বুধবার, ৭ মে ২০২৫
রাজশাহী জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রতিবাদে ঐ ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম জনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সোমবার (৬ জুন) বিকালে নগরীর সীমান্ত নোঙরে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উঠে আসে মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের সুবিধাবঞ্চিত করা , বেতন ভাতা না দেয়া, আয়ের টাকা কোষাগারে জমা না হওয়াসহ অনিয়ম ও দূর্নীতির কথা।
এসময় জহুরুল ইসলাম জনি জানান, আমি রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ ও রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির দপ্তর সম্পাদক। মটর শ্রমিক ইউনিয়নে কোষাধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকে আমাকে দিয়ে ব্যাংকের চেক স্বাক্ষর আর ভাউচার স্বাক্ষর করিয়ে নেন তাঁরা। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত হিসেব আছে। যেখানে আয় অনেক হলেও শ্রমিকদের স্বার্থ দেখা হয়না। আমি কোষাধ্যক্ষ হয়ে নিরবে পাপের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছি। হাজার হাজার শ্রমিকদের টাকা আত্মসাৎ করে জীবন ও জীবিকা নিয়ে খেলায় মেতেছে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
মটর শ্রমিক ইউনিয়নের আয় হলেও জমার খাতায় কারচুপি। মটর শ্রমিক ইউনিয়নের জমি বিক্রি করেছে ১৯ কাঠা। শ্রমিকদের বলেছে ১৬ কাঠা বিক্রি করা হয়েছে। সেই টাকার কোন হদিস নাই। গাড়ির চেন বিক্রি করা হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার। মটর শ্রমিক ইউনিয়নের বাঘা শাখা বিক্রয় করা হয়েছে। প্রতিদিন রাজশাহীর মিনি বাস থেকে আঞ্চলিক কমিটির নামে ১৯০ থেকে ২০০ গাড়ি প্রতি ২০ টাকা নেয়া হয়।
ঢাকার কোচ ভিআইপি থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা তোলা হলেও জমার খাতায় নাই। ঢাকা লোকাল গাড়ি থেকে ২৪০ টাকা করে তো তোলা হয়। কিন্তু জমা হয় মাত্র ১০০ টাকা। বর্তমানে ৮ নভেম্বর ২০২১ সাল থেকে ৩১০ টাকা করে তোলা হচ্ছে। জমা হচ্ছে ১০০ টাকা করে। পঙ্গু অসহায় শ্রমিকদের নামে ৩০ টাকা করে তোলা হয় কিন্তু খাতায় জমা হয় না। বগুড়া ও রংপুর বাহির জেলার গাড়ি থেকে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে তোলা হয়।
কিন্তু হিসেবের খাতায় জমা হয় না। ১০১ জন শ্রমিকের নামে ৩০ টাকা তোলা হয়। কিন্তু জমার খাতায় ২০ টাকা করে জমা হয়। তাহলে ১০ টাকা করে কোথায় যায়? মাসিক চাঁদা ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত উঠানো হলেও ১০ লক্ষ টাকাও জমা দেখাতে পারেনি। কিন্তু ২০১৭ সালের নির্বাচনী তফশীল অনুযায়ী ৩ হাজার ৪২০ জন শ্রমিক লাল কার্ডধারী, আরও সাদা কার্ডধারী শ্রমিক তো আছেই। তাদের কাছ থেকে মাসে ৩০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। যার মূল্য দাড়ায় প্রতিবছরে ১২ লক্ষ ৩১ হাজার ২০০ টাকা।
প্রতিদিন রাজশাহী মটর শ্রমিক ইউনিয়নের হাজার হাজার টাকা আয় আসে কেরানী পারভেজের হাতে। তা থেকে চা বিল ৬ হাজার টাকা খরচে চলে যায়। চিকিৎসা, সাহায্য ও অন্যান্য খরচ দেখিয়ে থাকে মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন। বাকি টাকা গুলোর কথা সাধারণ সম্পাদককে বলতে গেলে। সাধারণ সম্পাদককে বলতে বলতে বলে। তাকে বলতে গেলে কেরানী কে নিয়ে বসতে হবে জানায়। কিন্তু কোন সুরাহা মেলে না।
দিনের পর দিন, মাসের মাস, বছরের বছর পার করে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটা স্টাফ কর্মচারীদের ৯ মাসের বেতন ভাতা বাকি । আনুমানিক ২০০-২৫০ জন শ্রমিকের কণ্যাদায় বাকি, ৫০-৭০ জনের মৃত্যুর এককালীন টাকা বাকি, ৩০-৪০ জনের শিক্ষা ভাতা বাকি। এর মধ্যে আমাদের গরিব দুঃখী গণমেহনতী শ্রমিকের শ্রমিক দরদী নেতা মাহাতার হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি আমার নিজের অর্থ শ্রমিকদেরকে দিয়ে থাকি।
কিন্তু দুঃখের বিষয় শ্রমিকদের দেওয়া হয় না। প্রতিদিনের হাজার হাজার টাকা, প্রতি মাসের লক্ষ লক্ষ টাকা এবং বছরের কোটি টাকা গুলো কোথায় যাচ্ছে ? এসব প্রশ্ন করতে গেলে কখনো কখনো আমার কক্ষে তালা দিয়ে দেয় । হুমকির সম্মুখীনও হতে হয় আমাকে।
সব শেষে তার পরিবার ও নিজের জীবনের কোন নিরাপত্তা চেয়ে জানান, সকল শ্রমিক ভাইদের সহযোগীতা আমার একান্ত প্রয়োজন। সকল অসহায় শ্রমিক ও পরিবার গুলোকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী ও দেশরত্ন শেখ হাসিনা, ও নগর পিতা, মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং আমাদের ইউনিয়নের প্রধান উপদেষ্টাকে সুষ্ঠু তদন্ত করে এই অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে হতদরিদ্র শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।