বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
ঠাকুরগাঁও থেকে হাসনাত রুমন :
সড়কের এক পাশে শুকানো হচ্ছে ধান,অপরপাশে শুকনো হচ্ছে খড়। ব্যস্থতম এই সড়কের উপরেই ধান ও খড় শুকানোর কাজ করে কৃষকেরা। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। দেখে যেন মনে হয় সড়কটিকেই চালাত হিসেবে ব্যবহার করছেন তারা। বলছিলাম ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী মহাসড়কের কথা।
শনিবার দুপুরে সেই উপজেলায় যাবার পথে এমনি চিত্র চোখে পড়ে। আর এই সড়কের মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন যানবাহন গুলো। যে কোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার চিন্তায় চিন্তিত চালকেরা। একদিকে যেমন যানবাহন রয়েছে ঝুঁকিতে অপরদিকে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তায় থাকেন কৃষকেরা। তবে কোন উপায় না পেয়েই এই সড়কে ধান ও খড় শুকানোর কাজ করছেন তারা।
সারেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,জমি থেকে ধান কেটে রাখা হচ্ছে সড়কের উপরেই। পরে মাড়াই শেষে সড়কের এক প্রান্তে ধান আর অপরপ্রান্তে শুকানো হচ্ছে খড়। কেউবা সড়কের উপরেই বোঝাই করে রেখেছেন খড়গুলো। এর ফলে সড়কে ঝুঁকিতে রয়েছে যানবাহন চলাচল। শুধু পুরুষেরা নয় পাশাপাশি নারীরা সড়কে করছেন এই কাজটি। একে একে সারিবন্ধ হয়ে সড়কের উপরেই এই কাজ করে যাচ্ছেন।
যানা যায়,সড়কের ধারে ধান শুনাকো ও খড় বোঝাই করে রাখার কারনে ২০২০ সালের ২৩ জুন মঙ্গলবার রাতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের কালমেঘ কাদোশুকা নামক এলাকার ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী সড়কে ট্রাক ও থ্রি হুইলারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে তিনজন নিহত হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজন নিহত হয়।
সড়কের ধারে ধান শুকাচ্ছেন ওমর ফারুক নামের এক কৃষক। তিনি বলেন,বাসার আগিনায় ধান শুকানোর মতো কোন ব্যবস্থা নেই। আর রোদের তেমন তাপমাত্র বাসার পাশে কোথাও নেই। এই সড়কে ধানগুলো দিলে দ্রুত সময়ে শুকিয়ে যায়। যার কারনে এখানে ধানগুলো শুকাতে দিয়েছি।
ওবায়দুল নামের আরেক কৃষক বলেন,সড়কের উপর ধান শুকানো যদিও অপরাধ কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। বাসায় তেমন আগিনা নেই যার কারনে এখানে আসতে হয়। যদিও এটি যানচলাচল সহ আমাদের নিজেদের জন্য ক্ষতিকর। এরপরেও আমাদের আসতে হয়। তবে আমরা চেষ্টা করি যাতে কারো কোন ক্ষতি না হয়।
ঠাকুরগাঁও থেকে বালিয়াডাঙ্গীর দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছেন পথচারী কামরুল ইসলাম শুভো। তিনি বলেন,কাজের জন্য বালিয়াডাঙ্গী যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই সড়কের যা অবস্থা বলার মতো নয়। কি করবো হর্ণ দিলেও সাইড দিতে চায়না। একটি গাড়িকে ওভারটেক করে যে সামনে যাবো সেটিও সম্ভব নয়। কারন ধান কিনবা এই যে খড়গুলো আছে এটি সহজেই স্লিপ করে। এগুলো সড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
আরেক পথচারী সুমন আলী বলেন,এই সড়কের প্রতিবার ধানের মৌসুমে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। গতবার এই ধানের কারনে এই রাস্তায় অনেক বড় একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেখানে প্রায় ৩ থেকে ৪ জন মারা গিয়েছিলো। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কটি। এটাতে প্রশাসনের নজর দেয়া দরকার।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক।