ করেছি – যে জায়গাটা তাদের ব্যবসার জন্য দেওয়া হচ্ছে, সেটাকে কী করে ধর্মীয় স্থান বানানো হচ্ছে?”, জানান শিশির চতুর্বেদী।

এই হিন্দুত্ববাদী নেতারা লুলু মল বয়কটেরও ডাক দিয়েছেন।

মলে নামাজ : কী প্রতিক্রিয়া?

লুলু মলে বেড়াতে আসা এক মুসলিম দম্পতিও বিবিসি হিন্দিকে বলছিলেন, তারা মলের ভেতরে এসে এভাবে নামাজ পড়া সমর্থন করেন না।

লখনৌর বাসিন্দা আশরাফ বেইগের কথায়, “এটা তো অন্যায় কথা। নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ আছে, পড়তে হলে ঠিক সময়ে সেখানে চলে যাও।”

“আর মল হল ঘুরে বেড়ানোর জায়গা, এখানে কেন নামাজ পড়তে হবে?”
Skip Twitter post, 2

End of Twitter post, 2

তার স্ত্রী রুখসানা বেগমও যোগ করেন, “নামাজ পড়তে হলে নিজের বাড়িতেই থাকুন বা মসজিদে যান – দয়া করে মলে বেড়াতে এসে নামাজ পড়তে যাবেন না।”

লখনৌ পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই ভিডিওর নামাজিদের বিরুদ্ধে ১৫৩এ, ২৯৫এ ও ৩৪১ ধারায় যথাক্রমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো, ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা এবং অন্যায়ভাবে বাধা দেওয়ার জন্য শাস্তির চার্জ এনেছে।

ট্রাক চাপায় গর্ভবতী মায়ের প্রাণ গেলেও যেভাবে জন্ম হল শিশুটির

নড়াইলে ‘ধর্মীয় অবমাননার’ পোস্ট দেয়ার অভিযোগে তরুণ গ্রেপ্তার

মলের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করারও চেষ্টা চলছে।
‘নামাজ বা প্রার্থনা নিষিদ্ধ’

এদিকে লুলু মল কর্তৃপক্ষ এই নামাজ বিতর্ক থেকে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টায় জানিয়েছে, তাদের কোনও কর্মী এই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন না।

সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার সমীর ভার্মা সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছেন, “আমরা সব ধর্মেরই মর্যাদা দিই – কিন্তু মলের ভেতর কোনও ধরনের সংগঠিত ধর্মীয় কর্মকান্ড বা প্রার্থনার অনুমতি দিই না।”
কেরালার এর্নাকুলামে লুলু গ্রুপের শপিং মলের অভ্যন্তর

সব ফ্লোর স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মীদেরও এদিকে কড়া নজর রাখতে ট্রেনিং দেওয়া হয় বলেও তিনি জানান।

“আমাদের লক্ষ্য একটাই – লখনৌর লুলু মলকে আমরা একটি আন্তর্জাতিক মানের শপিং ডেস্টিনেশন বানাতে চাই”, বলেন মি ভার্মা।

ওই মলে হিন্দুদের সব ধরনের পূজা সামগ্রীও যে ডিসকাউন্টেড দামে পাওয়া যায়, কর্তৃপক্ষ স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলোকে ডেকে সেটাও দেখানোর চেষ্টা করছেন, যা থেকে বোঝা যায় নামাজ ইস্যু তাদের কতটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।

তবে লখনৌর সাংবাদিক হেমন্ত মৈথিল বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ৮০০ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক শিল্পগোষ্ঠী লুলুকেও যেভাবে এই বিতর্কে জড়ানো হল – তা রাজ্যের শিল্প পরিবেশের জন্যও দুর্ভাগ্যজনক।

“এটি মোটেও কোনও ইতিবাচক সংকেত দেবে না এবং রাজ্যে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে আদিত্যনাথের চেষ্টাকেও সমস্যায় ফেলবে”, বলছিলেন মি মৈথিল।

আরো পড়ুন ...

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০